Ajker Patrika

আলো ছড়াচ্ছে শশীভূষণ গ্রন্থাগার

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
সোহানুর রহমান ও তাঁর বন্ধুদের এই উদ্যোগ নতুন আলো ছড়াচ্ছে গ্রামের শিক্ষাক্ষেত্রে। ছবি: সংগৃহীত
সোহানুর রহমান ও তাঁর বন্ধুদের এই উদ্যোগ নতুন আলো ছড়াচ্ছে গ্রামের শিক্ষাক্ষেত্রে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানায় গড়ে তুলেছেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী পাঠাগার ‘শশীভূষণ গ্রন্থাগার’। শুধু স্থানীয় নয়, দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ এখানে বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন। সোহানুর রহমান ও তাঁর বন্ধুদের এই উদ্যোগ নতুন আলো ছড়াচ্ছে গ্রামের শিক্ষাক্ষেত্রে।

শুরু যেভাবে

২০২০ সালের কথা। করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ, আর শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল ফোন। গ্যাজেট আসক্তিতে পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন সোহান। অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল একটি পাঠাগার গড়ার। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগান। পাশে পান মিঠু, নাইম, সাইফুল, মিরাজ, অন্তিক, মামুন, মারুফসহ অনেককে। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে একে একে গড়ে তোলেন গ্রামীণ পরিবেশে এক আলোর কেন্দ্র।

গ্রন্থাগারের লক্ষ্য ও অবস্থান

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, উচ্চশিক্ষা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া, সচেতনতা তৈরি এবং শিক্ষার পরিবেশে গুণগত পরিবর্তন আনা—এগুলোই ছিল শুরুর লক্ষ্য। এলাকার নাম অনুসারে পাঠাগারের নাম দেন ‘শশীভূষণ গ্রন্থাগার’। এটি অবস্থিত বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের মূল ফটকের সামনে। মাত্র ৫০টি নিজস্ব বই দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে পাঠকসংখ্যা শতাধিক। অনেকে বই উপহারও দিয়েছেন। পাঠাগারে একসঙ্গে বসে বই পড়তে পারেন ২০ জন পাঠক। ফান্ড কালেকশন ও ব্যক্তিগত অর্থে পরিচালিত পাঠাগারে বই ও পরিচালনার ব্যয় অনেক সময় সোহানকেই বহন করতে হয়।

যত চ্যালেঞ্জ

শশীভূষণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার শুরুতে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘গ্রন্থাগারের প্রয়োজন কী?’ সময় লেগেছে তাঁদের বোঝাতে। তবে ধীরে ধীরে বদলেছে দৃষ্টিভঙ্গি।

পাঠক যা বলেন

নিয়মিত পাঠক ও সংগঠক আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, এই পাঠাগার তৃণমূলে জ্ঞানের আলো ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক পাঠক জানান, তিনি এক মাসে ১৫টি বই পড়েছেন। এমন বহু আগ্রহী পাঠকের গল্প ছড়িয়ে আছে গ্রন্থাগারজুড়ে।

সমাজসেবায় সোহান

শুধু পাঠাগারেই সীমাবদ্ধ নন সোহান; রক্তদানে তিনবার অংশ নিয়েছেন, যুক্ত হয়েছেন ‘বাঁধন’সহ অন্য রক্তদাতা সংগঠনে। রোগীর প্রয়োজনে রক্ত জোগাড়, ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছেন। ‘হেল্প অ্যান্ড কেয়ার’ নামক সংগঠনের মাধ্যমে ভোলা শহরে অসহায়দের সহায়তা, পরিবেশ সচেতনতা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং রোহিঙ্গা সহায়তায় কাজ করেছেন নিরলসভাবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শুধু জ্ঞান নয়; সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষ তৈরি করাই সোহানদের উদ্দেশ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত