Ajker Patrika

আগস্টে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অস্বাভাবিক বৃষ্টি ছিল, সেপ্টেম্বরেও বন্যার শঙ্কা

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭: ৩৫
আগস্টে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অস্বাভাবিক বৃষ্টি ছিল, সেপ্টেম্বরেও বন্যার শঙ্কা

আগস্টের মতো সেপ্টেম্বর মাসেও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে আগামী ১০ দিন দেশের বড় নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। আর আগামী তিন দিন আকস্মিক বন্যা সৃষ্টিকারী নদীগুলো স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগস্ট মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই–তিন দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন–পাঁচ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে। 

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদ–নদী নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য জানানো হয়েছে সেটি তাঁদের দেওয়া তথ্য। এটি সারা মাসের একটি সাধারণ পূর্বাভাস। এটি নির্দিষ্ট কোনো পূর্বাভাস নয়। সাধারণত এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই মাসেই দেখা গেছে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা থাকে। 

উদয় রায়হান বলেন, সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত তাঁরা বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। সাধারণত আগের বছরগুলোর সঙ্গে তথ্য–উপাত্ত তুলনা ও পর্যালোচনা করে এক মাসের পূর্বাভাস করা হয়ে থাকে। এই মাসে (সেপ্টেম্বর) স্বাভাবিক বৃষ্টি হবে। আর স্বাভাবিক বৃষ্টি মানে বন্যার একটি স্বাভাবিক ঝুঁকি থাকবে। এর আগে রেকর্ড আছে, এই সময়ে কিছু অঞ্চলে বন্যা হয়। তবে বড় বন্যা কম হয়। সেপ্টেম্বর মাসে এমন সম্ভাবনা আছে। এটা আবার এমনও না যে, বন্যা হবেই। 

তিনি বলেন, ‘তবে আগামী ১০ দিন দেশে বন্যার কোনো লক্ষণ নেই। তবে যেহেতু জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে বলা হয় তাতে সেপ্টেম্বর মাসে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটাই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিন প্রধান নদী অববাহিকা–ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা এসব নদীর পানির অবস্থা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আকস্মিক বন্যা সৃষ্টিকারী নদী তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, খোয়ায়, ধলা, ফেনী, মনু, মুহুরি এগুলো নদীর ক্ষেত্রে আমাদের বার্তা আলাদা। এখানে ১০ দিনের পূর্বাভাস খাটবে না। এসব নদীর ক্ষেত্রে ৩ দিনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়।’ 

উদয় বলেন, ‘আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রে টানা বৃষ্টি হলে এসব নদীতে পানি হুট করে বেড়ে যায়। তাতে আকস্মিক বা স্বল্পমেয়াদি বন্যা হয়। এর আগেও আমরা এটা দেখতে পেয়েছি। তবে আগামী তিন দিনে সম্ভাবনা নেই। এর পর থেকে নিয়মিত আপডেট করা হবে।’ 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আগস্টে অস্বাভাবিক বৃষ্টির তথ্য দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৫৫৪ মিলিমিটার ধরা হলেও বৃষ্টি হয়েছে ১ হাজার ১২ মিলিমিটার যা ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি স্বাভাবিক থেকে। এ ছাড়া খুলনাতে স্বাভাবিক থেকে ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ, বরিশালে স্বাভাবিক থেকে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ১ থেকে ৪ ও ৮ থেকে ৬ আগস্ট উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দক্ষিণ পশ্চিম বায়ু প্রবল অবস্থায় থাকার ফলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয় এবং বায়ুর চাপের আধিক্য বিরাজ করে। ১৬ আগস্ট উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। উত্তর-পশ্চিম ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় দুর্বল হয়ে একই এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়, ২০ আগস্ট এটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে এবং ২১ আগস্ট ২০২৪ এটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এ প্রভাবে ১৬ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয় এবং বায়ুর চাপের আধিক্য বিরাজ করে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। এ মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ২৭৬ মিলিমিটার নোয়াখালীর মাইজদী কোর্ট ১ আগস্ট রেকর্ড করা হয়। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত থাকবে। এ সময় দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা থাকে। কারণ, সেপ্টেম্বর মাসে মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর এই বৃষ্টিপাত যদি উজানেও হয় আবার আমাদের দেশেও হয় তবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।’ 

তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ৩ তারিখ থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একটু বাড়বে। ৩ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত এমন থাকবে। রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এরপর আবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাবে। কয়েকদিন পর আবার বাড়বে। মৌসুমি বায়ু এসময় কখনো সক্রিয় থাকে আবার কখনো থাকে না। এটা জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত