Ajker Patrika

দুবাইয়ের বন্যার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেখা দিয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যার সঙ্গে কৃত্রিম বৃষ্টির সংযোগ নিয়ে চলছে জল্পনাকল্পনা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, দুই বছরের বৃষ্টি একদিনেই হয়েছে দুবাইতে। এমন বন্যার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ভূমিকাকে তাই খুব বেশি বড় করে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে দুবাইতে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে অবস্থিত শহর দুবাই সাধারণত খুব শুষ্ক থাকে। বছরে শহরটিতে গড়ে ১০০ মিলিমিটার (৩ দশমিক ইঞ্চি) এর চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। তবে মাঝে মাঝে চরম বৃষ্টিপাতও ঘটে থাকে এখানে। দুবাই থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দূরে অবস্থিত আল-আইন শহরে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

দুবাই আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১০টা থেকে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত দুবাইয়ে দেড় ফুট অর্থাৎ, ৬ দশমিক ২৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের মতে, দুবাইতে প্রতি বছর গড়ে ৩ দশমিক ১২ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহরটিতে দুই বছরের বৃষ্টি হয়েছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ধরন নিয়ে গবেষণা করা রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ অধ্যাপক মার্টেন অ্যাম্বাউম বলেন, পৃথিবীর এই অংশটি দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত ছাড়াই থাকে এবং তারপর অনিয়মিত, ভারী বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। তবুও এই বৃষ্টিপাতের ঘটনা খুবই বিরল।

জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা 
জলবায়ু পরিবর্তন দুবাইয়ের বন্যায় কতটা ভূমিকা পালন করেছে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করা এখনো সম্ভব হয়নি। এর জন্য প্রাকৃতিক এবং মানবিক কারণগুলোর একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, যাতে লেগে যেতে পারে কয়েক মাস। তবে এই রেকর্ড বৃষ্টিপাত জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সহজ করে বললে—উষ্ণ বাতাস বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে বাতাস প্রায় ৭ শতাংশ অতিরিক্ত আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে, যা বৃষ্টির তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা উষ্ণ জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর্দ্রতা বাড়লে ঝড়ের তীব্রতাও বাড়ে। সে সঙ্গে, ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হয়।’

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণতা অব্যাহত থাকায় এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশির ভাগ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডরিক অটো বলেন, ‘মানুষ তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে থাকলে জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকবে। এতে বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকবে এবং বন্যায় মানুষ প্রাণ হারাবে।’

দুবাইয়ের বন্যায় ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টির ভূমিকা
বিদ্যমান মেঘগুলোকে আরও বেশি বৃষ্টি তৈরি করতে সাহায্য করার কৃত্রিম প্রক্রিয়াই ক্লাউড সিডিং।

বিমান ব্যবহার করে মেঘের মধ্যে ছোট কণা (যেমন সিলভার আয়োডাইড) নিক্ষেপ করার মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে। জলীয় বাষ্প তখন আরও সহজে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিতে পরিণত হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে কৌশলটি কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলের ঘাটতি মোকাবিলায় কৌশলটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

বন্যার পর সামাজিক প্ল্যাটফর্মে এই চরম আবহাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক ক্লাউড সিডিংকে দায়ী করা হয়।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য গত রোববার ও সোমবার বিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। এরপর মঙ্গলবারেই হয় বন্যা। তবে সেই দুদিন ক্লাউড সিডিং হয়েছিল কিনা তা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝড়ের ওপর ক্লাউড সিডিংয়ের সামান্য প্রভাব থাকতে পারে। তাই এই চরম আবহাওয়ার পেছনে ক্লাউড সিডিংকেই দায়ী করাটা বিভ্রান্তিকর।

ফ্রেডরিক ওটো বলেন, ‘দুবাইয়ে বৃষ্টি ঝরাতে যদি ক্লাউড সিডিং কৌশল প্রয়োগ করা হয়েও থাকে, তবুও আগে থেকেই মেঘ সৃষ্টির জন্য পানি বহনের উপযোগী পরিবেশ সেখানে ছিল।’

বাতাস, আর্দ্রতা এবং ধুলোর অবস্থা বৃষ্টির জন্য অপর্যাপ্ত হলে সেই অঞ্চলে ক্লাউড সিডিং করা যেতে পারে। গত সপ্তাহেই আবহাওয়াবিদেরা উপসাগর জুড়ে বন্যার উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

আবুধাবির খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং ভূ-পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডায়ানা ফ্রান্সিস বলেন, ‘যখন এ ধরনের তীব্র এবং বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া হয় তখন আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্লাউড সিডিংয়ের মতো ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া প্রয়োজন পড়ে না।’

বিবিসির আবহাওয়াবিদ ম্যাট টেলরও উল্লেখ করেছেন যে, ভয়াবহ আবহাওয়ার ঘটনার পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক বছরের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল বলে কম্পিউটার মডেলগুলো আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

তিনি বলেন, ‘শুধু ক্লাউড সিডিং থেকে যা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বিস্তৃত ফলাফল দেখেছি আমরা। বাহরাইন থেকে ওমান পর্যন্ত বিশাল এলাকায় মারাত্মক বন্যা দেখা দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত