Ajker Patrika

বাংলা সিনেমার প্রযোজক নায়িকারা

বিনোদন প্রতিবেদক
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ১৬
Thumbnail image

জয়া আহসান

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী জয়া আহসানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘সি তে সিনেমা’। সে প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে প্রযোজনা করেছেন ‘দেবী’। সিনেমা দুটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে। লকডাউনের মধ্যে গত বছর নির্মাণ করেছেন নাম ঠিক না হওয়া দ্বিতীয় সিনেমার কাজ। পরিচালনা করেছেন পিপলু আর খান। খুব তাড়াতাড়ি শুরু করবেন তাঁর প্রযোজনায় তৃতীয় সিনেমা ‘ফুড়ুৎ’।

জয়া আহসান প্রযোজিত প্রথম ভারতীয় সিনেমার নাম ‘ওসিডি’। বানাবেন সৌকর্য ঘোষাল। তিনি জয়াকে নিয়ে এর আগে ‘ভূতপুরী’ বানিয়েছেন। প্রযোজনা নিয়ে জয়া বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট জার্নির পর প্রযোজনায় আসা যেতেই পারে। কেননা, একটা সময়ে এখানকার সবকিছু হাতের তালুর রেখার মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি কাজটা তারা ভালোভাবে করে, ফাঁক-ফোকরগুলো পূরণ করতে পারে, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব। পাশাপাশি একটা ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিও থাকে, যাতে টাকাটা ঘরে আসে। তবে আফসোস হয় যে, এত সম্ভাবনা থাকার পরও কেন ইন্ডাস্ট্রি একটা সিস্টেমের মধ্যে আসছে না!’

নুসরাত ইমরোজ তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকেনুসরাত ইমরোজ তিশা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রথমবার নির্মাণ করছেন ওয়েব সিরিজ। কনটেন্টটির নাম, অভিনয়শিল্পী বা কোন প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে–তার কোনোকিছুই প্রকাশ করেননি পরিচালক। জানা গেল, ওয়েব সিরিজটির প্রযোজক জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও ফারুকীর স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, ‘আ বার্নিং কোয়েশ্চেন’ সিনেমা দুটির পাশাপাশি ওয়েব সিরিজটিরও প্রযোজক হিসেবে আছেন তিনি।

প্রযোজক হিসেবে নিয়মিত কনটেন্ট নির্মাণ করতে চাই। নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান করারও ইচ্ছে আছে। আমি পুরোদস্তুর অভিনেত্রী হলেও এই পরিচয়টা আশা করি উপভোগ করব। প্রযোজক হলে একটা কাজের শুরু থেকে থাকা যায়। তাতে দায়বদ্ধতাও বাড়ে।

নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেত্রী


মাহিয়া মাহি। ছবি: ফেসবুক থেকেমাহিয়া মাহি

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আড়াই বছরের মাথায় প্রযোজনার ঘোষণা দেন হালের আলোচিত নায়িকা মাহিয়া মাহি। তরুণ এই নায়িকা জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ছবির পরিচালক হবেন জাকির হোসেন রাজু। পাঁচ বছর চলে গেলেও ‘স্করপিয়ন’ নামের সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আজও কোনো ছবি নির্মিত হয়নি।
অনেকেই বিষয়টিকে মাহির ‘ফাঁকা আওয়াজ’ বলে মনে করেছিলেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, মাহির অভিষেক হওয়া প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যদি বিরোধে না জড়াতেন, তাহলে হয়তো ঠিক সময়ে শুটিংয়ে গড়াত মাহির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সিনেমা। নিজের প্রযোজনায় সিনেমা বানাতে না পারলেও একটি ওয়েব কনটেন্ট প্রযোজনায় করেছেন মাহি। কনটেনন্টটির নাম ‘এইডা কপাল’। ত্রিশ মিনিট দৈর্ঘে্যর কনটেন্টটি বানিয়েছেন রায়হান রাফি। সম্প্রতি এর টিজার প্রকাশ হয়েছে অনলাইনে। গত বছর হয়েছে শুটিং। জানা যায়, ‘আঁধার থেকে আঁধারে’ নামের একটি সিনেমা খুব শিগগির শুরু করতে পারেন তিনি।

পরীমনি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকেপরীমনি

‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে পরীমনির। তার আগে টেলিভিশন নাটকে টুকটাক অভিনয় করতেন। ক্যারিয়ারের তিন বছরের মাথায় বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ‘সোনার তরী’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা দেন পরীমনি। প্রথম সিনেমা হওয়ার কথা ছিল ‘ক্ষত’। শামীম আহমেদ পরিচালিত ছবিতে নায়ক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন জায়েদ খানও। তবে সেসব এখন অতীত।

আমার মনে হয়েছে আরও কিছুটা সময় নেওয়া দরকার। প্রযোজক একটা সিনেমার প্রাণ। শুধু টাকা ঢাললেই প্রযোজক হওয়া যায় না। আমি যে সিনেমা বানাব সেটা পুরোপুরি তদারকি করতে চাই। সেই সময়টা এখন দিতে পারব না বলেই এখনি আগ্রহী হচ্ছি না।

পরীমনি, ঢালিউড নায়িকা

এ ছাড়াও

‘মুসাফির ২’ নামে নতুন সিনেমা প্রযোজনা করছেন চিত্রনায়িকা মারজান জেনিফার। চিত্রনায়িকা ববির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ববস্টার’। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম সিনেমা বানানো হয় ‘বিজলী’ নামে। ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এটি। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই।

প্রযোজনার অতীত ইতিহাস

১৯৭৬ সালে প্রথম প্রযোজনায় আসেন নায়িকা সুজাতা। ‘অর্পণ’ সিনেমা প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন। নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত সুজাতা প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘প্রতিনিধি’। ‘সুজাতা প্রোডাকশনস’ ছাড়াও সুজাতা-আজিম মিলে ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’ নামের আরও দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনটি প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘চেনা–অচেনা’ , ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং–বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’ ইত্যাদি।

প্রথম ছবি মুক্তির পাঁচ বছরের মাথায় প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কবরী। শুরুতে শ্রীমতী প্রোডাকশন হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। পরে প্রথম সিনেমা ‘শীত-বসন্ত’ সেন্সরে জমা দেওয়ার পর আপত্তির মুখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ফেলতে বাধ্য হন। সুভাষ দত্তের পরিচালনায় পরের ছবি ‘বলাকা মন’ যখন মুক্তি পায়, তখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে যায় কবরী প্রোডাকশন। কবরীর প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া শেষ ছবি ‘গুন্ডা’।

ববিতা মুভিজের ব্যানারে তৈরি প্রথম ছবি ‘ফুলশয্যা’। এই ছবির পরিচালক ছিলেন সুভাষ দত্ত। এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ছবির পরিচালক আখতারুজ্জামান। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ কয়েকটি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায়।

২২ বছর টানা অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নাম লেখান শাবানা। স্বামী ওয়াহিদ সাদিককে সঙ্গী করে গড়ে তোলেন এসএস প্রোডাকশন হাউস। নিজের প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘মাটির ঘর’ তাঁকে প্রযোজক হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। এরপর ২৫টির বেশি ছবি প্রযোজনা করেছেন শাবানা।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সময় অভিনয়ের পাশাপাশি আরও অনেক নায়িকা প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এঁদের মধ্যে সুমিতা দেবী, মালতি দে, সুচন্দা, মাহবুবা রহমান, সুলতানা জামান, নীলুফার খায়ের, জোহরা কাজী, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ উল্লেখযোগ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত