লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রাম থেকে উঠে এসে হলি ক্রস কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বোস্টনে পাবলিক পলিসিতে পিএইচডি গবেষণার যাত্রা। বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসের ব্যস্ত করিডরে লেজিসলেটিভ ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন। বলছি বাংলাদেশের তরুণী আফসানা আলম প্রীতির কথা। তাঁর শৈশব, উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন, বৃত্তি পাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে মানিয়ে নেওয়ার গল্প নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক খান।
আব্দুর রাজ্জাক খান
আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা বিষয়ে জানতে চাই।
শৈশব কেটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রামে। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। স্কুলজীবনের প্রথম অংশ কেটেছে স্থানীয় স্কুলে। অষ্টম শ্রেণিতে শহরের রামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। দু-তিন ঘণ্টা লাগত সেখানে যেতে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় হলি ক্রস কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।
আপনি কখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখলেন? প্রেরণা কোথায় পেলেন?
স্নাতকের শেষ দিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবা শুরু করি। স্নাতকে বিষয় ছিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা। হঠাৎ আগ্রহ বদলে যায়। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার প্রক্রিয়াটা জটিল ও ব্যয়বহুল মনে হলেও পরে জানতে পারি, বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। স্বপ্নটা আর অসম্ভব মনে হয়নি। শুধু পড়াশোনা নয়, নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি এবং নতুন সমাজ সম্পর্কে জানার সুযোগও ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, শুরু থেকে পরিবারের সদস্যরা পাশে ছিলেন। তাঁরা সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন এবং প্রতিটি ধাপে আমার সঙ্গে থেকেছেন।
বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?
এই প্রক্রিয়াটা ছিল দীর্ঘ আর ধৈর্যের। শুরুতে এমন বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে শুরু করি, যেখানে আমার আগ্রহের প্রোগ্রাম রয়েছে। এরপর সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করি। ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষা দিই। তারপর শুরু করি স্টেটমেন্ট অব পারপাস লেখার কাজ, যেটি সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে লিখেছি। কারণ, এর মাধ্যমেই নিজের গল্প, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অ্যাডমিশন কমিটির কাছে তুলে ধরতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনপ্রক্রিয়া নিয়ে গাইড করার কেউ ছিলেন না। সবকিছু নিজেই শিখতে হয়েছে। যাঁরা আমাকে একাডেমিক ও প্রফেশনাল দিক থেকে ভালোভাবে চেনেন এবং আমার কাজ সম্পর্কে বলতে পারেন, তাঁদের থেকেই রেফারেন্স লেটার চেয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যখন পা রাখলেন, কী মনে হয়েছিল? সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান—কোনটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রথম যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি, ভাষাগত দিক থেকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করিনি। ইংরেজি ভাষায় আগে থেকে কিছুটা অভ্যস্ত ছিলাম। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আবহাওয়া। তীব্র ঠান্ডা, বরফ—এসবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। প্রথম তুষার পড়তে দেখার অনুভূতি স্বপ্নের মতো লেগেছিল।
সংস্কৃতির দিক থেকেও কিছু পার্থক্য ছিল। যদিও প্রতিটি সংস্কৃতিরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে।
কাজ, ক্লাস, হোমওয়ার্ক—সবকিছু সামলে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কীভাবে নিজেকে সামলেছেন?
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা শুরুতে কঠিন ছিল। পড়াশোনার চাপ, একা থাকা, নতুন পরিবেশ—সব মিলিয়ে নিজেকে তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছিল। আমার পরিবার এবং বন্ধুরা সব সময় মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন। এখানে কাউন্সেলিং সেন্টার, ওয়েলনেস প্রোগ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নানা রিসোর্স বা সময় বরাদ্দ থাকে, যা সহায়ক হয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝেছি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজের জন্য সময় বের করা জরুরি। চেষ্টা করি সময় পরিকল্পনা করে ব্যবহার করতে, যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের জন্যও কিছুটা সময় রাখা যায়। মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই, প্রিয় গান শুনি, বই পড়ি কিংবা ইয়োগা করি। আর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা আমার জন্য অপরিহার্য।
‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এ আপনি এখন যুক্ত আছেন। এই কাজটা আসলে কী ধরনের?
বর্তমানে আমি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে ‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এর অধীনে লেজিসলেটিভ ইন্টার্নশিপ করছি। এই কমিশনের মূল কাজ হলো নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, ভোটাধিকার এবং পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া ঘিরে আসা বিলগুলো পর্যালোচনা করা এবং আলোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।
আমার কাজের অংশ হিসেবে নির্বাচনী আইন-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে গবেষণা করি, কমিটির শুনানি পর্যবেক্ষণ করি এবং মাঝে মাঝে রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করি। এই কাজ করতে গিয়ে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া, নীতিনির্ধারণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ—সবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি।
এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বা শিখন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
খুব বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি; বরং পুরো পরিবেশটাই ছিল দারুণ। সবাই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে শুরুতে আমেরিকার সরকারব্যবস্থা, নির্বাচনপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটসের সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। এখানে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক শব্দ, নিয়ম ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে।
শুনেছি, আপনি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে হিয়ারিং সেশনে অংশ নিয়েছেন। সেদিনের কথা যদি বলেন।
এই অভিজ্ঞতা সত্যিই বিশেষ ছিল। ক্লাসরুমে বসে এত দিন যেসব নীতি ও পলিসি নিয়ে আলোচনা করতাম, সেগুলো এবার সামনে থেকে দেখা, পুরো প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া—আলাদা অনুভূতি ছিল। যেকোনো আইন বা নীতি কীভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতে তৈরি হয়, সেই বিষয়েও ধারণা হয়েছে। নীতিনির্ধারণ যে শুধু তাত্ত্বিক কিছু নয়, বরং বাস্তব প্রক্রিয়া, সেটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।
‘বিদেশি’ বা নারী শিক্ষার্থী হিসেবে কখনো কি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন?
একজন নারী বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পরিচয় নিয়ে কেউ অবমূল্যায়ন করেছে, এমনটা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা আছে; বিশেষ করে কাজের ধরন, ইন্টার্নশিপ বা কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, কাজের জায়গা—সব সময় চাহিদা বা পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছে।
এখন পাবলিক পলিসিতে পিএইচডি করছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ভবিষ্যতে এমন জায়গায় নিজেকে দেখতে চাই, যেখানে গবেষণা আর নীতিনির্ধারণ—দুটি একসঙ্গে করা যায়। আমার কাজ যেন শুধু একাডেমিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তবিক জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে, এটাই চাওয়া। বিশেষ করে নারী, অভিবাসী বা প্রান্তিক মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে কোনো গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা নীতিনির্ধারণমূলক সংস্থায় কাজ করতে চাই।
যেহেতু রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ নিয়ে শিখছি, এই খাতেও কাজ করতে আগ্রহী। যে কাজই করি, তা যেন মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে থাকেন, সেখানে শিক্ষার্থীর জন্য থাকা-খাওয়ার খরচ কত?
আমি বোস্টনে থাকি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এখানে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, হেলথ ইনস্যুরেন্স—সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ২ হাজার ডলার খরচ হয়। এটি সামলাতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্টাইপেন্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরিকল্পনা করে চললে এই খরচ ম্যানেজ করা সম্ভব।
অনেক শিক্ষার্থীই ডাইনিং হলে, ক্যাফে বা টিউটরিং করে আয় করেন। আপনার ক্ষেত্রে কেমন ছিল?
ক্যাফেতে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভালো লেগেছে। কাস্টমার গ্রিটিংস, কফি বানানো—এসব আমার ভালো লাগত। এখন বিভিন্ন ধরনের কফি বানাতে পারি! টিউটরিংয়ের অভিজ্ঞতাও দারুণ ছিল। যখন কাউকে কিছু শেখাতাম, সে ক্ষেত্রে নিজেরও অনেক কিছু জানা হয়ে যেত।
ফান্ডিং থাকলেও কি কখনো আর্থিক টানাপোড়েন অনুভব করেছেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। পুরোপুরি ফান্ডেড হলেও আর্থিক টানাপোড়েন তো রয়েছেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে যেখানে থাকি, সেই শহরটা অনেক ব্যয়বহুল।
এখানে বিভিন্ন ধরনের খরচ থাকে, অনেক সময় এমন খরচও চলে আসে, যেটা আগে ধারণা করা যায় না। তাই মনে হয়, বাজেট করে চলাটা খুব জরুরি।
যাঁরা এখন যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসতে চান, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমে নিজের লক্ষ্য অটুট রাখতে হবে। আপনি কেন মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান, কোন বিষয়ে করতে চান, আর সেটা কীভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে মেলে। এসব বিষয় ভেবে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। স্টেটমেন্ট অব পারপাস আর রেফারেন্স লেটার—এসব নিয়ে আগে থেকে কাজ করা উচিত। তাড়াহুড়ো না করে হাতে সময় নিয়ে এই প্রস্তুতিগুলো নিতে পারলে ভালো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এসে শুধু পড়াশোনাই নয়, মানিয়ে নেওয়া, একা থাকা, আর্থিক দিক সামলানো—সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা খুব দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। এই জার্নিতে অনিশ্চয়তা এবং নানা ধরনের মানসিক চাপ আসবে। আপনি যদি মন থেকে চেষ্টা করেন, শেখার ইচ্ছা রাখেন, আর ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান, অবশ্যই সফল হবেন।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
আপনার শৈশব এবং পড়াশোনা বিষয়ে জানতে চাই।
শৈশব কেটেছে লক্ষ্মীপুর জেলার পশ্চিম শেখপুরা গ্রামে। বড় হয়েছি যৌথ পরিবারে। স্কুলজীবনের প্রথম অংশ কেটেছে স্থানীয় স্কুলে। অষ্টম শ্রেণিতে শহরের রামগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হই। দু-তিন ঘণ্টা লাগত সেখানে যেতে। মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় হলি ক্রস কলেজ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।
আপনি কখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখলেন? প্রেরণা কোথায় পেলেন?
স্নাতকের শেষ দিকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবা শুরু করি। স্নাতকে বিষয় ছিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা। হঠাৎ আগ্রহ বদলে যায়। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার প্রক্রিয়াটা জটিল ও ব্যয়বহুল মনে হলেও পরে জানতে পারি, বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। স্বপ্নটা আর অসম্ভব মনে হয়নি। শুধু পড়াশোনা নয়, নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি এবং নতুন সমাজ সম্পর্কে জানার সুযোগও ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছিল। সবচেয়ে বড় কথা, শুরু থেকে পরিবারের সদস্যরা পাশে ছিলেন। তাঁরা সাহস জুগিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন এবং প্রতিটি ধাপে আমার সঙ্গে থেকেছেন।
বৃত্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?
এই প্রক্রিয়াটা ছিল দীর্ঘ আর ধৈর্যের। শুরুতে এমন বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে শুরু করি, যেখানে আমার আগ্রহের প্রোগ্রাম রয়েছে। এরপর সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করি। ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস পরীক্ষা দিই। তারপর শুরু করি স্টেটমেন্ট অব পারপাস লেখার কাজ, যেটি সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে লিখেছি। কারণ, এর মাধ্যমেই নিজের গল্প, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অ্যাডমিশন কমিটির কাছে তুলে ধরতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনপ্রক্রিয়া নিয়ে গাইড করার কেউ ছিলেন না। সবকিছু নিজেই শিখতে হয়েছে। যাঁরা আমাকে একাডেমিক ও প্রফেশনাল দিক থেকে ভালোভাবে চেনেন এবং আমার কাজ সম্পর্কে বলতে পারেন, তাঁদের থেকেই রেফারেন্স লেটার চেয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যখন পা রাখলেন, কী মনে হয়েছিল? সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভাষাগত ব্যবধান—কোনটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রথম যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি, ভাষাগত দিক থেকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জ অনুভব করিনি। ইংরেজি ভাষায় আগে থেকে কিছুটা অভ্যস্ত ছিলাম। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আবহাওয়া। তীব্র ঠান্ডা, বরফ—এসবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল। প্রথম তুষার পড়তে দেখার অনুভূতি স্বপ্নের মতো লেগেছিল।
সংস্কৃতির দিক থেকেও কিছু পার্থক্য ছিল। যদিও প্রতিটি সংস্কৃতিরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য আছে।
কাজ, ক্লাস, হোমওয়ার্ক—সবকিছু সামলে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কীভাবে নিজেকে সামলেছেন?
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা শুরুতে কঠিন ছিল। পড়াশোনার চাপ, একা থাকা, নতুন পরিবেশ—সব মিলিয়ে নিজেকে তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছিল। আমার পরিবার এবং বন্ধুরা সব সময় মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক সচেতন। এখানে কাউন্সেলিং সেন্টার, ওয়েলনেস প্রোগ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নানা রিসোর্স বা সময় বরাদ্দ থাকে, যা সহায়ক হয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝেছি, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজের জন্য সময় বের করা জরুরি। চেষ্টা করি সময় পরিকল্পনা করে ব্যবহার করতে, যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের জন্যও কিছুটা সময় রাখা যায়। মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হই, প্রিয় গান শুনি, বই পড়ি কিংবা ইয়োগা করি। আর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা আমার জন্য অপরিহার্য।
‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এ আপনি এখন যুক্ত আছেন। এই কাজটা আসলে কী ধরনের?
বর্তমানে আমি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে ‘কমিশন অন ইলেকশন ল’-এর অধীনে লেজিসলেটিভ ইন্টার্নশিপ করছি। এই কমিশনের মূল কাজ হলো নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, ভোটাধিকার এবং পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া ঘিরে আসা বিলগুলো পর্যালোচনা করা এবং আলোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।
আমার কাজের অংশ হিসেবে নির্বাচনী আইন-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে গবেষণা করি, কমিটির শুনানি পর্যবেক্ষণ করি এবং মাঝে মাঝে রিপোর্ট তৈরিতে সহায়তা করি। এই কাজ করতে গিয়ে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া, নীতিনির্ধারণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ—সবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি।
এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ বা শিখন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
খুব বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি; বরং পুরো পরিবেশটাই ছিল দারুণ। সবাই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে শুরুতে আমেরিকার সরকারব্যবস্থা, নির্বাচনপ্রক্রিয়া, বিশেষ করে ম্যাসাচুসেটসের সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। এখানে কাজ করতে গিয়ে নতুন অনেক শব্দ, নিয়ম ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে।
শুনেছি, আপনি ম্যাসাচুসেটস স্টেট হাউসে হিয়ারিং সেশনে অংশ নিয়েছেন। সেদিনের কথা যদি বলেন।
এই অভিজ্ঞতা সত্যিই বিশেষ ছিল। ক্লাসরুমে বসে এত দিন যেসব নীতি ও পলিসি নিয়ে আলোচনা করতাম, সেগুলো এবার সামনে থেকে দেখা, পুরো প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া—আলাদা অনুভূতি ছিল। যেকোনো আইন বা নীতি কীভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতে তৈরি হয়, সেই বিষয়েও ধারণা হয়েছে। নীতিনির্ধারণ যে শুধু তাত্ত্বিক কিছু নয়, বরং বাস্তব প্রক্রিয়া, সেটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।
‘বিদেশি’ বা নারী শিক্ষার্থী হিসেবে কখনো কি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন?
একজন নারী বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমার পরিচয় নিয়ে কেউ অবমূল্যায়ন করেছে, এমনটা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা আছে; বিশেষ করে কাজের ধরন, ইন্টার্নশিপ বা কিছু বৃত্তির ক্ষেত্রে। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, কাজের জায়গা—সব সময় চাহিদা বা পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছে।
এখন পাবলিক পলিসিতে পিএইচডি করছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ভবিষ্যতে এমন জায়গায় নিজেকে দেখতে চাই, যেখানে গবেষণা আর নীতিনির্ধারণ—দুটি একসঙ্গে করা যায়। আমার কাজ যেন শুধু একাডেমিক গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তবিক জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে, এটাই চাওয়া। বিশেষ করে নারী, অভিবাসী বা প্রান্তিক মানুষকে নিয়ে কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে কোনো গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় বা নীতিনির্ধারণমূলক সংস্থায় কাজ করতে চাই।
যেহেতু রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ নিয়ে শিখছি, এই খাতেও কাজ করতে আগ্রহী। যে কাজই করি, তা যেন মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে থাকেন, সেখানে শিক্ষার্থীর জন্য থাকা-খাওয়ার খরচ কত?
আমি বোস্টনে থাকি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এখানে থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, হেলথ ইনস্যুরেন্স—সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ২ হাজার ডলার খরচ হয়। এটি সামলাতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্টাইপেন্ডের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরিকল্পনা করে চললে এই খরচ ম্যানেজ করা সম্ভব।
অনেক শিক্ষার্থীই ডাইনিং হলে, ক্যাফে বা টিউটরিং করে আয় করেন। আপনার ক্ষেত্রে কেমন ছিল?
ক্যাফেতে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব ভালো লেগেছে। কাস্টমার গ্রিটিংস, কফি বানানো—এসব আমার ভালো লাগত। এখন বিভিন্ন ধরনের কফি বানাতে পারি! টিউটরিংয়ের অভিজ্ঞতাও দারুণ ছিল। যখন কাউকে কিছু শেখাতাম, সে ক্ষেত্রে নিজেরও অনেক কিছু জানা হয়ে যেত।
ফান্ডিং থাকলেও কি কখনো আর্থিক টানাপোড়েন অনুভব করেছেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। পুরোপুরি ফান্ডেড হলেও আর্থিক টানাপোড়েন তো রয়েছেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে যেখানে থাকি, সেই শহরটা অনেক ব্যয়বহুল।
এখানে বিভিন্ন ধরনের খরচ থাকে, অনেক সময় এমন খরচও চলে আসে, যেটা আগে ধারণা করা যায় না। তাই মনে হয়, বাজেট করে চলাটা খুব জরুরি।
যাঁরা এখন যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে আসতে চান, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমে নিজের লক্ষ্য অটুট রাখতে হবে। আপনি কেন মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান, কোন বিষয়ে করতে চান, আর সেটা কীভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে মেলে। এসব বিষয় ভেবে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। স্টেটমেন্ট অব পারপাস আর রেফারেন্স লেটার—এসব নিয়ে আগে থেকে কাজ করা উচিত। তাড়াহুড়ো না করে হাতে সময় নিয়ে এই প্রস্তুতিগুলো নিতে পারলে ভালো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এসে শুধু পড়াশোনাই নয়, মানিয়ে নেওয়া, একা থাকা, আর্থিক দিক সামলানো—সবকিছুই চ্যালেঞ্জিং। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা খুব দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। এই জার্নিতে অনিশ্চয়তা এবং নানা ধরনের মানসিক চাপ আসবে। আপনি যদি মন থেকে চেষ্টা করেন, শেখার ইচ্ছা রাখেন, আর ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান, অবশ্যই সফল হবেন।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ।
এসএসসি ও সমমানের উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশিত হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল তুলনামূলক খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিগত ১৬ বছরের মধ্যে পাসের হার সর্বনিম্ন।
৫ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিনই আমাদের জীবনে ইতিবাচক -নেতিবাচক বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা প্রায়ই নেতিবাচক ঘটনাগুলোতেই বেশি মনোযোগ দিই। ভালো যে অনেক কিছুই ঘটছে, তা হয়তো টেরই পাই না। দিন শেষে আমরা ক্লান্ত, অভিযোগে ভরা, হতাশ। অথচ এ মানসিকতার বদল আনতে পারে একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস...
৭ ঘণ্টা আগেইতালিতে ইউনিভার্সিটি অব মিলান ডিএসইউ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ বৃত্তির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। এ বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত।
৭ ঘণ্টা আগেমালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া (আইআইইউএম) আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিকস কম্পিটিশন ২০২৫’ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের একটি দল ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে। বিশ্বের ১৫০টি দলের অংশ নেওয়া এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি দলটি উদ্ভাবনী সমাধান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির...
৮ ঘণ্টা আগে