Ajker Patrika

অনলাইনেই হচ্ছে বুয়েটের গ্রেডেড টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা, কমানো হয়েছে সময়

প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৫: ২৭
অনলাইনেই হচ্ছে বুয়েটের গ্রেডেড টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা, কমানো হয়েছে সময়

এক ঘণ্টা সময় কমিয়ে অনলাইনেই গ্রেডেড টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ৪৬৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুলাই ওয়েবসাইটে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের টার্মের ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, LMS ও Virtual Meeting Software (Zoom, Microsoft Teams ও Moodle)-এর মাধ্যমে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের গ্রেড নির্ধারণে ধারাবাহিক মূল্যায়নের (ক্লাস উপস্থিতি, ক্লাস টেস্ট, মৌখিক পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন) জন্য ৩০ শতাংশ নম্বর ও টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ৭০ শতাংশ নম্বর থাকবে। সব কোর্সের জন্য টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার মোট সময়কাল হবে ২ ঘণ্টা এবং পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র আপলোড করার জন্য সময় থাকবে ১৫ মিনিট। পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিকভাবে দুটি ডিভাইসের মাধ্যমে যুক্ত থাকতে হবে। একটি ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা চলাকালে খাতা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পূর্ণ দৃশ্যমান রাখতে হবে। অন্য একটি ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র দেখা, উত্তরপত্র স্ক্যান ও আপলোডের কাজ করতে হবে।

ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর থেকেই অনলাইনে গ্রেডেড টার্ম নেওয়ার এই নীতিমালা কতটা বাস্তবসম্মত ও ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে জানুয়ারি টার্মের শুরুর দিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হলেও টার্ম ফাইনাল অফলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনের দিকে হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ডিভাইস ও ইন্টারনেট সমস্যা এবং সার্বিক অনলাইন শিক্ষাকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না এনে ছয় মাসের মধ্যেই অনলাইনে গ্রেডেড টার্ম ফাইনাল নেওয়ার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যেসব ক্লাস টেস্ট বা কুইজ দিই, সেগুলোয় পর্যন্ত ১০ মিনিট সাবমিশন টাইম দেওয়া হয়। সেখানে টার্ম ফাইনালে দুই ঘণ্টা লিখে এতগুলো পৃষ্ঠা সাজিয়ে স্ক্যান করে আপলোড দেওয়ার জন্য সাকল্যে ১৫ মিনিট সময় কোনোভাবেই ন্যায্য নয়।’

তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সময়ের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হবে বলে জানান বুয়েট ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

গত আনগ্রেডেড টার্ম ফাইনালের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় মোট গ্রেডের ৬০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার গ্রেডেড টার্ম ফাইনালে মোট গ্রেডের ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, কিন্তু সময় বাড়ানো হয়নি।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অফলাইনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাগুলোর সময়কাল ছিল তিন ঘণ্টা। সশরীরে পরীক্ষা হওয়ায় সেখানে উত্তরপত্র স্ক্যান করা কিংবা সাবমিশনের বাড়তি ঝামেলা ছিল না। অথচ অনলাইন পরীক্ষায়, যেখানে উত্তরপত্র লিখে, স্ক্যান করে তারপর সাবমিট করতে হয় এবং যেখানে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা ও ডিভাইস ফেইলিউরের ভয় থাকে, সেখানে পরীক্ষার সময়কাল বাড়বে বলে আশা করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হয়েছে উল্টো।

এ প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিন ক্রেডিটের কোর্সে ২১০ নম্বর ও চার ক্রেডিটের কোর্সে ২৮০ নম্বরের উত্তর করতে হবে মাত্র দুই ঘণ্টায়। এটি একটি গ্রেডেড টার্ম, কোনো ছেলেখেলা নয়। অফলাইনে একই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা তিন ঘণ্টা সময় পেতাম। এখন একই পরীক্ষা আমাদের দুই ঘণ্টায় শেষে করে ১৫ মিনিটের মধ্যে উত্তরপত্র স্ক্যান করে জমা দিতে হবে। কোনো ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ, নেটওয়ার্ক সমস্যা অথবা ডিভাইস ফেইলিউর হলেই পিছিয়ে যেতে হবে এক টার্ম। এককথায় অনলাইন টার্ম ফাইনালের এই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের রীতিমতো মানসিক চাপে ফেলে দিয়েছে।’

সম্ভাব্য প্রতারণা এড়াতে পরীক্ষা চলাকালে সার্বক্ষণিক ক্যামেরা অন রাখতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সার্বক্ষণিক পরীক্ষার খাতা ও পারিপার্শ্বিক ক্যামেরার মাধ্যমে দেখাতে হবে। কিন্তু একটি ল্যাপটপ ক্যামেরার মাধ্যমে একই সঙ্গে এত কিছু দেখানো কীভাবে সম্ভব, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি নির্দেশনায়।

এই নির্দেশনা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক শিক্ষকই ক্যামেরা দিয়ে একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মুখ ও লেখার টেবিল দুটিই একসঙ্গে দেখতে চান, যা ল্যাপটপের ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল দিয়ে করা অসম্ভব। আর সেটা করতে হলে ল্যাপটপকে যেই অ্যাঙ্গেল রাখতে হবে, তাতে প্রশ্ন দেখা অসম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার ইস্যু নিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন ঝামেলায় পড়েছিল। ক্লাস টেস্ট চলাকালে এক শিক্ষকের কথা অনুযায়ী একসঙ্গে চেহারা আর খাতা দুটিই দেখাতে হবে ভিডিওতে। সেটা দেখাতে গিয়ে ল্যাপটপ এত দূরে রাখতে হয়েছে যে প্রশ্নই আর দেখা যায়নি। আমি কখনো আশা করিনি যে বুয়েট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই অযৌক্তিক নির্দেশনা দেবে।’

বুয়েট ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশ্নের ধরন বিবেচনায় (পরীক্ষার) সময় কমনো হয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সব ধরনের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি।’

অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে সত্য নয় বলেও উল্লেখ করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৯৫ শতাংশ। আমরা হল থেকে বিনা সুদে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সফট লোনের ব্যবস্থা করেছি। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন অপারেটর থেকে সুবিধাযুক্ত ৯০০ সিম আমরা শিক্ষার্থীদের দিয়েছি। ১ হাজার ৫০০ শর বেশি শিক্ষার্থীকে মাসে ৫০০ টাকা করে ইন্টারনেট বিল এখনো বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে। তারপরও কোনো শিক্ষার্থী যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে কোনো অভিযোগ করে, তাহলে তাদের আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবেন। আমরা যতটুকু পারি, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত