Ajker Patrika

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী কলকাতায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও কলকাতা প্রতিনিধি 
Thumbnail image

চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানের ‘শিষ্য’ ছিলেন তাঁরা। ডাকাতি-চাঁদাবাজি-অস্ত্রবাজির অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪০ টির বেশি। একে-৪৭-এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন দুজনে। কারাগারে তাঁরা চলাফেরা করতেন একই ধরনের জামা-জুতা পরে। বন্দরনগরীর অপরাধজগতে ‘মানিক জোড়’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তাঁদের। 

এই জুটির একজন সারোয়ার হোসেন ওরফে সারোয়ার, আরেকজন নূর নবী ওরফে ম্যাক্সন। ২০১৭ সালে জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে দুজন একসঙ্গে পালিয়ে যান কাতারে। সেখান থেকে দেশে ফিরে ২০২০ সালে ফের গ্রেপ্তার হন সারোয়ার। তখন থেকেই ম্যাক্সনের অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। তিনি দেশে ফিরেছেন, নাকি অন্য কোথাও পালিয়েছেন? পুলিশের কাছে এতদিন এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর ছিল না, তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাক্সনের সন্ধান মিলেছে। 

ভারতের কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া এ সন্ত্রাসীকে গত শুক্রবার উত্তর চব্বিশ পরগনার ডানলপ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার সিআইডি পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কলকাতার উপকণ্ঠে ডানলপ এলাকায় ভাড়া করা ফ্ল্যাটবাসা থেকে ম্যাক্সনকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তমাল চৌধুরী ছদ্মনামে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই ওই এলাকায় বসবাস করছেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে। দালাল ধরে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট জোগাড় করেছেন। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর সঙ্গে ভারতীয় একজন নারীও ছিলেন। এ সময় ম্যাক্সনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি টাকা এবং মোবাইলের সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে জেরা করছেন ভারতের গোয়েন্দারা। 
 
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের তথ্য আমরা জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁরা ম্যাক্সনকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেবেন।’ 
 
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশ, বেআইনিভাবে বসবাস এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে কলকাতার ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, বাংলাদেশ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন জাহানপুর আলতাফ মিয়া বাড়ির আবদুল লতিফের ছেলে ম্যাক্সন। তাঁর বিরুদ্ধে ৫টি অস্ত্র মামলা ও ১৭টি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ২০১১ সালে একটি ডাকাতির মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সারোয়ারকে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। মূলত এর পরই আলোচনায় আসেন এই সন্ত্রাসী জুটি। ওই মামলায় ২০১৭ সালে জামিন পেয়ে কারগার থেকে বেরিয়ে কাতারে পালিয়ে যান তাঁরা। সেখানে বসেই চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি করতেন দুজন। 

 ২০১৯ সালেও অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একজন ব্যবসায়ী চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চাঁদার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সরোয়ারের সঙ্গে ম্যাক্সনের সংঘর্ষ হওয়ার পর কাতারের পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে দেশে পাঠায়। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সারোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ম্যাক্সনের কোনো খোঁজ মেলেনি তখন। 

বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন ওসি বলেছিলেন, ‘ম্যাক্সন দেশেই আছেন।’ তবে বর্তমান ওসি জানালেন, ‘কাতার থেকে ম্যাক্সন দেশে ফেরেননি। কাতার থেকেই তিনি ভারতে পালিয়ে যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত