এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
একটি শিশুর হাতে ঝাড়ু। স্কুলের করিডর নিজ হাতে মুছছে সে। ক্লাসের শেষে সবাই মিলে গ্লাস পরিষ্কার করছে, টেবিল সাজাচ্ছে, এমনকি টয়লেটও ধুয়ে নিচ্ছে নিঃসংকোচে। এটি কোনো ব্যতিক্রমী দৃশ্য নয়; বরং জাপানের প্রতিটি স্কুলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক চিত্র। জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই।
প্রযুক্তিতে অগ্রসর, শিল্পে সমৃদ্ধ এবং শৃঙ্খলায় অতুলনীয় জাপানে শিশুর গোড়ার ভিত্তিই নির্মাণ হয় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। আমরা অনেকেই জানি, জাপানের স্কুলে শিক্ষার্থীরা দারুণ রেজাল্ট করে, কিন্তু এর পেছনে যে আদর্শ, নীতি এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে, তা অনেক সময়ই আড়ালে থেকে যায়।
শিশুদের মানুষ করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য নয়; বরং একজন ভালো মানুষ তৈরিতে তাদের শিক্ষা ভূমিকা রাখে। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ৬ বছরে (গ্রেড ১-৬) সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, আচরণ ও সামাজিক দায়িত্ব শেখাতে। এ সময়টায় পরীক্ষার চাপ থাকে না, থাকে না কোনো র্যাঙ্ককিং ব্যবস্থাও। স্কুলের শিক্ষকেরা আগে শেখান কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়, কীভাবে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়, তারপর শেখান অঙ্ক আর ভাষা। এ ধরনের পাঠপ্রক্রিয়া একজন শিশুর মনে জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি, দায়বদ্ধতা এবং সম্মানবোধ। যা শুধু স্কুলেই নয়, গোটা সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
স্কুল মানেই একাত্মতা, দায়িত্ব এবং পরিচ্ছন্নতা
জাপানের স্কুলে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। আলাদা কোনো ঝাড়ুদার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ছাত্ররা নিজেদের ক্লাসরুম, করিডর, এমনকি বাথরুম পরিষ্কার করে। এতে গড়ে ওঠে সম্মিলিত দায়িত্ববোধ এবং নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস। কারণ যখন একটি শিশু জানে এই ঘরটুকু তার নিজের হাতেই পরিষ্কার রাখতে হবে, তখন সে কখনোই ময়লা ফেলে না। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্কুলে লাঞ্চ পরিবেশন করে। রান্না করা খাবার নিয়ে আসে নির্ধারিত কিছু শিক্ষার্থী, একে অপরকে পরিবেশন করে, তারপর একসঙ্গে খায়। এতে গড়ে ওঠে সহযোগিতা, কৃতজ্ঞতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান।
শিক্ষক শুধু শিক্ষক নন, একটি আদর্শ
জাপানের শিক্ষকেরা শুধু পাঠদানের কাজ করেন না, তাঁরা হলেন নৈতিকতার আদর্শ। একজন শিক্ষক জানেন, তাঁর প্রতিটি কাজ ছাত্রদের কাছে শিক্ষার অনুষঙ্গ। প্রতিটি ক্লাসে সময়ানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং পাঠ্যবিষয়ের গভীরতা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করা হয়। একজন জাপানি শিক্ষক প্রতিদিন প্রায় ১১ ঘণ্টা কাজ করেন। তবে তাঁরা এতে ক্লান্ত হন না, কারণ তাঁরা মনে করেন, এ দায়িত্ব শুধু চাকরি নয়; বরং জাতি গঠনের ভিত্তি।
‘হোমরুম’ কালচার
জাপানে প্রতিটি ক্লাসের দায়িত্ব থাকে একজন হোমরুম টিচারের ওপর। এই শিক্ষক শুধু ক্লাসে পড়ান না, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করেন। পারিবারিক সমস্যা, হতাশা, আবেগ বা আত্মবিশ্বাস; সব বিষয়ে তিনি থাকেন সজাগ। বছরের শুরুতে শিক্ষক নিজ হাতে ছাত্রদের নাম লিখে ‘স্বপ্নের খাতা’ তৈরি করেন। সেখানে লেখা থাকে, কে কী হতে চায়, কোথায় দুর্বল, কোথায় মেধাবী। বছর শেষে সেই খাতায় শিক্ষক মন্তব্য লেখেন একটি ব্যক্তিগত চিঠির মতো। এতে গড়ে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক।
গাইড করা, চাপিয়ে দেওয়া নয়
জাপানে উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রবেশ-পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। তবে শিক্ষাব্যবস্থার আশ্চর্য দিক হলো, শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ স্কুলে ‘ক্র্যাম স্কুল’ বা ‘জুকু’ রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারে। শিক্ষকেরা গাইড করেন, কিন্তু চাপিয়ে দেন না। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে স্কুলে ‘পরামর্শদাতা শিক্ষকদের’ রাখা হয়, যাঁদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা খোলামেলা কথা বলতে পারে।
আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী
জ্ঞান মানেই কেবল তথ্য নয়, বরং নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা। আমাদের দেশে যেখানে পরীক্ষার ফলাফলই শিক্ষার মূল পরিমাপক, সেখানে জাপানে শেখানো হয় কীভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়, কীভাবে সমাজের একজন সক্রিয় নাগরিক হয়ে ওঠা যায়। শিশুদের মুখে হাসি, চোখে স্বপ্ন, আর মনে দায়িত্ববোধ—এই তিনে গড়ে ওঠে এক সুশৃঙ্খল জাতি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যদি জাপানের মতো মানবিকতা, শৃঙ্খলা ও আদর্শের স্থান দিতে পারি, তবে ভবিষ্যতের পথ আরও আলোকিত হতে পারে।
একটি শিশুর হাতে ঝাড়ু। স্কুলের করিডর নিজ হাতে মুছছে সে। ক্লাসের শেষে সবাই মিলে গ্লাস পরিষ্কার করছে, টেবিল সাজাচ্ছে, এমনকি টয়লেটও ধুয়ে নিচ্ছে নিঃসংকোচে। এটি কোনো ব্যতিক্রমী দৃশ্য নয়; বরং জাপানের প্রতিটি স্কুলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক চিত্র। জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই।
প্রযুক্তিতে অগ্রসর, শিল্পে সমৃদ্ধ এবং শৃঙ্খলায় অতুলনীয় জাপানে শিশুর গোড়ার ভিত্তিই নির্মাণ হয় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। আমরা অনেকেই জানি, জাপানের স্কুলে শিক্ষার্থীরা দারুণ রেজাল্ট করে, কিন্তু এর পেছনে যে আদর্শ, নীতি এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে, তা অনেক সময়ই আড়ালে থেকে যায়।
শিশুদের মানুষ করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য নয়; বরং একজন ভালো মানুষ তৈরিতে তাদের শিক্ষা ভূমিকা রাখে। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ৬ বছরে (গ্রেড ১-৬) সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, আচরণ ও সামাজিক দায়িত্ব শেখাতে। এ সময়টায় পরীক্ষার চাপ থাকে না, থাকে না কোনো র্যাঙ্ককিং ব্যবস্থাও। স্কুলের শিক্ষকেরা আগে শেখান কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়, কীভাবে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হয়, তারপর শেখান অঙ্ক আর ভাষা। এ ধরনের পাঠপ্রক্রিয়া একজন শিশুর মনে জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি, দায়বদ্ধতা এবং সম্মানবোধ। যা শুধু স্কুলেই নয়, গোটা সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
স্কুল মানেই একাত্মতা, দায়িত্ব এবং পরিচ্ছন্নতা
জাপানের স্কুলে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। আলাদা কোনো ঝাড়ুদার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ছাত্ররা নিজেদের ক্লাসরুম, করিডর, এমনকি বাথরুম পরিষ্কার করে। এতে গড়ে ওঠে সম্মিলিত দায়িত্ববোধ এবং নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস। কারণ যখন একটি শিশু জানে এই ঘরটুকু তার নিজের হাতেই পরিষ্কার রাখতে হবে, তখন সে কখনোই ময়লা ফেলে না। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্কুলে লাঞ্চ পরিবেশন করে। রান্না করা খাবার নিয়ে আসে নির্ধারিত কিছু শিক্ষার্থী, একে অপরকে পরিবেশন করে, তারপর একসঙ্গে খায়। এতে গড়ে ওঠে সহযোগিতা, কৃতজ্ঞতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান।
শিক্ষক শুধু শিক্ষক নন, একটি আদর্শ
জাপানের শিক্ষকেরা শুধু পাঠদানের কাজ করেন না, তাঁরা হলেন নৈতিকতার আদর্শ। একজন শিক্ষক জানেন, তাঁর প্রতিটি কাজ ছাত্রদের কাছে শিক্ষার অনুষঙ্গ। প্রতিটি ক্লাসে সময়ানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং পাঠ্যবিষয়ের গভীরতা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে অনুসরণ করা হয়। একজন জাপানি শিক্ষক প্রতিদিন প্রায় ১১ ঘণ্টা কাজ করেন। তবে তাঁরা এতে ক্লান্ত হন না, কারণ তাঁরা মনে করেন, এ দায়িত্ব শুধু চাকরি নয়; বরং জাতি গঠনের ভিত্তি।
‘হোমরুম’ কালচার
জাপানে প্রতিটি ক্লাসের দায়িত্ব থাকে একজন হোমরুম টিচারের ওপর। এই শিক্ষক শুধু ক্লাসে পড়ান না, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করেন। পারিবারিক সমস্যা, হতাশা, আবেগ বা আত্মবিশ্বাস; সব বিষয়ে তিনি থাকেন সজাগ। বছরের শুরুতে শিক্ষক নিজ হাতে ছাত্রদের নাম লিখে ‘স্বপ্নের খাতা’ তৈরি করেন। সেখানে লেখা থাকে, কে কী হতে চায়, কোথায় দুর্বল, কোথায় মেধাবী। বছর শেষে সেই খাতায় শিক্ষক মন্তব্য লেখেন একটি ব্যক্তিগত চিঠির মতো। এতে গড়ে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক।
গাইড করা, চাপিয়ে দেওয়া নয়
জাপানে উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রবেশ-পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। তবে শিক্ষাব্যবস্থার আশ্চর্য দিক হলো, শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ স্কুলে ‘ক্র্যাম স্কুল’ বা ‘জুকু’ রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারে। শিক্ষকেরা গাইড করেন, কিন্তু চাপিয়ে দেন না। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে স্কুলে ‘পরামর্শদাতা শিক্ষকদের’ রাখা হয়, যাঁদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা খোলামেলা কথা বলতে পারে।
আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী
জ্ঞান মানেই কেবল তথ্য নয়, বরং নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা। আমাদের দেশে যেখানে পরীক্ষার ফলাফলই শিক্ষার মূল পরিমাপক, সেখানে জাপানে শেখানো হয় কীভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়, কীভাবে সমাজের একজন সক্রিয় নাগরিক হয়ে ওঠা যায়। শিশুদের মুখে হাসি, চোখে স্বপ্ন, আর মনে দায়িত্ববোধ—এই তিনে গড়ে ওঠে এক সুশৃঙ্খল জাতি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যদি জাপানের মতো মানবিকতা, শৃঙ্খলা ও আদর্শের স্থান দিতে পারি, তবে ভবিষ্যতের পথ আরও আলোকিত হতে পারে।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য থাকা প্রধান শিক্ষকের পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি...
৭ ঘণ্টা আগেজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২২- ২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স (নিয়মিত) প্রোগ্রামে ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ৩০ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে প্রাথমিক আবেদনপত্র পূরণ করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগেঅবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বেতন গ্রেড উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। বেতন গ্রেড উন্নীত করতে বছরে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ৩৪১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪০ টাকা।
২০ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ফর ইনোভেশন (WURI) ২০২৫-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ৪০০ উদ্ভাবনী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ২৫৭তম স্থান অর্জন করেছে উত্তরা ইউনিভার্সিটি। সোমবার (১৪ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগে