Ajker Patrika

রোবট বানিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতল ৯ বছরের আরিয়েত্তি ইসলাম

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ২৬
রোবট বানানোর যন্ত্রাংশ হাতে আরিয়েত্তি।
রোবট বানানোর যন্ত্রাংশ হাতে আরিয়েত্তি।

মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিয়েত্তি ইসলাম। বয়স সবে ৯ বছর। এ ছোট্ট বয়সেই রোবট বানিয়ে তার অর্জনের ঝুলিতে পুরেছে গোল্ড মেডেল। শুধু কি তা-ই? সে লিখেছে গল্পের বই, শিখেছে প্রোগ্রামিং! সামনে গণিত আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছে সে।

পরিবার ও পড়াশোনা

ঢাকার মিরপুরে মা-বাবা আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকে আরিয়েত্তি। বাবা সফটওয়্যার প্রকৌশলী, মা লেখিকা। ছোটবেলা থেকেই মা তাকে গল্প পড়ে শোনাতেন। তাই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায়। আরিয়েত্তি প্রাইভেট না পড়ে স্কুলে শেখে আর বাসায় তার বাবার পাশে বসে গণিত, প্রোগ্রামিং আর রোবোটিকস শেখে।

লেখালেখি আর শখ

আরিয়েত্তি শুধু রোবট বানায় না, লেখালেখিও করে। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় মাত্র ৪ বছর ৭ মাস বয়সে, ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসরে। এ পর্যন্ত অনেক গল্প লিখেছে সে। গত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার বই—‘আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা’। গল্প লেখা ছাড়াও সে ক্রাফটিং করে, ঘুরতে ভালোবাসে আর পাখি পালন করে।

রোবট বানিয়ে সোনা জয় করল আরিয়েত্তি।
রোবট বানিয়ে সোনা জয় করল আরিয়েত্তি।

রোবট বানানোর শুরু

আরিয়েত্তির বাবা বাসায় রোবটের কিছু যন্ত্রাংশ রাখতেন। সেগুলো নিয়ে খেলতে খেলতেই শুরু। তিন বছর বয়সেই শিখে ফেলে বেসিক ইলেকট্রনিকস। এরপর তৈরি করেছে একের পর এক রোবট। আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে তার চ্যালেঞ্জ ছিল—নদী পরিষ্কার করতে পারে এমন রোবট বানানো। তার রোবট পানির মধ্যে চলতে পারত, সেন্সর দিয়ে লোহা-জাতীয় আবর্জনা খুঁজে বের করত, তারপর ইলেকট্রোম্যাগনেট দিয়ে টেনে তুলে ফেলত।

আরিয়েত্তির প্রকাশিত বই ‘আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা’।
আরিয়েত্তির প্রকাশিত বই ‘আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা’।

প্রোগ্রামিং শেখা

অক্ষর চেনার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রোগ্রামিং শেখা শুরু! প্রথমে HTML আর CSS, এরপর JavaScript। রোবোটিকসের জন্য শিখেছে C++। স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং থেকেও শিখেছে নানা লজিক, যা রোবট বানাতে কাজে লেগেছে।

চ্যালেঞ্জ আর জয়

প্রতিযোগিতায় মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুরো রোবট বানাতে হতো। থিম ঘোষণা হতো, আর তখনই শুরু করতে হতো পরিকল্পনা, কোডিং আর তৈরির কাজ।

আরিয়েত্তি বলে, ‘আমরা প্রতিযোগিতার আগে ২১টি হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প করি। সেখানে কোচ মিশাল ইসলাম স্যার আমাদের শেখাতেন কীভাবে সময়মতো কাজ শেষ করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাফিফা জামাল ম্যামও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।’

অবশেষে প্রতিযোগিতায় ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে গোল্ড আর ফিজিক্যাল কম্পিউটিংয়ে সিলভার জেতে সে। বাংলাদেশের পতাকা হাতে মঞ্চে দাঁড়ানো—সেটাই তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।

দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র সৈকত বুসানের হেউন্দে বিচে আরিয়েত্তি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র সৈকত বুসানের হেউন্দে বিচে আরিয়েত্তি।

সামনে কী করবে

আরিয়েত্তি স্বপ্ন দেখে রোবোটিকসের পাশাপাশি গণিত আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার। এখন থেকেই জটিল গণিত সমস্যার সমাধান নিয়েই ব্যস্ত থাকে সে।

রোবট বানিয়ে সোনা জয় করল আরিয়েত্তি।
রোবট বানিয়ে সোনা জয় করল আরিয়েত্তি।

সবার অনুপ্রেরণা

আরিয়েত্তির মা বলেন, ‘আমি বই পড়ে শোনাতেই সে বাংলা পড়তে শিখে ফেলে। কৌতূহলও ছিল অনেক বেশি। নিজে থেকে ক্রাফটিংয়ের কাজ করত।’

আরিয়েত্তির বাবা বলেন, ‘সে আমার পাশে বসে প্রোগ্রামিং শিখতে চাইত। আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাকে দেখিয়ে দিতাম, কীভাবে প্রোগ্রামিং করতে হয়। প্রবলেম সলভিংয়ের জন্য আমি তাকে রোবোটিকসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। তার লার্নিং কার্ভ অসাধারণ।’

অধ্যাপক লাফিফা জামাল মনে করেন, ‘আট বছরের শিশু যেভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোবট বানিয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে, বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত