Ajker Patrika

পাঁচ কন্যা, এক ব্যান্ড

তামান্না-ই-জাহান
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১২: ২৮
Thumbnail image

‘মেয়ে আমি সমানে সমান, আমি আমার সুরক্ষা...’—এই গানটি যে পাঁচজন গেয়েছেন, তাঁরা সবাই নারী। 

তাঁরা পাঁচ আদিবাসী নারী। তাঁদের গানের দলের নাম ‘এফ মাইনর’। দেশে ‘এফ মাইনর’ প্রথম গানের দল, যা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের নিয়ে গঠিত। 

গত ৬ মার্চ বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে বসে অনুশীলন করছিলেন দলটির সদস্যরা। অনুশীলনের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। 

গানের দলটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজন গারো, একজন মারমা, জানালেন দলটির লিড ভোকালিস্ট পিংকি চিরান। পিংকির পাশাপাশি দলে সাইড ভোকালিস্ট হিসেবে আছেন নাদিয়া রিছিল। নাদিয়া একই সঙ্গে গিটার ও ইউকুলেলে বাজান। দলে লিড গিটারিস্ট হিসেবে আছেন গ্লোরিয়া মান্দা। কিবোর্ডে আছেন একিউ মারমা। কাহনে আছেন দিবা চিছাম। এই পাঁচ শিল্পী বাংলা গান করেন, আবার নিজস্ব নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী গানও তাঁরা পরিবেশন করেন। 

শিল্পীদের সঙ্গে কথায় কথায় জানা যায়, হারিয়ে যেতে বসা আদিবাসী গানগুলো সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে তাঁদের ব্যান্ড দল এফ মাইনর। সংগ্রহের পাশাপাশি পাঁচ শিল্পী চান, নানান অনুষ্ঠান-আয়োজনে এই গানগুলো পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে তাঁদের শিল্প-সংস্কৃতি তুলে ধরতে। নতুন প্রজন্মকে এই গানের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে। 

‘এফ মাইনর’ ব্যান্ড দলের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই দলটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দলটির শিল্পীদের পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করছে। তাঁরা দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন। ফলে বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশনে এখন দলটির সদস্যদের ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। 

পাঁচ নারীর ব্যান্ডদল এফ মাইনরের সদস্যরা

লিড ভোকালিস্ট পিংকি চিরান জানালেন, প্রথমে তিন কন্যাকে নিয়ে এই দলের যাত্রা শুরু হয়। তিন কন্যার সঙ্গে পরে আরও দুই কন্যা যুক্ত হয়ে ‘এফ মাইনর’ ব্যান্ড হয়ে ওঠে পাঁচ কন্যার দল। দলের শিল্পীরা নিজেরা গান লেখেন, সুরও করেন। 

গান করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন কি না, জানতে চাইলে পিংকি বলেন, সব নারীকেই নানা প্রতিবন্ধকতা পেরোতে হয়। আমাদের জন্য এই প্রতিবন্ধকতা আরেকটু বেশি। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে কোথাও কোনো অনুষ্ঠান থাকলে পুরুষ কাউকে সাথে নিতে হয়। তা ছাড়া শুধু নারীরা মিলে গান করায় অনেকে ভিন্ন চোখে দেখেন। কেউ কেউ গান করতে নিরুৎসাহিতও করেন। 

দলটির আরেক সদস্য এ কিউ মারমা বলেন, ‘অন্যরা তো আছেই, নিজ সম্প্রদায়েরও অনেকে আমাদের বাঁকা চোখে দেখেন। আমরা আমাদের মেধা-শ্রম দিয়ে গান করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, অনেকে আমাদের এই মেধা ও শ্রমকে বিবেচনায় না নিয়ে এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন যে, আমরা হয়তো মেয়ে হিসেবে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি।’ 

শুধু মেয়েদের নিয়েই যাঁরা ভবিষ্যতে ব্যান্ড দল গড়তে চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে একিউ বলেন, ‘যেকোনো ব্যান্ড দল দাঁড় করানো কঠিন। শুধু মেয়েদের নিয়ে ব্যান্ড দল গঠন করে তা চালানো আরও কঠিন। সে জন্য প্রয়োজন শ্রম। আর লেগে থাকার মানসিকতা। একটা কথা মনে রাখতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না।’ 

বিভিন্ন দিবস ঘিরে নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য ডাক পড়ে এফ মাইনরের। দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত