Ajker Patrika

যুক্তরাজ্যের জন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারি খুলছে ভারত, আছে চ্যালেঞ্জও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: এএফপি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: এএফপি

ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে গত মাসে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ভারতের বৃহৎ সরকারি ক্রয় বাজার যুক্তরাজ্যের সরবরাহকারীদের জন্য খুলে দিতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সিদ্ধান্ত। পণ্য ও সেবা থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণের মতো জন সম্পর্কিত কাজের চুক্তি তাদের এর আওতাভুক্ত।

চুক্তি অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের ৩৮ বিলিয়ন ডলারের প্রায় ৪০ হাজার উচ্চমূল্যের টেন্ডার যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এই টেন্ডারগুলো মূলত পরিবহন, গ্রিন এনার্জি এবং অবকাঠামো মতো কৌশলগত ক্ষেত্রের। এসব ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত বিদেশি প্রতিযোগিতা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবেশাধিকার অতুলনীয়। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, এটি ‘ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পূর্বের চুক্তির তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয়’ এবং ‘নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে।’

চুক্তি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভারতীয় সরকারি চুক্তির জন্য বিড করতে যাওয়া যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ভারতীয় সরবরাহকারীদের সমপর্যায়ের বলে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো আসন্ন সরকারি টেন্ডার এবং ক্রয় সংক্রান্ত সুযোগের তথ্যও রিয়েল-টাইমে পাবেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে মাত্র ২০ শতাংশ কাঁচামাল নিয়ে তৈরি পণ্যকে ‘ভারতীয়’ পণ্য হিসেবে ভারত সরকারের কাছে সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলি তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কাঁচামাল নিজ বা অন্য দেশ থেকে এনে এখন ভারতীয় ক্রয়ের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে।

সরকারি প্রকল্পে বিড করার জন্য ন্যূনতম চুক্তির মূল্যও উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। এর ফলে, যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো এখন ‘গ্রামীণ সড়ক, স্কুলের জন্য সৌর যন্ত্রপাতি বা সরকারি দপ্তরের জন্য আইটি সিস্টেম’ মতো ছোট ছোট প্রকল্পেও বিড করতে পারবে, যা আগে সম্ভব ছিল না।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর জন্য এই সুযোগ বাস্তবে কাজে লাগানো সহজ হবে না। ভারতীয় থিংক ট্যাংক কাউনসিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. অর্পিতা মুখার্জি বলেন, যুক্তরাজ্যের সরবরাহকারীরা ক্লাস-২ স্থানীয় সরবরাহকারী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু ভারতীয় কোম্পানিগুলি ক্লাস-১ সরবরাহকারীর মতো প্রাধান্য পেতে থাকবে। এ ছাড়া, প্রকল্পের ঠিকাদারি জেতার ক্ষেত্রে মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে এবং ‘যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো তুলনামূলক উচ্চ মূল্যের।’ এই বিষয়টি ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হলো, বিলম্বিত পেমেন্ট এবং চুক্তি কার্যকর করার অসুবিধা। অভিজ্ঞরা বলেন, এটি ‘ভারতের সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।’ ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজের ক্রয় সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারের তরফ থেকে সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ প্রায়ই বছরের মোট ক্রয় খরচের সমান বা তার বেশি।

এই বিষয়ে ভারতীয় থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সৃজন শুক্লা বলেন, ‘এটি যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করবে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি এবং নিয়ন্ত্রক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা সরকারি চুক্তিগুলোতে।’ তাঁর মতে, ছোট ভারতীয় ব্যবসার জন্যও বকেয়া টাকা একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় তারা স্বল্পমেয়াদি তারল্য সমস্যার কারণে ক্রয় বাজার থেকে বের হয়ে বড় কোম্পানির কাছে ব্যবসা স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে ভারতের বিশ্ব ব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে চুক্তি কার্যকর করার সূচকে দেশের অবস্থান ১৯০ টির মধ্যে ১৬৩, যা দেশটির নেতিবাচক পরিস্থিতির প্রতিফলন। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে Government e-Marketplace, Central Public Procurement Portal এবং সম্প্রতি চালু হওয়ায়। এসব ছাড়াও অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তি পোর্টাল টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনছে—তবু সরকারি সংস্থার পেমেন্ট শৃঙ্খলা এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।

অর্পিতা মুখার্জি বলেন, ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, কিন্তু বকেয়া টাকা, চুক্তি কার্যকরকরণ ও জরিমানা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া, চুক্তিটি কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট—সিইটিএ বিরোধ নিষ্পত্তি বিধি চুক্তি কার্যকর হওয়ার চার বছর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করে না।

সৃজন শুক্লা বলেন, ‘ভারতে ব্যবসা করা দক্ষতার বিষয়, এটি সময়ের সঙ্গে অর্জন করতে হয়। যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোকে ধীরে ধীরে পাবলিক টেন্ডার জেতার কৌশল এবং জটিল নিয়মাবলি মোকাবিলা করতে শিখতে হবে।’

আরও কিছু ছোটখাটো সমস্যা আছে। তবুও বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য ভারতের সরকারি ক্রয় বাজার উন্মুক্ত করা বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের নির্দেশক। এটি দেখায় যে, ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য সংরক্ষিত স্থান বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুলতে চাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তিতেও ভারতের ছাড়ের ইঙ্গিত হতে পারে।

সৃজন শুক্লা বলেন, এই বিষয়টি বিশাল সরকারি ক্রয় চুক্তিতে ‘ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বমানের কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে’—ভারত সরকারের এমন আত্মবিশ্বাসেরও ইঙ্গিত। আশা করা হচ্ছে, আরও বিদেশি কোম্পানির প্রবেশ ভারতের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় আরও জবাবদিহি আনবে এবং ‘পেমেন্ট বিলম্ব ও চুক্তি কার্যকরকরণের অসুবিধা’ কমিয়ে তা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

উত্তরায় বকশীগঞ্জের সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

রিটার্ন না দিলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

ফজলুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে: বিএনপিকে সারজিস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত