Ajker Patrika

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগামীকাল শুক্রবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করাই এই বৈঠকের মূল বিষয় বলে জানা গেছে। তবে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, যদি কোনো কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ওয়াশিংটন ভারতের ওপর আরও কঠোর শুল্ক আরোপ করতে পারে।

গতকাল বুধবার (১৩ আগস্ট) ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্কট বেসেন্ট জানান, এ সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের ফলাফলের ওপর। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য আমরা ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছি। আমার মনে হয়, যদি সবকিছু ভালোভাবে না যায়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা বা অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

৪ আগস্ট রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে। আর তা চড়া দামে খোলাবাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে।

ভারত ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সরকারি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে ভারত এ সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আনবে না। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলে, এগুলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি। রাতারাতি তেল কেনা বন্ধ করা এত সহজ নয়।

এর ঠিক দুই দিন পরে (৬ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ফলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে, যা চীনের চেয়ে ২০ শতাংশ ও পাকিস্তানের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ভারত সস্তায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়াতে থাকে, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে ভারতের মোট সরবরাহের প্রায় ৩৫ শতাংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে। রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারত প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি।

ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, একটি প্রধান জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে তাদের ‘কোটি কোটি দরিদ্র নাগরিককে উচ্চমূল্য থেকে রক্ষা করতে’ সবচেয়ে কম দামের তেল কেনা জরুরি।

২৭ আগস্ট থেকে ভারতের ওপর নতুন ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের ওপর একধরনের ‘নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘অবরোধের’ মতো হতে পারে। এর ফলে ভারত থেকে টেক্সটাইল ও গয়নার মতো রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও অর্ধশতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানিই ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির মূল কারণ। তাই ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ থেকে বাঁচতে বিকল্প হিসেবে ভারত তাদের পুরোনো সরবরাহকারী ইরাক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তেল আমদানি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া মোদি-ট্রাম্প সরাসরি আলোচনাকেও শুল্ক কমানোর একটি উপায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। ভারত এখন আলোচনার জন্য ট্রাম্পের কাছে মাথা নত করবে নাকি ঝুঁকি নেবে, তা-ই দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত