Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে
নাদিম মজিদ

বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন আইএটিএর ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন রাহাত ইয়াসির। তাঁর প্রোগ্রামিংয়ে আসা, আইএটিএর নিয়োগপ্রক্রিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বাংলাদেশিদের সফল হওয়ার উপায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন রাহাত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ

প্রশ্ন: বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন হলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ডেটা কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন। কী কী কাজ করছেন?
উত্তর: ১৯৪৫ সালে আইএটিএ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রধান কার্যালয় কানাডার মনট্রিলে। এখানে আমার টিমকে বলা হয় গ্লোবাল এভিয়েশন ডেটা ম্যানেজমেন্ট। আমরা ফ্লাইটের সেফটি, সিকিউরিটি এবং অপারেশনের জন্য বিশ্বের তথ্য বিনিময় প্রোগ্রামগুলোকে হোস্ট করে থাকি। আমার প্রধান কাজ হলো বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্মের ডেটা কোয়ালিটি, ডেটা লাইনেজ এবং তাদের ফাংশনগুলো নিশ্চিত করা। আমি এভিয়েশন ডেটার অ্যাডভান্স অ্যানালাইটিকস দেখাশোনা করি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ফ্লাইট অপারেশন, সেফটি এবং সিকিউরিটি-সংক্রান্ত বিভিন্ন কেস স্টাডি সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে থাকি।

প্রশ্ন: আইএটিএর নিয়োগপদ্ধতি সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: একটি বৈশ্বিক অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে আইএটিএ আন্তর্জাতিক নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সব ধরনের খালি পদ লিংকডইনে দেওয়া হয়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ আবেদন করতে পারে। নিয়োগকারী ব্যবস্থাপকেরা সব সিভি সতর্কতার সঙ্গে রিভিউ করে থাকেন। তাঁরা ফোনকল, বাড়িতে করার জন্য একটি কাজ, টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ এবং ম্যানেজারিয়েল কলের মাধ্যমে তাঁদের সেরা আবেদনকারীকে নিয়োগ করে থাকেন।

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে প্রোগ্রামিংয়ে এলেন?
উত্তর: আমি ২০১০ সালে প্রোগ্রামিং শুরু করি। তখন আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করছিলাম। আমি ভাবতাম, প্রোগ্রামিং শিখলে সফটওয়্যার সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্যাগুলো ম্যাজিকের মতো সমাধান করতে পারব। সে লক্ষ্যে প্রোগ্রামিংয়ে আসা।
 
প্রশ্ন: আপনি স্নাতক করার সময় সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এ অভিজ্ঞতা আপনার ক্যারিয়ার গঠনে কীভাবে কাজে লেগেছে?
উত্তর: স্নাতক শুরুর সময় নিশ্চিত ছিলাম না যে আমার জন্য কোনটা ভালো? প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, নাকি সফটওয়্যার প্রকল্প প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা যায়, আর সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বজনীন যেকোনো সমস্যার সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান করা যায়। কিছুদিন ভাবার পর বুঝতে পারি, প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চেয়ে সফটওয়্যার প্রজেক্ট প্রতিযোগিতা আমাকে বেশি টানে। আমি স্ক্র্যাচ (শূন্য) থেকে যেকোনো কিছু তৈরি এবং উন্নত করতে পছন্দ করতাম এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ব্যবহারকারীরা কী করছেন, সে পর্যন্ত যুক্ত থাকতে চাইতাম। ফলে আমি আমার স্নাতক পড়ার সময়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম এবং অনেক পুরস্কার জিতেছিলাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন হলো ২০১২ সালে মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ রাউন্ডে রানারআপ হয়েছিলাম, একই বছরে প্যানাসনিক আইডিয়াস চেঞ্জ লাইভস প্রতিযোগিতায় সেরা আটটি আইডিয়ার একটি ছিল আমাদের আইডিয়া, ২০১৩ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত হওয়া নকিয়া ফিউচার ক্যাপচার হ্যাকাথনের ফাইনালিস্ট ছিলাম, ২০১৭ সালে কানাডা থেকে ইমার্জিং অ্যাগ্রিকালচার বেস্ট প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলাম এবং ২০১৬ সালে কানাডার উসাক রিসার্চ ফেস্টে দ্বিতীয় বেস্ট রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম।

২০১৮ সালে আমি কানাডার টপ সফটওয়্যার ডেভেলপার ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হই। আমার এসব অর্জনের মূল কারণ ছিল, আমি প্রথম দিক থেকে একটি সফটওয়্যারের সিস্টেম বোঝার চেষ্টা করতাম। আমি সব সময় যেকোনো সফটওয়্যারের ইউজার ইন্টারফেস থেকে ডেটাবেইস, সিস্টেম ডিজাইন থেকে ডেটা কম্পোন্যান্ট বোঝার চেষ্টা করতাম, যা আমাকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন: আপনি দশমবারের মতো মাইক্রোসফট মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্রফেশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। কোনো ব্যক্তির কী যোগ্যতা থাকলে মাইক্রোসফট এ পুরস্কার দিয়ে থাকে?
উত্তর: এ বছর দশমবারের মতো মাইক্রোসফট এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। সাত বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্যাটাগরিতে এমভিপি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। মাইক্রোসফট বিশ্বব্যাপী টপ টেকনোলজি প্রফেশনালদের মধ্যে তাদের জ্ঞান, কমিউনিটি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার ভিত্তিতে এ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। আমি বিগত কয়েক বছরে শতাধিক অফলাইন ও অনলাইন কনফারেন্সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি। বিনা মূল্যে ব্লগ লিখি, ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করি, ই-বুক রিলিজ দিই এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে মেন্টরিং করে থাকি। এসব কার্যক্রমের কারণে মাইক্রোসফট আমাকে এই অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে।

প্রশ্ন: আমাদের জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে বলুন।
উত্তর: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগৎ খুব দ্রুত বাড়ছে। এখন আর এটি হাইপের মধ্যে নেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিংয়ে রাইড অর্ডার দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, খবর, ওয়েব, মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবস্থার ব্যবহার রয়েছে। আমরা বর্তমানে দুই ধরনের এআই দেখতে পাই—প্রথাগত মেশিন লার্নিং এবং জিপিটিভিত্তিক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল।

আমি বিশ্বাস করি, অদূর ভবিষ্যতে জিপিটিভিত্তিক আইওটি ডিভাইস এবং রোবোটিক সিস্টেমের ট্রেন্ড বৃদ্ধি পাবে। এলএলএম মডেলের সাহায্যে হার্ডওয়্যার ব্যবস্থা আরও স্মার্ট হবে। হার্ডওয়্যার মানুষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করবে, মানুষের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে এবং আরও ভালো কমান্ড দিতে পারবে। আশা করছি, আমাদের জীবদ্দশায় এ পরিবর্তন দেখে যেতে পারব।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পারদর্শী হতে পারবে?
উত্তর: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সামনে অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশাল এবং এখানে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ট্রেন্ডস থেকে শিখতে পারবে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তারা স্থানীয় মার্কেট থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারবে এবং এআই ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইন টুলস ও প্ল্যাটফর্ম থেকে শিখতে পারবে এবং অনলাইন কোর্স করতে পারবে। আমি শিক্ষার্থীদের সব সময় উৎসাহ দেব, তারা যেন এআই ল্যাব ব্যবহার করে এবং বাস্তব সমস্যার সমাধান এআই দিয়ে করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়: হাসি গল্প গানের মিলনমেলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৪
পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যদের সঙ্গে আরপিএসইউ শাখার সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যদের সঙ্গে আরপিএসইউ শাখার সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

বন্ধুদের সঙ্গে সবাই কমবেশি আড্ডা দিই। তবে শিক্ষার্থীদের এমন আড্ডায় যদি যোগ দেন শিক্ষকেরা, ভাগাভাগি করেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প, আর শিক্ষার্থীরা খুঁজে পান অনুপ্রেরণা, তখন সেই আড্ডা হয়ে ওঠে সত্যিই ব্যতিক্রম। ঠিক এমনই ভিন্নধর্মী এক আড্ডার আয়োজন করেছে পাঠকবন্ধু আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয় (আরপিএসইউ) শাখা। এটি ছিল পাঠকবন্ধুর দ্বিতীয় পর্বের প্রাণবন্ত ‘ক্যাম্পাস আড্ডা’, যেখানে হাসি, গল্প ও সৃজনশীলতায় মিলিত হয়েছে এক মধুর মিলনক্ষেত্র।

২৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরঘেঁষা সবুজ ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে বসে এই প্রাণবন্ত আড্ডা। এতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেন কুইজ প্রতিযোগিতা, রম্য বিতর্ক, মজার ‘পিলো পাসিং’ খেলা এবং সুরের তালে তালে গান।

মঞ্চে বসে বন্ধুদের আয়োজন উপভোগ করছেন আরপিএসইউর উপাচার্য। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
মঞ্চে বসে বন্ধুদের আয়োজন উপভোগ করছেন আরপিএসইউর উপাচার্য। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেন আরপিএসইউ পাঠকবন্ধু শাখার সদস্যরা। পরে নুসরাত আহমেদ কণার সঞ্চালনায় শুরু হয় আড্ডার আলোচনা। শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়। পাশাপাশি বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা মো. আসাদুজ্জামান, আজকের পত্রিকার পক্ষে হেড অব ডিজিটাল অ্যাড সেলস মো. সিরাজুল ইসলাম সুমন, পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মো. আব্দুর রাজ্জাক খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তাহমিদ আল মাহবুব খান এলিন এবং পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা।

আরপিএসইউর উপাচার্যকে উপহার তুলে দিচ্ছেন পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
আরপিএসইউর উপাচার্যকে উপহার তুলে দিচ্ছেন পাঠকবন্ধুর কেন্দ্রীয় সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

ছাত্র উপদেষ্টা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একটি সুন্দর পৃথিবী আমরা গড়ে তুলতে চাইলে শুধু পরিবেশ সুন্দর করাই যথেষ্ট নয়। প্রথমে আমাদের মনের ভেতরটি পরিষ্কার ও সুন্দর করতে হবে। প্রতিটি ভালো কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে। তখন শরীর-মন সুস্থ থাকবে, রোগ-বালাই কমবে। মানবিকতা গড়ে তোলা, সুন্দরভাবে বাঁচা—এই প্রত্যয় আমাদের রাখতে হবে।’

প্রযুক্তির এই যুগে আমরা ধীরে ধীরে বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তবে পাঠকবন্ধু চেষ্টা করছে শিক্ষার্থীদের বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে এবং তাদের পাঠাভ্যাস বাড়িয়ে তুলতে। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের বাইরে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখেছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা—এটিই আজকের ক্যাম্পাস আড্ডার মূল উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন মো. সিরাজুল ইসলাম সুমন।

রম্য বিতর্কে অংশ নিয়েছেন পাঠকবন্ধুর সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
রম্য বিতর্কে অংশ নিয়েছেন পাঠকবন্ধুর সদস্যরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে মো. আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘আমরা এমন এক আড্ডার আয়োজন করেছি, যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রে বসে তাদের অভিজ্ঞতা, স্মৃতিচারণা ও স্বপ্নগুলো ভাগাভাগি করবেন। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।’

মো. তাহমিদ আল মাহবুব খান এলিন বলেন, ‘আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বৈচিত্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আমরা সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হই এবং একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ ও আন্তসম্পর্ক গড়ে তুলি।’

ক্যাম্পাস আড্ডা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
ক্যাম্পাস আড্ডা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘পাঠকবন্ধুর ক্যাম্পাস আড্ডা একটি অনন্য মঞ্চ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠপ্রেমীরা একত্র হয়ে জ্ঞান, চিন্তা ও মানবিকতার সুন্দর বন্ধনে মিলিত হন। পাঠ শুধুই বিদ্বান বানায় না, মানুষও গড়ে তোলে।’

আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় রম্য বিতর্ক ‘পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন নয়, শিক্ষার্থীর কল্পনাশক্তিই ভয়ংকর!’। এতে অংশ নেন তামান্না আক্তার, আফরিন আক্তার, জাকিয়া সুলতানা ও এশা ইসলাম। প্রথম স্থান অধিকার করেন জাকিয়া সুলতানা।

সনদ ও পুরস্কার নিচ্ছেন এক বন্ধু। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়
সনদ ও পুরস্কার নিচ্ছেন এক বন্ধু। ছবি: তৈয়বুর রহমান তন্ময়

এরপর শুরু হয় মজার ‘পিলো পাসিং’ খেলা, যেখানে মিউজিকের তালে শিক্ষার্থীরা উপভোগ করেন খেলার আনন্দ। প্রথম হন মেহেরুনেছা মেরি। এরপর মঞ্চে গান পরিবেশন করেন আরপিএসইউ কালচারাল ক্লাবের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। প্রথম স্থান অধিকার করেন নাদিয়া আক্তার।

পাঠকবন্ধু আরপিএসইউ শাখার সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাফল্যের মুখ দেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উপস্থিত থেকে তরুণদের এই সৃষ্টিশীল উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক সাবরিন সুলতানা উর্বরা জানান, আরপিএসইউ ক্যাম্পাসে এক অনন্য বিকেল কাটল পাঠপ্রেমী তরুণদের সঙ্গে। বই শুধুই পড়ার বস্তু নয়, এটি একটি সেতুবন্ধন, যা মানুষকে মানুষে যুক্ত করে, ভাবনায় গভীরতা আনে এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে।’

অনুষ্ঠান শেষে পাঠকবন্ধুর অতিথি ও সদস্যরা পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন। হাসি, গল্প আর গানে গানে এক আনন্দঘন দিন কাটে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাঠকবন্ধুদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঠকবন্ধু ক্যাম্পাস আড্ডা /নিজের ইতিবাচক শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে

অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৯
পাঠকবন্ধুদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন আরপিএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
পাঠকবন্ধুদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন আরপিএসইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়

আড্ডা এখন অনেক কমে গেছে। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের হাতে থাকা ছোট্ট একটি যন্ত্র—মোবাইল ফোনসেট। এই যন্ত্র আমাদের একে-অপরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আমি বলি ‘রেস ডিসকানেকটেড আস, রিলিজিয়ন সেপারেট আস, পলিটিকস ডিভাইড আস, ওয়েলথ ক্ল্যাসিফাই আস’। এর সঙ্গে যোগ করতে চাই ‘মোবাইল ডিমোরালাইজড’। যদিও এই উক্তি নিয়ে বিতর্ক আছে, তবু সত্যি হলো, মোবাইল জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও এর অপব্যবহার ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।

আজকাল ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময়ও হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এক পরিবারের তিনজন সদস্য একসঙ্গে বসলেও প্রত্যেকে ব্যস্ত নিজের মোবাইলের মধ্যে, কথাবার্তা প্রায় নেই। অথচ মোবাইলের মধ্যে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। এটি দিয়ে তুমি প্রজেক্ট, থিসিস বা যেকোনো একাডেমিক গবেষণা করতে পারো। আমাদের সময়ে এই ধরনের সুযোগ ছিল না। এখন ইন্টারনেট তোমার হাতের মুঠোয়। জ্ঞান আহরণ করতে চাইলে তুমি পুরো বিশ্ব জয় করতে পারো। মনে রাখতে হবে, মোবাইলের দুটি দিক আছে—একটি সুফল, অন্যটি কুফল। সুফল কাজে লাগাতে হবে। নেতিবাচক ব্যবহার আমাদের যুবসমাজে বিভিন্ন আসক্তি, হতাশা এবং দুঃখজনক আত্মহত্যার মতো প্রবণতা তৈরি করছে। তাই তোমরা মোবাইল ব্যবহার করবে এর ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগিয়ে।

জীবনে সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে। আমি নিজে খারাপ থাকলেও বলি, ‘আমি খুব ভালো আছি’। এই মানসিক ইতিবাচকতা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর স্বপ্ন থাকতে হবে—স্বপ্ন ছাড়া কেউ বড় হতে পারে না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যা আমরা ঘুমিয়ে দেখি; স্বপ্ন সেটাই, যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না।’

তোমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ ‘আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়’, এর প্রতিষ্ঠাতা আর পি সাহাও ছিলেন একজন মহান স্বপ্নদ্রষ্টা। মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘আমি যদি কখনো সম্পদশালী হই, তাহলে একটি মাতৃসদন হাসপাতাল গড়ে তুলব, যেন কোনো মা বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’ ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, দারিদ্র্যপীড়িত সেই মানুষটি ফুটপাতে ঘুমিয়েছে, সংবাদপত্র বিক্রি করেছে, গাড়ি মুছেছে। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রমে মাত্র ছয় বছরে তিনি ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেন। কয়লা, জুট, চামড়া, লবণ, নৌপরিবহন—সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।

তবে সেই সম্পদ নিজের জন্য নয়, তিনি উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের কল্যাণে। প্রতিষ্ঠা করেছেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, কুমুদিনী হাসপাতাল, কুমুদিনী কলেজ, দেবেন্দ্র কলেজ—সবই মানবতার সেবায় নিবেদিত।

তোমাদেরও তাই স্বপ্ন দেখতে হবে, নিজের ভেতরে ইতিবাচক শক্তি জাগিয়ে তুলতে হবে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং সমাজ পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়, উপাচার্য, আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাবির আইবিএর ভর্তি পরীক্ষা ২৮ নভেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
ঢাবির আইবিএর ভর্তি পরীক্ষা ২৮ নভেম্বর

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধীনে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ২৮ নভেম্বর (শুক্রবার) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আইবিএ ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত রাত ১১টা ৫৯ পর্যন্ত। আবেদন শেষে আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগেপর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন শুরু ৭ নভেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি আবেদন আগামী ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। ফলাফল প্রকাশ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত ভর্তি শেষে আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ওরিয়েন্টেশন, রেজিস্ট্রেশন ও শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১ হাজার ১০৯টি আসনে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও নিয়মাবলি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৩২০, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৩০৩ এবং কোটায় ১৭। আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো এসএসসি ২০২২-২৩ ও এইচএসসি ২০২৪-২৫ পরীক্ষায় সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৮.০০। ভর্তি পরীক্ষা ৬০ নম্বরের এমসিকিউ ও ৪০ নম্বরের লিখিত অংশের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত অঙ্কন পরীক্ষা থাকবে।

‘বি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ২৮১, যার মধ্যে সাধারণ আসন ২৬৬ ও কোটায় ১৫। আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো সম্মিলিত জিপিএ ন্যূনতম ৮.০০। পরীক্ষা পদ্ধতি ‘এ’ ইউনিটের মতো হবে। ‘সি’ ইউনিটের (কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, শিক্ষা ও চারুকলা স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৪১৫, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৩৯১ ও কোটায় ২৪।

আবেদনের যোগ্যতার শর্ত হলো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সম্মিলিত জিপিএ কমপক্ষে ৭ পেতে হবে। চারুকলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত লিখিত ও অঙ্কন পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘ডি’ ইউনিটের (ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল) মোট আসন সংখ্যা ৮৮, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৮৩ ও কোটায় ৫।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত