Ajker Patrika

আবৃত্তির পাঠশালা ‘শব্দকুঞ্জ’

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
আবৃত্তির পাঠশালা ‘শব্দকুঞ্জ’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আবৃত্তিচর্চা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে অবদান রেখে আসছে। সেই ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে আবৃত্তি সংগঠন ‘শব্দকুঞ্জ’। শব্দের কারুকাজ, চেতনার মুক্ত ভ্রমণ, প্রেম ও প্রতিবাদের অনুরণনে প্রতিদিনই জন্ম দিচ্ছে নতুন সব সৃষ্টির। বিদ্রোহী কবির মুক্ত আত্মা ও মানবিক বোধ ধারণ করে সংগঠনটি গড়ে তুলেছে কবিতা-আবৃত্তির এক প্রাণবন্ত ও নিবিড় পরিবার।

২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর সূচনা হওয়া শব্দকুঞ্জ অল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাচিক শিল্পচর্চার একটি সুপরিচিত কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মহামারির বিরতিও তাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি; বরং অনলাইনভিত্তিক আবৃত্তিচর্চা, ভার্চুয়াল কর্মশালা ও নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে তারা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে সৃজনশীল ধারাবাহিকতায়।

কেবল কবিতা পাঠ নয়; শব্দ, সুর, উচ্চারণ ও অনুভূতির সমন্বয়ে মানবিক শিল্পের সৌন্দর্য তুলে ধরার মুক্তমঞ্চ হিসেবেও শব্দকুঞ্জ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। নজরুলের প্রেম ও দ্রোহের দর্শনকে ধারণ করে তারা বাচিক শিল্পের শুদ্ধতা ও শৈলী রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক আরিফ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের প্রিন্সিপাল ডেমোনেস্ট্রেটর। তাঁর ভাষায়, ‘আবৃত্তি শুধু মুখস্থ কবিতা নয়; এটি একধরনের বিজ্ঞান, যেখানে প্রতিটি উচ্চারণে সততা জরুরি। শব্দকুঞ্জের শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমই ভবিষ্যতের বড় আবৃত্তিশিল্পী তৈরির ভিত্তি।’

শুরুর মুহূর্ত থেকে আবৃত্তিচর্চায় স্বকীয়তা গড়ে তুলেছে শব্দকুঞ্জ। নিয়মিত আয়োজন, বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত মঞ্চনাট্যধর্মী পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তারা ক্যাম্পাসে এনেছে নতুন সৃজনীশক্তি। তাদের নিয়মিত ও উল্লেখযোগ্য আয়োজন ‘বিজয়-এর শব্দকুঞ্জ’, ‘অমর কাব্য কথার শব্দকুঞ্জ’। এসব আয়োজনে সদস্যদের অনুশীলনের পাশাপাশি শ্রোতারাও নতুন করে আবিষ্কার করেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবিতা। বিশেষ দিবসগুলোতেও শব্দকুঞ্জের উপস্থিতি প্রশংসিত হয়। ২০২২ সালের নজরুল জয়ন্তীতে তাদের পরিবেশনা ক্যাম্পাসে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাদের পথচলা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই আটকে নেই, দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রেডিও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৩০। নতুন সদস্য হতে হলে দিতে হয় ‘বাচিক পরীক্ষা’—যেখানে কেবল কণ্ঠস্বর নয়, শব্দ উচ্চারণ, প্রক্ষেপণ, কবিতা উপলব্ধি ও আগ্রহ—সবই বিবেচনায় নেওয়া হয়।

সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রভাষক সিনথিয়া জাহান বিথুন বলেন, ‘শব্দকুঞ্জ আমার কাছে শুধু একটি সংগঠন নয়, এক পরিবার। এখান থেকে শেখা শৃঙ্খলা, সহযোগিতা ও শিল্পবোধ আজও পেশাগত জীবনে আমাকে পথ দেখায়।’

বর্তমান সভাপতি মো. সালাউদ্দিন (সৌখিন) বলেন, ‘আমাদের চর্চার মূল শক্তি হলো নিয়মিত অনুশীলন আর আন্তরিক ভালোবাসা। কোনো জোরজবরদস্তি নয়, কোনো বড় ঘোষণা নয়; দিনের পর দিন নিজেকে একটু একটু করে শাণিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এগোই। আমাদের স্বপ্ন, আবৃত্তির অনুরাগ আরও ছড়িয়ে পড়ুক, আরও মানুষের কাছে পৌঁছাক শব্দকুঞ্জ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ