Ajker Patrika

দেশে ৯ মাসে ১০ ভূমিকম্প কি বড় আঘাতের আভাস

সৌগত বসু, ঢাকা
দেশে ৯ মাসে ১০ ভূমিকম্প কি বড় আঘাতের আভাস

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে আজ সোমবার। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ায়। চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে দেশে। এর মধ্যে দুটির মাত্রা ছিল পাঁচের ওপরে। এ ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত ১০ বছরে তিনবার হয়ে থাকে। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ৫ মাত্রার ওপরের ভূমিকম্প দেশের জন্য আশঙ্কার বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। 

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে (টেকটনিক ফল্ট) দিনের বেলা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হলে রাজধানীতে কমপক্ষে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ ভবন ধসে পড়তে পারে। প্রাণ হারাতে পারে ২ লাখ মানুষ। অন্যদিকে সিলেটের ফল্ট লাইনে দিনের বেলা ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫ ভবন ধসে পড়তে পারে। ১৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এমন ছোট ছোট ভূমিকম্প মূলত বড় শক্তি নিয়ে ভূমিকম্প হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। আর বড় কোনো কিছু হলে আগে ছোট কিছু বিষয় ধরা পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তিনটি (টেকটনিক) প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এসব অংশে শক্তি জমা আছে, সেটা যদি একসঙ্গে বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

এ যাবতকালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে ১৮৯৭ সালে। ৮ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামে পরিচিত এ ভূমিকম্পে মারা যান প্রায় দেড় হাজার মানুষ। 

এদিকে চলতি বছর দুইবার পাঁচ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। যা সাধারণত ১০ বছরে তিনবার হয়ে থাকে। এই দুই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের ডাউকি ফল্ট। এই ফল্টে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। 

গত সেপ্টেম্বরেই দেশে তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর প্রথমটি অনুভূত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৪। এ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলা। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত–মিয়ানমার সীমান্ত। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রায় ২০টি ছোট ও মাঝারি মানের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আঘাত হানা ৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে আগস্টের ৯ দিনেই আঘাত হানে তিনটি। এগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকা। আর এর বাইরের বেশির ভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট সীমান্ত কেন্দ্রিক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১০ বছরের মধ্যে গত এক বছরেই দেশের ভেতরে ২৫টি আর দেশের আশেপাশে অঞ্চলে প্রায় ৫০টি ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের কম্পন বা ভয়াবহতার মাত্রা নির্ভর করে গভীরতার ওপরে। সিলেটে উৎপত্তিস্থল ছিল যে ভূমিকম্পের সেটির গভীরতা ছিল ১৬ কিলোমিটার আর টাঙ্গাইলেরটির ছিল ১০ কিলোমিটার।’

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ বলেন, ‘১৮৭০ থেকে শুরু করে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দেশে ৭ দশমিক ৫ ও ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয় ১৫০–২৫০ বছর। ফলে দেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে এই ভূমিকম্প ঠিক কোন সময়ে হবে, তা নিশ্চিত নয়। সাধারণত প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছর পর এমন ভূমিকম্প হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চার বা সাড়ে চার মাত্রার ভূমিকম্পে দেশে তেমন কিছু হবে না। এটা স্বল্পমাত্রার। তবে পাঁচ মাত্রার (মাঝারি) ওপরে গেলে সেটি দেশের জন্য চিন্তার বিষয়। এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের মূল যে জায়গা ধরা হয়, সেটি হচ্ছে উত্তর–পূর্ব অঞ্চল যা সিলেটের অন্তর্গত। এটি টেকটনিক প্লেটের কাছাকাছি। এ ছাড়া আসাম, শিলংয়ে প্লেট আছে। এসব জায়গায় ভূমিকম্প হলে সেটির প্রভাব দেশে ও ঢাকায় পড়বে। আর একটি ভূমিকম্প হয় প্লেট বাউন্ডারি ছাড়া ফল্ট লাইনে।’

গত ১৭ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইলের ফল্ট লাইনে ছিল উল্লেখ করে অধ্যাপক সুব্রত কুমার আরও বলেন, ‘এর মধ্যে একটা আছে মধুপুর ফল্ট লাইন। এ ছাড়া সিলেটের ডাউকি ফল্ট আছে। আবার প্রতিটা নদীর নিচেই ছোট ছোট ফল্ট লাইন আছে। এসব ফল্টে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫টি কম্পন হয়। আর ২০০১ থেকে যদি দেখা হয় তাহলে, বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্রের আশপাশে উৎপত্তিস্থল ছিল কয়েকটি ভূমিকম্পের।’

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্প আগে থেকে জানা বা অনুমান করার কোনো পদ্ধতি নেই। সাধারণত ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মাত্রা ও উৎপত্তি স্থান জানানো হয়। এর বাইরে রয়েছে আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ফলাফল।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভেতরে ও সীমান্তের কাছাকাছি ৫টি ফল্ট জোন (ভূ–চ্যুতি অঞ্চল) সক্রিয় আছে। এগুলো হলো— বগুড়া ফল্ট জোন, ত্রিপুরা ফল্ট জোন, ডাউকি ফল্ট জোন, আসাম ফল্ট জোন এবং শিলং মালভূমি ফল্ট জোন। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হতে পারে ডাউকি ফল্ট জোন।’

ভূতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্য।  

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মোট ভবন ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি। এর মধ্যে পাকা ভবন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৭টি। আর নির্মাণাধীন ২০ হাজার ৩২টি। 

নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর–অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘ভূমকম্প হবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথম ধাপ হচ্ছে, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও কাঠামোগত যেসব দিক নির্দেশনা আছে—তা মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘দেশে মাত্র ৩ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। নজরদারির অভাব ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ঢাকায় দিন দিন ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।’

সম্প্রতি তুরস্ক, সিরিয়া, আফগানিস্থানের ভূমিকম্পের মাত্রা ও প্রাণহানি দেশের মানুষের মধ্যে এক ভীতি তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকার এখন জনসচেতনতার চেয়ে অবকাঠামোগত বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সম্প্রতি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘তিনটি বিষয় মাথায় রেখে আগানো হচ্ছে। এক, পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলা হবে। মালিকদের সহজ শর্তে বা বিনা সুদে ঋণ দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। দুই, যেগুলো ভবন আছে তা পরীক্ষা করে রেট্রোফিটিং করা হবে। তিন, নতুন ভবন বিধিমালা মেনে করতে হবে। মন্ত্রণালয় এখন জাপানের মতো ভূমিকম্প সহনশীল দেশ বানাতে জাইকার সঙ্গে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর, দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সোমবার সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৫২। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটেও বায়ুমান একই ছিল।

বায়ুদূষণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আজ ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। গতকালও একই অবস্থানে ছিল এই রাজধানী শহরটি।

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি। শহরটির বায়ুমান আজ ৩০৩, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের মুম্বাই, উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও ভারতের কলকাতা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৯৭, ১৭৭, ১৫৮ ও ১৫৬।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, গতিপথ কোন দিকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ১৪
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ,
গতিপথ কোন দিকে

বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে চলছে এখন হেমন্তকাল। কিন্তু আবহাওয়ার আচরণ অনেকটাই গ্রীষ্মকালের মতো। কয়েক দিন ধরে সকালে সূর্যের তাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা গড়িয়ে দুপুর থেকে বিকেলের আগপর্যন্ত এর তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি শক্তিশালী হয়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে।

নিম্নচাপ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ২১ অক্টোবর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, মধ্য অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কমে গেছে। লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের আমেজ পড়বে সারা দেশে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ সোমবার সকাল ৭টার পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল রোববার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫, আর সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টাঙ্গাইলে ৩৫ দশমিক ৭ সেলসিয়াস। সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

কার্তিক মাসে এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিনা জানতে চাইলে আজ সোমবার সকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যে ধরনের গরম পড়ছে সেটি বৃষ্টি কমে যাওয়ার জন্য হয়েছে। সাধারণত অক্টোবর মাসের এই সময় মৌসুমি বায়ু বিদায়ের পর বৃষ্টি কম হয়। তখন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।

লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগে সাগরে বা উপকূলীয় এলাকায় অনেক সময় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে যে গরম পড়েছে, এর সঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়া না-হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপাতত মনে হচ্ছে কালকের (২১ অক্টোবর) মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি পরে নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যেতে পারে। তবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার আগপর্যন্ত এর গতিপথ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। আর নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলে দেশের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে শীতের আমেজ পড়বে।

হাফিজুর রহমান আরও বলেন, সূর্যের দক্ষিণায়ন (দক্ষিণ দিকে হেলে পড়া) এখনো পুরোপুরি হয়নি। এই দক্ষিণায়ন হলে দিনের ব্যাপ্তি আরও কমবে, তাপমাত্রা তখন কমে শীতও বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর, দূষণে শীর্ষে লাহোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ দশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তিন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের রাজধানী শহর ঢাকা, পাকিস্তান ও দিল্লি। আজ রোববারও ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে আছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ রোববার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৫২। যা গতকাল শনিবার ৯টা ১৫ মিনিটে ছিল ১৭২। সে অনুযায়ী বলা যায় আজ দূষণ কিছুটা কমতির দিকে।

বায়ুদূষণের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আজ ঢাকা রয়েছে ৭ম স্থানে। গতকাল ছিল ৪র্থ স্থানে।

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির বায়ুমান আজ ৩১১, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের করাচি ও ভিয়েতনামের হ্যানয়। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৪১, ১৯০, ১৭৭ ও ১৫৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা ও আশপাশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৮
ঢাকা ও আশপাশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে

কার্তিক মাস চলে এলেও বেশ ভ্যাপসা গরম পড়েছে সারা দেশে। গতকাল শনিবার সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজধানী ঢাকায় যা ছিল ৩৫ দশমিক ৭। আজ রোববারও আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তন হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশের আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত