Ajker Patrika

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসে পড়তে চাইলে

ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ১৯
Thumbnail image

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বা জনস্বাস্থ্য হচ্ছে এমন একটা বিজ্ঞান এবং শিল্প, যা ব্যক্তি, সম্প্রদায়, সমাজ, সংস্থা ও সমাজে বিরাজমান আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দীর্ঘায়িত সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পাবলিক হেলথের বা জনস্বাস্থ্যের বিষয়বস্তু হচ্ছে, মানুষের রোগ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিরোধে পদ্ধতি-ব্যবস্থাপনার আবিষ্কার। 

পড়ার যোগ্যতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হবে। এ বিষয়ে পড়ার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। এ ছাড়া উভয় পরীক্ষায় টোটাল জিপিএ সর্বনিম্ন ৯.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতে এ গ্রেড থাকতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এসব প্রোগ্রামে ভর্তি হতে মেডিকেল সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে অনার্স পাস হতে হবে। 

কোথায় পড়া যাবে
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস কোর্সটি ২০১১ সালে চালু হয়। এখানে স্নাতকের পাশাপাশি মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারির মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে বেশ কটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। এর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) থেকে এমবিবিএস ডাক্তাররা মাস্টার্স (এমপিএইচ) ডিগ্রি নিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এমবিবিএস ডাক্তারদের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। 

যেসব কোর্সে পড়ানো হয় 
পাবলিক হেলথ একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। প্রোগ্রামটিতে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার কম্বিনেশন রয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে স্নাতক (বিপিএইচ) প্রোগ্রামে—ইন্ট্রোডাকশন টু পাবলিক হেলথ, বেসিক বায়োকেমিস্ট্রি, মেন্টাল হেলথ, হিউম্যান অ্যানাটমি, এপিডেমিওলজি, বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, অকুপেশনাল হেলথ, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন, গ্লোবাল হেলথ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ, ফুড সেফটি অ্যান্ড হেলথ ইত্যাদি কোর্স পড়ানো হয়। পাশাপাশি মাস্টার্স (এমপিএইচ) প্রোগ্রামে-অ্যাডভান্স এপিডেমিওলজি, সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ, বায়োইনফরমেটিকস, ট্রপিক্যাল ডিজেস, আরবান হেলথ, অ্যাডভান্স বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, অ্যাডভান্স পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, অ্যাডভান্স এনভায়রনমেন্টাল হেলথ এবং গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ ইত্যাদি কোর্সে পড়ানো হয়। 

চাকরি বা কর্মসংস্থান কোথায়
পাবলিক হেলথে চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে অ্যাকাডেমিয়া, ইন্ডাস্ট্রি, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারি অফিসার, নন-গভার্নমেন্ট অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে। বেশ কিছু মাল্টিন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে জবের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশনের মধ্যে—আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, ডব্লিউএইচও, ইউএনএফপিএ, ইউএনডিপি, ইউএস ভলান্টিয়ার, এডিবি, ইউএনএআইডিএস, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়াটার এইড, ইউনিসেফ, জাইকা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে বিশাল কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। এ ছাড়া হেলথ এডুকেশন, হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, কনসালট্যান্ট, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, এপিডেমিওলজিস্ট, স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। 

পড়ার খরচ 
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসে স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ খুবই কম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রামে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ২ থেকে ৮ লাখ টাকা গুনতে হতে পারে। তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি টাকা গুনতে হতে পারে। 

জনস্বাস্থ্যে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে পাবলিক হেলথ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেমন—করোনা, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, জিকা, কলেরা, বসন্ত, মহামারি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য, যেমন—বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনা মহামারির পর পাবলিক হেলথের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে পেরেছে। একটা মহামারি পুরো দেশ বা বিশ্বকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়। এই মহামারি থেকে জনগণকে সচেতন করা এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। করোনা মহামারির সময় মানুষকে সচেতন ও শিক্ষাদানে পাবলিক হেলথ গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করেছেন। দেশে নানাবিধ রোগব্যাধির পাশাপাশি হেলথ সেক্টরে জটিলতা রয়েছে। তাই পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজন আছে। বর্তমানে আমাদের হেলথ সেক্টরটগুলো ক্লিনিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। তারা প্রতিটি কমিউনিটিতে কাজ করতে পারলে সবার স্বাস্থ্যগত দিকের উন্নতি হবে। এ ছাড়া হেলথ সেক্টরের পলিসি লেভেলে গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক হেলথে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাবলিক হেলথের ওপর স্কুল রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনার্স (বিপিএইচ), মাস্টার্স (এমপিএইচ), এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামের ওপর বৃত্তি দিয়ে থাকে। পাবলিক হেলথে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রচুর বৃত্তি, অনুদান এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়। পাবলিক হেলথের ওপর ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ডেভিড এ. উইস্টোন হেলথ পলিসি স্কলারস প্রোগ্রাম, এনভায়রনমেন্টাল পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ, জর্জিয়া হেলথ ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ, টেক্সাস মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, ট্রুমান স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অব সান ফ্রান্সিসকো, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ ইত্যাদি বৃত্তি দেওয়া হয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হার্ভার্ড, জন হপকিন্স ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে গেছেন। 

ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত