Ajker Patrika

বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালকের আখ্যান

মেহজাদ গালিব
Thumbnail image

বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তির প্রায় ১৩ বছর পরে ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ নামে চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয়েছিল। এটিই এদেশের প্রথম নারী চিত্রনির্মাতা নির্মিত চলচ্চিত্র। সেই নারী হলেন রেবেকা। তিনি বেঁচে নেই। ২০০৬ সালে মারা যান এই চিত্রনির্মাতা ও অভিনেত্রী।

রেবেকার প্রকৃত নাম মনজন আরা বেগম। ১৯৭০ সালে ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ পরিচালনা করলেন তিনি। নিজেকে কখনো শুধু নারী হিসেবে ভাবেননি। মানুষ হিসেবেই ভেবেছেন। মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে করেছেন রাজনীতি। তিনি আমাদের গর্ব। সত্তরের দশকে নারীর চলার পথ একবারেই মসৃণ ছিল না। তখন যে নারীরা চলচ্চিত্রে আসতেন, তাঁদের ভিন্ন চোখে দেখা হতো। রেবেকা সেই সময় নির্মাণ করলেন একটি নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র।

নারী পরিচালক হিসেবে আমার কাছে রেবেকা একটি অনুপ্রেরণার নাম। আর তাই আমার তথ্যচিত্রের বিষয় হিসেবে আমি রেবেকাকেই বেছে নিলাম। কারণ আমি মনে করি নারী নির্মাতাদের পথিকৃৎ হিসেবে তাঁর জীবনসংগ্রাম, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সেই সময় চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। আমার প্রামাণ্যচিত্রটির নাম ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত: একজন বকুলের আখ্যান’। এই নামটি বেছে নেওয়ার কারণ রেবেকা পরিচালিত চলচ্চিত্রটিকে সম্মান জানানো। অন্যদিকে বকুল ছিল রেবেকার পারিবারিক ডাক নাম। এই দুটিকে সমন্বয় করে নামটি রেখেছি।

‘বিন্দু থেকে বৃত্ত: একজন বকুলের আখ্যান’ তথ্যচিত্রটি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অনুদানে নির্মিত হচ্ছে। সিনেমাটি প্রায় নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর মাস দুয়েকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে আশা করছি। তথ্যচিত্রটিতে আমি রেবেকার ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর চলচ্চিত্র জীবন এবং শিল্পসত্তাকে তুলে ধরর চেষ্টা করেছি।

রেবেকার জীবন সেই সময়কার খুব সাধারণ একটা গ্রামের জমিদার বাড়ির মেয়ের তুলনায় একটু ভিন্ন ছিল। গান্ধীর আদর্শে, স্বদেশি আন্দোলনের আবহে বড় হয়ে নিজের দেশ, নিজের সত্তা সম্পর্কে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে কীভাবে নিজেকে গড়ে তুললেন, দেশের প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে কীভাবে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং তারপর থেকে তাঁর জীবনের রাজনৈতিক ভাবনা, তাঁর অভিনয় জীবন, তাঁর পারিবারিক জীবন, সবকিছুই তুলে ধরা হবে প্রামাণ্যচিত্রটিতে।

মেহজাদ গালিবপুরোটাই স্ট্রাগল। রেবেকা বেঁচে নেই। তাঁর সিনেমাটি নেই। ১৯৭১ সালে পুড়ে যায় ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত শুধু সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র অভিনেত্রী আতিয়া বেঁচে আছেন। আর রয়েছেন চলচ্চিত্র সম্পাদক ফজলে হক। তিনি ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’র টিম মেম্বার ছিলেন। দুজনেই অসুস্থ। তারপরও তাঁরা ইন্টারভিউ দিয়েছেন। পুরো চলচ্চিত্রটা আমি যেন দেখতে পারছি। এটা আমার জন্য বিরাট পাওয়া। তা ছাড়া ছবির গানটি গেয়ে শুনিয়েছেন রেবেকার মেয়ে মোনালিসা তুলি ও অভিনেত্রী আতিয়া। গানটি তখন রেকর্ড করা হয়নি, আমি আবার রি-রেকর্ডিং করব। গেয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। আতিয়া প্রায় চল্লিশ বছর পর ক্যামেরার সামনে এসেছেন।

এ ছাড়া বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক হারুনর রশীদ এবং চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াতের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। এগুলো ইতিহাস হয়ে থাকবে। মনে হচ্ছে রেবেকাকেই যেন পুনর্নির্মাণ করছি আমি।

তাঁর পারিবারিক জীবন নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর ছেলে, মেয়ে এবং তাঁর ভাইয়েরা। তাঁর বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর হাতের করা ভাস্কর্যগুলো আমি নান্দনিকভাবে ধারণ করার চেষ্টা করেছি।

আজ নারী দিবসে বলতে চাই প্রতিবন্ধকতা তো সব কাজেই আছে। রেবেকা ’৭০ সালে সেই প্রতিবন্ধকতা পার করেছেন। আমি তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। তরুণ মেয়ে নির্মার্তাদের প্রতি আমার এটাই বলার থকবে, চলচ্চিত্র এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, কাজেই মেয়েরা চাইলেই এখন পরিচালনা ছাড়াও ক্যামেরার পেছনে আরও অনেক কাজ করতে পারেন।

অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত