Ajker Patrika

‘অপহৃত’ যুবক ছয় বছর পর নিজেই ফিরলেন

প্রতিনিধি, বগুড়া
‘অপহৃত’ যুবক ছয় বছর পর নিজেই ফিরলেন

তাঁকে অপহরণের দায়ে সাড়ে চার মাস জেল খেটেছেন আজিজার রহমান (৩১)। সাত বছর ধরে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন। ‘অপহৃত’ সেই মো. শামীম (২৬) হঠাৎ সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে এলেন! 

আজ সোমবার সকালে শামীমের দেখা মিলেছে বগুড়ার সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায়। তাঁকে দেখা গেছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরা বাড়িতে ভিড় করেন। বর্তমানে শামীম বগুড়া সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। 

আজ সকাল থেকে বিষয়টি বগুড়ায় টক অব টাউন। পুলিশের সূত্র ও অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, শামীমকে অপহরণের মামলায় ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিলাদুনন্নবী। আজিজার রহমানকে (৩১) একমাত্র আসামি করা হয়। মামলায় চার মাস জেলও খাটেন তিনি। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। 

ঘটনার ছয় বছর পর জানা গেল, শামীম ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অনুপ্রবেশের দায়ে সে দেশে দুই বছর জেলও খেটেছেন তিনি। 

এর মধ্যে পুলিশের কাছে একটি মামলার নথি হাজির করেছেন আজিজার রহমান। সমাজে শান্তিরক্ষার জন্য বগুড়া আদালতে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলা করেন তিনি। আসামি করা হয়েছে শামীম, তাঁর মা ঝর্ণা বেগমসহ চারজনকে। এই মামলায় তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। তবে আজিজারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা এখনো চলমান। 

ঘটনা বগুড়া সদরের মানিকচক এলাকার। এলাকায় জনশ্রুতি ছিল শামীম মারা গেছেন। আজ সকালে হঠাৎ তাঁকে বগুড়ার সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায় দেখা যায়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত গ্রামবাসী তাঁর বাড়িতে ভিড় করেন। খবর পেয়ে শামীমকে বগুড়া সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে নেয়। 

শামীম সদর উপজেলার শাখারিয়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম শাহিন। আর আজিজার রহমান পার্শ্ববর্তী মানিকচকের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম মৃত ধলু প্রামাণিক। আজিজার পেশায় শহরের বড়গোলা এলাকার একটি মুদির দোকানে কর্মচারী। 

আজিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শামীমের কাছ থেকে এক লাখ টাকা পাওনা ছিল আমার। ছয় বছর আগে শামীমকে টাকা জন্য চাপ দিই। এরপর শামীম গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যান। পরে আমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন শামীমের মা ঝর্ণা বেগম। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আমি এ মামলায় সাড়ে চার মাস জেল খেটেছি। এখনো নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছি।’ 

আজিজার বলেন, ‘সোমবার সকালে মানিকচক এলাকায় শামীমকে বাইসাইকেল চালিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। পরে আমার ছোট ভাই তাঁকে আটক করে। পরে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ এসে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।’ 

বগুড়া সদর থানায় কথা হয় শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আজিজারের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তাঁরা আমাকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে আমি ভারতে পালিয়ে যাই। সেখানে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আমার সাজা হয়। দুই বছর সাজা শেষে তিন বছর আগে আমি দেশে ফিরে আসি।’ 

এতদিন কেন প্রকাশ্যে আসেননি এমন প্রশ্নে শামীম বলেন, ‘আজিজারদের ভয়ে আমি এলাকায় বাইরে যাইনি। তবে আদালতে হাজিরা দিয়েছি।’ 

আজিজারের বিরুদ্ধে করা মামলার তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে ২ জানুয়ারি কর্নপুর মহল্লার আজিজার রহমান তার বন্ধু শাখারিয়া গ্রামের শামীম অপহরণ করে গুম করেছেন। এমন অভিযোগ করে গত ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি শামীমের মা ঝর্ণা বেগম বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলায় জেল খাটেন আজিজার। 

সকালে বগুড়া সদর থানার ওসি মো. সেলিম রেজা বলেন, শামীম বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন বলে আমাদের বলা হচ্ছে। আর অপহরণ মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। 

তবে সন্ধ্যার দিকে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগের মামলা (আজিজারের বিরুদ্ধে মামলা) আদালতে চলমান। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। তবে শামীমের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা থেকে আদালত থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত