Ajker Patrika

ভারতে মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যা: ১০ জনের কারাদণ্ড

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২: ০০
ভারতে মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যা: ১০ জনের কারাদণ্ড

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডে এক মুসলিম তরুণকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ১০ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজ্যর সেরাইকেলা আদালত। চার বছর আগে ওই তরুণকে হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে তাঁদের। একই সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খন্ডে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে একদল লোক চার বছর আগে তাবরেজ আনসারি (২৪) নামের ওই তরুণকে বেধড়ক মারপিট করে। গুরুতর আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান তিনি।

ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আনসারিকে মারধর করছে উত্তেজিত জনতা। এ সময় প্রাণ ভিক্ষা করতেও দেখা যায় তাঁকে। হিন্দু দেবতাদের নামে স্লোগান দিতেও বাধ্য করা হয় এই মুসলিম তরুণকে। ওই সময় ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

তার পরিবারের অভিযোগ, আহত হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। তবে রাজ্য পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০১৯ সালের ১৯ জুন রাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আতঙ্কিত আনসারিকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। লোকজনের মারধরের হাত থেকে বাঁচতে আর্তনাদ করেছেন তিনি। হামলাকারীরা তাঁকে বার বার ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করেন।

হামলাকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী, আনসারি জয় শ্রীরাম স্লোগানও দেন। তার পরও রাতভর তার ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাঁকে। পরে পুলিশ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখায় তাঁকে। গ্রেপ্তারের পর আনসারির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার।

২২ জুন ওই তরুণ বমি বমি ভাব, বমি এবং বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান। পরে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বেধড়ক মারধররে আহত এই তরুণ মারা যান।

গত সপ্তাহে ঝাড়খন্ডের একটি আদালতের বিচারক অমিত শেখর ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, অভিযুক্তরা অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী।

সেই সময় প্রাথমিকভাবে হত্যার অভিযোগ না নেওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনাও হয়েছিল দেশটিতে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনে পুলিশ।

দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দু জনতার হাতে আনসারিকে মারধর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গত কয়েক বছরে ভারতে প্রায় একই ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

গরুর মাংস খেয়েছে বা গরু পাচারের চেষ্টা করছে—এমন গুজব ছড়িয়ে তথাকথিত ‘গোরক্ষকরা’ প্রায়ই দেশটিতে মুসলিমদের ওপর হামলা চালায়। ভারতে গরুকে অনেক হিন্দু পবিত্র বলে মনে করেন। দেশটির অনেক রাজ্যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন বিরোধী রাজনীতিকেরা। দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা রাহুল গান্ধী আনসারির পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘মানবতার কলঙ্ক’ বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন।

সমালোচকেরা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা বেড়েছে। তাঁরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি এ ধরনের হামলার দ্রুত বা কঠোর নিন্দা জানাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত