Ajker Patrika

ইয়াবা পাচার থামছেই না

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১২: ২৯
ইয়াবা পাচার থামছেই না

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের সর্বত্র বেড়েছে ইয়াবা পাচার। প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে বড় বড় চালান। গত সাত দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ৯ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনের মতো পাচারকারী। এঁদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক বা রোহিঙ্গা। এতে স্থানীয় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, দিনদিন ইয়াবা পাচার বাড়ছে। গোপনে সংবাদ না পেলে পাচার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তার পরও হাল ছাড়ছে না তারা। ২০ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন, কোস্টগার্ডের অভিযানে প্রায় ৯ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের হাবিবছড়া মেরিন ড্রাইভ এলাকা থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা জব্দ করে কোস্টগার্ড। সংস্থাটির সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা আমিরুল হক জানান, গোপন সংবাদে মেরিন ড্রাইভ সড়কে অভিযান চালিয়ে এই ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কোস্টগার্ড সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবার বস্তা ফেলে পাচারকারীরা পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ২০ আগস্ট সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে ১৪ হাজার ইয়াবা জব্দ হয়েছিল।

২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ট্রলারে করে আনা ইয়াবার চালান সাগরতীরে খালাসের সময় টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা জব্দ করেন। এ সময় পাচারকারীরা পালিয়ে যান। তবে ট্রলার মালিক মো. হারুন ও মাঝি মো. কামালসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২২ আগস্ট উখিয়ার বালুখালী এলাকায় মো. সৈয়দ নুরকে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল মোস্তফা জানান, চলতি সপ্তাহে বড় বড় ইয়াবা চালান জব্দ করা হয়েছে। আগের চেয়ে পাচার খুব বেড়ে গেছে। এদিকে র‍্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদীর দেওয়া তথ্যমতে, গত সাত দিনে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাবের অভিযানে ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ইয়াবাসহ সাতজনকে আটক করা হয়।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন জানান, কিছুদিন আগে ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযান চালিয়ে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তিনি আরও বলেন, এই ব্যাটালিয়ন ২০২১ সালের শুরুতে শিবিরে নিযুক্ত হয়। তখন থেকে ১১টি রোহিঙ্গা শিবির থেকে প্রায় ৫ লাখ ইয়াবাসহ ১০৭ জনকে আটক করা হয়। ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক মো. নাইমুল হক জানান, চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযান পরিচালনা করে ১০ হাজারের বেশি ইয়াবাসহ সাতজন আটক হয়েছে।

১৬ এপিবিএন অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, গত সাত দিনে ২ হাজারের বেশি ইয়াবাসহ চারজনকে আটক করা হয়। ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান জানান, উপজেলার তল্লাশি চৌকিগুলোতে নিয়মিত ইয়াবাসহ পাচারকারীরা আটক হচ্ছে। ২০ আগস্ট ৬০ হাজার ইয়াবাসহ টাঙ্গাইলের দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। এর দুই দিন পরে ৩০ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়।

সিও ফয়সল হাসান খান বলেন, রোহিঙ্গারা আসার পর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ৮৭০ ইয়াবাসহ ১৩২ জন রোহিঙ্গাকে আটক হয়েছেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দিন দিন ইয়াবা পাচার বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতিকেই কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। উখিয়া-টেকনাফের শিবির ব্যবহার করে নিরাপদে পাচার করছে ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে খুব অল্পসংখ্যকই আটক হচ্ছে।

তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে পুলিশ প্রায় লক্ষাধিক ইয়াবা জব্দ করেছে। এর বিপরীতে ১২টি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চলতি সপ্তাহে মাদক সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী মুসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদক পাচার নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। রোহিঙ্গা আসাতে এই পাচার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক পাচার ঠেকাতে রাষ্ট্রের আরও কঠোর হওয়া দরকার। না হলে আগামী প্রজন্মকে বাঁচানো কঠিন হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত