Ajker Patrika

চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসায় ধস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১: ৪৪
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য দ্বন্দ্বে কমে গেছে স্যামসাংয়ের মুনাফা। ছবি: সংগৃহীত
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য দ্বন্দ্বে কমে গেছে স্যামসাংয়ের মুনাফা। ছবি: সংগৃহীত

চীনে উন্নত এআই চিপ রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেমোরি চিপ নির্মাতা স্যামসাংয়ের পড়তে হচ্ছে ক্ষতির মুখে। স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স জানিয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের পরিচালন মুনাফা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কমে যেতে পারে, যা প্রায় ৫৬ শতাংশ। এর মূল কারণ হিসেবে এআই চিপ বিক্রির কমে যাওয়া। এতে কোম্পানিটির সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রধান ক্রেতা এনভিডিয়ার কাছে হাই-ব্যান্ডউইথ মেমোরি (এইচবিএম) চিপ সরবরাহে বিলম্বও এই ক্ষতির অন্যতম কারণ।

চলতি বছরের মার্চে স্যামসাং ইঙ্গিত দিয়েছিল, জুনের মধ্যে তাদের সর্বশেষ এইচবিএম ৩ই ১২-লেয়ার চিপে অর্থবহ অগ্রগতি আসতে পারে। কিন্তু আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা এনভিডিয়াকে সরবরাহ নিয়ে কোনো নতুন তথ্য জানায়নি। তারা বলেছে, উন্নত এইচবিএম পণ্যগুলো এখনো ক্রেতাদের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে এবং সরবরাহ প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি এসকে হাইনিক্স এবং মাইক্রন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা বাড়ার ফলে মেমোরি চিপ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে এই দুই কোম্পানি। কিন্তু স্যামসাং তুলনামূলকভাবে চীনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় অগ্রগতির মাত্রা কমে যাচ্ছে। আর চীনে উন্নত চিপ বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব তো আছেই।

এনএইচ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক রিউ ইয়ং-হো বলেন, ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ফিরে পাওয়া। সবকিছু শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে এইচবিএম-এ।’

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিও স্যামসাংয়ের মূল চিপ ও মোবাইল ব্যবসার ভবিষ্যতের পথ উদ্বেগের করে তুলেছে। অনিশ্চিত যাত্রা সামনে নিয়ে কোম্পানিটির মুনাফার হার চাপের মুখে পড়ছে।

বিশ্লেষক রিউ আরও বলেন, ‘প্রতিযোগিতার কারণে এখনই দাম বাড়ানো কঠিন হবে। যে কারণে উচ্চ মুনাফার হার ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে।’

স্যামসাং জানিয়েছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তাদের পরিচালন মুনাফা ৪.৬ ট্রিলিয়ন ওনের বা ৩.৩৬ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে হতে পারে, যেখানে এলএসইজি স্মার্টএস্টিমেট অনুযায়ী পূর্বাভাস ছিল ৬.২ ট্রিলিয়ন ওন। গত ছয় প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন মুনাফা এটি। এক বছর আগে একই সময়ে মুনাফা ছিল ১০.৪ ট্রিলিয়ন ওন বা ৭.৬ বিলিয়ন ডলার এবং আগের প্রান্তিকে ছিল ৬.৭ ট্রিলিয়ন ওন বা ৪.৮৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের তুলনায় আয় বা রেভিনিউ ০.১ শতাংশ কমে ৭৪ ট্রিলিয়ন ওনে বা ৫৪.০৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে ফাইলিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিপ ব্যবসায় বড় ধসের কারণ উল্লেখ করে স্যামসাং জানিয়েছে, চিপ ব্যবসায় মুনাফা কমার পেছনে একটি কারণ ইনভেন্টরির মূল্য পুনর্মূল্যায়ন। তবে এ নিয়ে তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এনভিডিয়ার কাছে বিক্রি না হওয়া এইচবিএম চিপগুলোর কারণে বড় অঙ্কের ইনভেন্টরি ক্ষতিতে যেতে হয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, স্যামসাংয়ের চিপ বিভাগে পরিচালন মুনাফা প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ওনের আশেপাশে হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি কম। তবে একই সময়ে ফোন ব্যবসায় মুনাফা কিছুটা বেড়ে থাকতে পারে।

আজ মঙ্গলবার সকালে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের শেয়ারদর ০.২ শতাংশ কমে যায়, যেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার কসপির বেঞ্চমার্ক সূচক ১.২ শতাংশ বেড়েছে।

স্যামসাং জানিয়েছে, তারা ৩.৯ ট্রিলিয়ন ওন (প্রায় ২.৮৫ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের শেয়ার কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা গত নভেম্বর ঘোষিত ১০ ট্রিলিয়ন ওনের বা ৭.৩০ বিলিয়ন ডলারের বাইব্যাক পরিকল্পনার অংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন ফোন বাজারে আসা এবং এনভিডিয়া ছাড়া অন্যান্য গ্রাহকের কাছে এইচবিএম চিপ বিক্রি বাড়ার ফলে ধীরে ধীরে স্যামসাংয়ের মুনাফা পুনরুদ্ধার হতে পারে।

এদিকে স্যামসাং জানিয়েছে, তাদের ফাউন্ড্রি ব্যবসার আয়ও কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ফলে চীনে উন্নত এআই চিপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে স্যামসাংয়ের। তাদের বিক্রি কমে গেছে এবং ইনভেন্টরির মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে। পাশাপাশি, কারখানার সক্ষমতা বা ইউটিলাইজেশন হারও এখনো অনেক নিচে রয়ে গেছে।

তবে স্যামসাং আশা করছে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাউন্ড্রি ব্যবসায় ইউটিলাইজেশন হারও বাড়বে, ফলে এই খাতে অপারেটিং ক্ষতি কিছুটা কমে আসবে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, আগামী ৩১ জুলাই তারা তাদের প্রতিটি ব্যবসার বিস্তারিত আয় বিবরণী প্রকাশ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত