Ajker Patrika

চাঁদা না পেয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়কে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার মারধর

প্রতিনিধি, ঢাবি
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১০: ১৫
চাঁদা না পেয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়কে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার মারধর

রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিট অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় মো. মনির হোসেন (৩২)। তাঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক আকতারুল করিম রুবেল। চাঁদা না পেয়ে তিনি মনির হোসেনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

সোমবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের পাকা রাস্তার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে মারধর করার বিষয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন।

জানা যায়, নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রাজা বলে পরিচয় দেন রুবেল। এ ছাড়া অনেকের কাছে তিনি এ নামেই পরিচিত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সেশনের বাংলা বিভাগ ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

মনির হোসেন এজাহারে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ও আমার সহকর্মী সোহেল এবং হারুন আজ সোমবার (২৬ জুলাই) সকালের নাশতা করার জন্য বের হই। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের পাকা রাস্তার সামনে পৌঁছালে আকতারুল করিম রুবেল ও তাঁর তিনজন সহযোগী আমার নিকট পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে এবং তার সহযোগীরা আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমার ঘাড়, হাত, পা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। আমার সাথে থাকা সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে হাসপাতালের অন্যান্য সহকর্মী এগিয়ে এসে আকতারুল করিম রুবেলকে আটক করলেও বাকি সহযোগীদের আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। আমি বেশি আঘাত পাওয়ায় আমার এক সহকর্মীর মাধ্যমে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এ রকম একটি অভিযোগ আমরা শাহবাগ থানা সূত্রে জানতে পেরেছি। সে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত মাদক সেবন ও বিক্রি করে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। নিজেকে সে উদ্যানের রাজা পরিচয় দিয়ে বেড়ায়।’ অধ্যাপক রব্বানী আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে কেউ কোনো অন্যায় করলে সে যে-ই হোক আমরা তাকে কখনো প্রশ্রয় দেব না। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমি মনে করি।' পাশাপাশি তার আসলে ছাত্রত্ব আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেন রব্বানী। 

তবে অপরাধী যে-ই হোক আইন অনুযায়ী যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগে কোনো অপরাধীর জায়গা নেই; বিশেষ করে যারা মাদক, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজির সাথে জড়িত তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। আমরা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন তা আমরা করে যাব।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘আকতারুল করিম রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে শাহবাগ থানায় হাজতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মনির হোসেন নামে একজনের কাছে চাঁদা দাবি ও হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেছে। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।' 

গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম সূত্রে জানা যায়, আকতারুল করিম রুবেল একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মাদক, চাঁদা দাবি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে জানা যায়। জিয়া হলের আরেক শিক্ষার্থী ও তাঁর বন্ধু ইশতিয়াক আহমেদ ইমনসহ সাত-আটজন নিয়মিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক সেবন করেন বলে জানা যায়। উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘরের পাশে অবস্থিত গ্লাস টাওয়ারের নিচে সাধারণত তিনি ও তাঁর সহযোগীরা সব সময় অবস্থান করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত