Ajker Patrika

জার্মানির বনে ড্যাফোডিলের আবু নওফেল সাজিদ

বিজ্ঞপ্তি  
আবু নওফেল সাজিদ।
আবু নওফেল সাজিদ।

What is noted, Can’t be rotted— যদি ক্ল্যাসিক্যাল ফিলোসোফি থেকে চিন্তা করি তাহলে বোধ হয় কথাটি জীবন এবং সময়ের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। জীবনের মূল্যবোধ সময়ভেদে নানারকম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই হয়তো রবার্ট জে অপেন হেইমার বলেছেন, ‘Few people Laughed, Few people cried and Most of them are Silent’। গল্পের অবস্থানও তেমন সময়ের সঙ্গে একটি পরিবর্তিত রূপের, যা জীবনকে নতুন এক ডাইমেনশনে নিয়ে এসেছে।

আবু নওফেল সাজিদ একজন সাধারণ যুবক যিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার তিখাসার নামক গ্রামের অধিবাসী। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা, তবে সময়ের বেড়াজালে বিভিন্ন প্রতিঘাত যা রয়েছে আষ্টে পৃষ্ঠে । বাকি দশজনের মতোই স্বপ্ন ছিল জীবনে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। স্বপ্নকে লালন করে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সংকল্প ছিল তার। সেই স্বপ্নের পথ ধরে এগিয়ে চলার শুরু হয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ধাপে বাবাকে সড়ক দুর্ঘটনায় হারানোর পরে জীবন অনেকটা সংকুচিত হয়ে পরে। তবে সেখানেই হয়তো গল্পের মোড়, শুরু হয় একটি নতুন পথের উদ্দেশ্যে। সৃষ্টিকর্তা হয়তো চেয়েছেন জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবেন তাই নতুন করে শুরু হলো পথচলা। যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না, তবে শিক্ষকদের সহযোগিতায় তার একাডেমিক ক্যারিয়ার আবার খানিকটা এগোতে শুরু করল। তার ধারণায় এ যাত্রায় কাছের মানুষের অবদান কাগজে লিপিবদ্ধ করার মত সময় এখনো হয়ে ওঠেনি কিন্তু জীবনের সকল সিদ্ধান্তে তার পরিবার ঢাল হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি খুবই শান্ত স্বভাব এবং মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। তেমন বন্ধু সমাজ তৈরি না হলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ক্লাব এবং বিতর্ক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজসহ বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক কাজে সাংবাদিকতা মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রতিটি মানুষের জীবনে হয়তো একজন ব্যক্তির আগমন ঘটে পরবর্তীতে যেখানে সে গল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তেমনভাবে হয়তো বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক আফতাব হোসাইনের অবতারণা হয় এই গল্পে। কিছুটা ইনট্রোভার্ট থাকার দরুন একদিন রাতে তিনি জানার চেষ্টা করেন ‘তার দ্বারা কি সম্ভব?’ প্রফেসর সেদিন হয়তো তাকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন গল্পের শেষ পরিণতি এখানেই নয়, যুদ্ধ করে এগোতে হবে বহু পথ। তার চোখে তিনি নিলস বোরের থেকে কম কিছু নয় বলে সে বিশ্বাস করেন।

বিভিন্ন মানুষ, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টায় কাজ শুরু করলেন তিনি। দেশের বিভিন্ন মূলধারার পত্রিকা এবং ম্যাগাজিন গুলোয় লেখালেখির কাজ করতে লাগলেন। দিন শেষে অর্জনের দিক থেকে হিমালয় চূড়ায় ওঠার সাফল্য অর্জিত না হলেও কিছু নুড়ি কণাকে একত্রিত করার কিঞ্চিৎ অনুভব হয়তো প্রতীয়মান হলো। সৃজনশীলতা এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কাপড়ের ছোট একটি ব্যবসাও ছিল তার। সাবলীল এবং সিদ্ধ জীবন যেন খুবই সহজ যা ছিল তার চোখের ভাষায়। জীবন থেকে আসলে নেওয়ার তেমন কিছু নেই তবে অনুভূতি এবং সময়কে স্মৃতি রোমন্থন করে যায় বারংবার। নিজেকে জানার এবং ছাড়িয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তার চোখে।

‘Fortune favours the braves— জীবনে শেখার এই পর্যায়ে তার পরিচয় হয় সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাবিল খানের সঙ্গে। তার দৃষ্টিতে সাহসিকতার জন্ম হয়তো এই শিক্ষক দিয়ে গিয়েছেন তার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। তার মতে মানুষ তখনেই শিখতে পারে যখন সে প্রতিকূলতা সঙ্গে নিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে যায়। তেমনি তিনি তার হাসিমুখে কাবিল খানের সঙ্গে উত্তরা যাওয়ার পথের রিকশায় শোনা জীবনের দুঃসহ দিন কাটিয়ে ওঠার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হোন। আমরা গল্পের দিকে এগোতে থাকি।

একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি বলেছিলেন ‘প্রকৃতি কখনো ফাঁকা স্থান পছন্দ করে না, সময়ের সঙ্গে সে শূন্যস্থান পূরণ করে নেবেই’। সাজিদের জীবন তেমনি নানা মতাদর্শ এবং বিশ্বাসের সঙ্গে বেশ চলছিল। এক সুন্দর সকালে তিনি জানতে পারেন জার্মানির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে (DW) ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ সম্পর্কে। পরবর্তীতে তিনি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং তিনি তাকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেওয়ার জন্য আব্দুল কাবিল খানের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন।

কাবিল খান বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন, যা নিঃসন্দেহে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করে দেয় এই চরিত্রটির জন্য। ফলস্বরূপ ইন্টারভিউ সহ সকল প্রক্রিয়ার পরে জার্মানিতে ৩ মাসের জন্য ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান। তিনি অতি সাধারণ এক অবস্থা থেকে হয়তো সামান্য পালক যুক্ত করতে চলেছেন এই যাত্রায়। গল্পের এই প্রক্রিয়ায় আফতাব হোসেন এবং আব্দুল কাবিল খানের সামগ্রিক প্রয়াসে যাত্রা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়।

গল্পটা একজন তীর হারিয়ে ফেলা মাঝির। যা সৃষ্টিকর্তার বিশেষ করে আজ দৃশ্যমান হয়ে উঠতে চলেছে। যাত্রাপথে আরও বিশেষ কিছু মানুষের অবদান রয়েছে সে গল্প না হয় আজ থাক। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এ অর্জন হয়তো তেমন চূড়ান্ত মাত্রা যোগ করে না, কেননা জীবন হচ্ছে একটা চকলেটের বাক্স, কখন কোন চকলেটটি উঠবে তা কারোর জানা নেই। তিনি বিশ্বাস করেন হয়তো ‘এই দিনেই দিন নয়, আরও বাকি আছে’। ঘোড়দৌড়ের সবচেয়ে বাজে ঘোড়াটা হয়তো সর্বোচ্চ সফলতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সেই মতবাদকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং দশজন পিছিয়ে থাকা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই হয়তো গল্পের সাজিদের আজ এই পথচলা।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি টার্কিশ এয়ারলাইনের ফ্লাইটে জার্মানির বন শহরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন সাজিদ। তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

থানায় থানায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা হচ্ছে

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত