Ajker Patrika

কারাগারে ১০৫ মন্ত্রী-এমপি

 শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১০: ৫২
কারাগারে ১০৫ মন্ত্রী-এমপি

বিগত আওয়ামী লীগ আমলের শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) বর্তমানে কারাগারে। তাঁদের অধিকাংশই বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন। তাঁরা হত্যা, হত্যাচেষ্টা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের মুখে। কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে কয়েক ডজন মামলা।

বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদের বাকি সদস্যরাও গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। তাঁদের কেউ ভারতে, কেউ মালয়েশিয়ায়, কেউ যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে।

পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১২ জন সাবেক এমপি, সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে সাবেক নারী এমপি ১২ জন। গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে সাতজন পরে জামিন পেয়েছেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম আজকের পত্রিকা'কে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক আসামি দেশত্যাগ করেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে।

গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ২৮ মন্ত্রী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ১০, সাবেক উপমন্ত্রী ৩, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ৩, দ্বাদশ সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু (পাবনা-১) ও সরকারদলীয় সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ (পটুয়াখালী-২)।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা–কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১২ মে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সর্বপ্রথম গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক এমপি এম আব্দুল লতিফ। চট্টগ্রাম থেকে র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৯ আগস্ট। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৮-২৪ সাল পর্যন্ত একাধিক গুম, খুন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা রয়েছে।

এরপর ১৩ আগস্ট রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা (ঢাকা-১ আসনের সাবেক এমপি) সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি)। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং প্রভাবশালী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদের সর্বশেষ গ্রেপ্তার এমপি হলেন আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা। কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এই এমপিকে ১৭ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমকে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ জুন। টেকনোক্র্যাট কোটার সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে মোহাম্মদপুর থেকে আটকের পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা করা হয় ঢাকার একটি আদালতে। ১৫ আগস্টের ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত ও কয়েক শ মানুষ আহত হন বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নির্দেশনার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর মামলা করা হয়। তিনি ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

কারাগারে যেসব সাবেক মন্ত্রী

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক (টাঙ্গাইল-১), সাবেক বিমানমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ (সিলেট-৪), সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১), সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি (রংপুর-৪), গোলাম দস্তগীর গাজী (নারায়ণগঞ্জ-১), আসাদুজ্জামান নূর (নীলফামারী-২), নুরুল ইসলাম সুজন (পঞ্চগড়-২), নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম-১), আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (সিরাজগঞ্জ-৫), নুরুজ্জামান আহমেদ (লালমনিরহাট-২), আমির হোসেন আমু (ঝালকাঠি-২), রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), শাজাহান খান (মাদারীপুর-২) ও রমেশ চন্দ্র সেন।

এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন।

কারাগারে আটক যেসব সাবেক প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী

গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), মাহবুব আলী, কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫), কামাল আহমেদ মজুমদার (ঢাকা-১৫), জাকির হোসেন (কুড়িগ্রাম-৪), শহীদুজ্জামান সরকার (নওগাঁ-২), শাহজাহান ওমর (ঝালকাঠি-১), ডা. এনামুর রহমান ও দীপংকর তালুকদার।

কারাগারে থাকা সাবেক তিন উপমন্ত্রী হলেন আরিফ খান জয়, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (ভোলা-৪) ও ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু (বরগুনা-১)।

কারাগারে থাকা অন্য সাবেক এমপিরা

মোহাম্মদ আলী, আয়েশা ফেরদৌস, আহমেদ হোসেন, আবদুর রহমান বদি, মো. সাদেক খান, আবদুস সোবহান মিয়া, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, মাজহারুল ইসলাম, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, শাহে আলম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, তানভীর ইমাম, সেলিম আলতাফ জর্জ, কাজী জাফরুল্লাহ, রাহেনুল হক রায়হান, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জান্নাত আরা হেনরী, মাহবুব আরা বেগম গিনি, আবদুর রউফ, ইকরামুল করিম চৌধুরী, আবদুস সালাম মূর্শেদী, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মো. দিদারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, মহিবুর রহমান মানিক, মো. সোহরাব উদ্দিন, মো. রাশিদুজ্জামান, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আলী আজম, মোহাম্মদ সোলাইমান সেলিম, সাফিয়া খাতুন, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, রাগেবুল আহসান রিপু, কামরুল আশরাফ খান, নাসিমুল আলম চৌধুরী, সফিউল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, আহমেদ নাজমিন সুলতানা, অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, চয়ন ইসলাম, আবদুল মজিদ খান, সানোয়ার হোসেন, এম এ মালেক, আফতাব উদ্দিন সরকার, মো. আফজাল হোসেন, মোরশেদ আলম, শাহ সারোয়ার কবির, কাজী মনিরুল ইসলাম, জাফর আলম, আমিরুল আলম মিলন, সেলিনা ইসলাম, শামীমা আখতার খানম, মমতাজ বেগম, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, বেগম জেবুন্নেসা ও লায়লা পারভীন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৬-১০টি মামলা রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। গ্রেপ্তারের পর বেশির ভাগকেই দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার অধিকাংশ আসামির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপিসহ ২০ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, মামলার যেসব আসামি দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং যাঁরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমানকে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলায় তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ব্যাংক থেকে ঋণ, শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগেও তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়েছে। আদালত তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের শেষ তিন মেয়াদের আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে এ পর্যন্ত হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতির অভিযোগে করা ৫৫টির বেশি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তাঁর মোট ৫১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২১টি মামলায়। চাঁদপুর-৩ আসনের টানা চারবারের এই সাবেক এমপিকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯ আগস্ট।

জামিন পেয়েছেন যে সাতজন

গ্রেপ্তারের পর জামিন পেয়েছেন সাতজন। তাঁরা হলেন সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান (সুনামগঞ্জ-৩), সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, নায়েব আলী জোয়ারদার (ঝিনাইদহ-১), তাহজীব আলম সিদ্দিক (ঝিনাইদহ-২) এবং মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন মিয়াজী (ঝিনাইদহ-৩)।

গ্রেপ্তার এড়িয়ে বিদেশে

পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলের অন্তত ৬৩ জন মন্ত্রী-এমপির বিদেশে অবস্থানের তথ্য রয়েছে। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাহবুব উল আলম হানিফ ভারতে, সাবেক মৎস্যমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ যুক্তরাজ্যে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পলাতক। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২৪ জুনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত