Ajker Patrika

বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে হালের নিও কিউএলইডি টেলিভিশন

বিজ্ঞপ্তি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঘরোয়া বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের চেহারা ও ধরনে বিগত দশকগুলোতে বড় মাপের পরিবর্তন এসেছে। ঝিরঝিরে, সাদা-কালো ছবির সেই বোকা বাক্স সরিয়ে এখন আমাদের বসার কিংবা শোয়ার ঘরে স্থান করে নিচ্ছে আধুনিক মডেলের স্লিম ও স্মার্ট সব টিভি। প্রাণবন্ত ছবি আর শব্দের পাশাপাশি নতুন দিনের এই টিভিগুলোতে যুক্ত হচ্ছে এআই, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব স্মার্ট ফিচার। এই খাতে উদ্ভাবন ও রূপান্তরের ধারাকে আরও গতিশীল করেছে ৮কে রেজ্যুলেশন আর নিও কিউএলইডি প্রযুক্তির ডিসপ্লে, যা টেলিভিশন নিয়ে আমাদের আগের সব ধারণাই পাল্টে দিচ্ছে। বাজারে এই আধুনিক টেলিভিশনগুলোর জনপ্রিয়তাও বর্তমানে তুঙ্গে।

৮কে টেলিভিশনের দুর্দান্ত ৭৬৮০ x ৪৩২০ পিক্সেলে স্ক্রিনে একটি চুল কিংবা ঘাসের মতো ছোট্ট জিনিসও স্পষ্ট ও নিখুঁত হয়ে ধরা দেয়। যদিও সরাসরি ৮ কে’তে কনটেন্ট নির্মাণের ধারা এখনো ততটা জনপ্রিয় নয়, আধুনিক ৮কে টিভিগুলোর এআই আপস্কেলিং প্রযুক্তির কারণে কম রেজ্যুলেশনে নির্মিত যেকোনো কনটেন্ট, এমনকি বহু বছরের পুরোনো ক্ল্যাসিক সিনেমাও ঝকঝকে, পরিষ্কার ছবিতে উপভোগ করা যায়। নিও কিউএলইডি টিভির আধুনিক অ্যালগরিদম প্রতিটি ফ্রেমকে আলাদাভাবে যাচাই করে, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে একে প্রায় ৮কে স্ট্যান্ডার্ডে উন্নত করতে পারে। তাই পুরোনো সিনেমা বা অনুষ্ঠান দেখার ক্ষেত্রে এখন অভিজ্ঞতা হবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি আনন্দদায়ক।

এআই প্রযুক্তির জয়জয়কার টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকেও স্পর্শ করেছে। এআই পিকচার কোয়ালিটি এনহ্যান্সারের মতো আধুনিক সুবিধার ফলে পর্দায় দেখানো যেকোনো কনটেন্টের সাপেক্ষে নিজের পিকচার কোয়ালিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তন করে নিতে পারে নতুন দিনের এই টেলিভিশন। হয়তো আপনি টান টান উত্তেজনায় ভরা কোনো থ্রিলার সিরিজ দেখছেন। অন্ধকার করিডরের অ্যাকশন দৃশ্যগুলো আরও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য এই টেলিভিশন নিজ থেকেই আলোছায়ার রহস্যকে আরও ফুটিয়ে তুলবে! অথবা, ধরুন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে ধারণ করা কোনো ডকুমেন্টারি দেখছেন। এই টিভির উজ্জ্বল রং আর জীবন্ত ছবির গুণে আপনার মনে হবে, এই বুঝি টিভি পর্দার ভেতর থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল আদুরে এক খরগোশ ছানা! এমন বিনোদনের আকর্ষণকে “না” বলার উপায় আছে কি?

শুধু ছবিই নয়, শব্দের ক্ষেত্রেও এসেছে নতুনত্ব আর আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়। অ্যাডাপ্টিভ সাউন্ড প্রো’র মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক টেলিভিশনগুলো রুমের অ্যাকুস্টিক যাচাই করে সে অনুসারে সাউন্ড আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে প্রতিটি সংলাপ বা পছন্দের গান উপভোগ করা যায় স্পষ্ট শব্দে। ইতিমধ্যেই নতুন দিনের এই প্রযুক্তির স্বাদ নিয়েছেন, এমন ব্যবহারকারীরা জানান, সারাউন্ড সাউন্ডের মতো অভিজ্ঞতা এর আগে তারা কোথাও পাননি। সেই সঙ্গে এআই পাওয়ার্ড অ্যাকটিভ ভয়েস অ্যামপ্লিফায়ার প্রো’র কারণে টিভিতে ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড নিয়ন্ত্রণ, ভয়েস ক্ল্যারিটি বাড়ানো এবং আশপাশের শব্দ বা অ্যাম্বিয়েন্ট নয়েজ কমানোর মাধ্যমে শব্দের মান বাড়ানোর সুবিধাও পাওয়া যায়।

নতুন দিনের এই টিভিগুলোর আরও রয়েছে ভয়েস রিকগনিশন সুবিধা, যার মাধ্যমে কথা বলে সহজেই খুঁজে নেওয়া যাবে পছন্দের কোনো চ্যানেল, সিনেমা, অ্যাপ। ছুটির দিনগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত সিরিজ দেখতে দেখতে চোখ লেগে আসলে উজ্জ্বলতা বা ভলিউম কমানোর জন্য এখন আর কষ্ট করে বাটন খুঁজতে হবে না, ভয়েস কমান্ডেই কাজ হয়ে যাবে!

টিভিতে থাকা স্মার্ট ইন্টিগ্রেশন ফিচারের মাধ্যমে এখন টিভি, এসি, রেফ্রিজারেটর, কিংবা ওয়াশিং মেশিনের পাশাপাশি বাড়ির বিভিন্ন লাইট, সিকিউরিটি ক্যামেরা, থার্মোস্ট্যাট-সহ নানা কিছু একটি কমান্ড সেন্টার থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তা ছাড়া এর স্মার্ট সিস্টেম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন অভ্যাস ও প্রয়োজনীয়তা বুঝে নিতে পারে, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিস্টেমের বিভিন্ন রেকোমেন্ডেশন অনুসরণ করে ব্যবহারকারীরা বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনা সহ নানা সুবিধাও উপভোগ করতে পারেন।

উন্নত সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছে মাল্টি ভিউ ফিচার, যার মাধ্যমে টিভি স্ক্রিনে পাশাপাশি একাধিক কনটেন্ট এক সঙ্গে উপভোগ করা যায়। ধরুন, আপনার প্রিয় ফুটবল দলটি লিগ কাপের ফাইনাল খেলছে, আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বসার ঘরে রীতিমতো আসর জমিয়েছেন আপনি। ম্যাচের প্রতিটা পাস, প্রতিটা শট আপনার দেখা চাই; ওদিকে আবার অফিশিয়াল ফ্যান গ্রুপে ভার্চ্যুয়াল বন্ধুরা কী শেয়ার করছে–তাও সঙ্গে সঙ্গেই জানা চাই। এমন সময়ের সেরা সমাধান হতে পারে এই মাল্টি ভিউ ফিচার! খেলা দেখার পাশাপাশি গেমিংয়ের ভক্তদের জন্যও আছে সুখবর, কারণ হালের এই ৮কে নিও কিউএলইডি টেলিভিশনগুলো গেমারদের সেরা অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে দিচ্ছে ২৪০ হার্টজ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেটের নজরকাড়া ছবি। গেমের পর্দা থেকে প্রতিটি চরিত্র যেন বাস্তবে উঠে আসছে–এমন স্মুথ আর রেস্পনসিভ গেমিংয়ের জন্য নিও কিউএলইডি টিভির বিকল্প নেই বললেই চলে।

প্রশ্ন জাগতেই পারে–এই টিভি আপনার জীবনযাত্রার মান কীভাবে উন্নত করবে? আধুনিক ৮কে নিও কিউএলইডি টিভির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি ব্যবহারের জন্য আপনাকে কোনো অভ্যাসের পরিবর্তন বা নতুন কোনো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে না। বরং এটিই আপনার জীবনযাত্রা, আপনার নানা অভ্যাস ও প্রয়োজনীয়তাকে বুঝে নেবে, এবং সে অনুযায়ী বিশেষায়িত সমাধান দেবে। দেশের বাজারে দুর্দান্ত ডিজাইনে নির্মিত এমন নিও কিউএলইডি টিভি নিয়ে এসেছে স্যামসাংয়ের মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ড, যা আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের বিনোদনের এক অনন্য ধারণাও তৈরি করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই টেলিভিশনগুলোর জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের গ্রাহকদের “নতুন কিছু”র চাহিদার জানান দেয় এবং পরিবর্তনকে সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর মানসিকতা তুলে ধরে।

টিভি বিনোদনের ক্ষেত্রে এই “নতুনত্বের” সংজ্ঞা তৈরি করছে ৮কে রেজ্যুলেশন, ও এআই সুবিধা-সহ নানা আধুনিক ফিচার সংবলিত নিও কিউএলইডি টেলিভিশন। পরিবারের সবাই মিলে রাতের খাবারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রিয় সময় কাটাতে, কিংবা স্রেফ নিজের রুমে একাকী সময় উপভোগ করতে একটা টিভি আমাদের লাগেই। আমাদের গল্পগুলোই টিভি পর্দায় অন্য কারও উপস্থাপনায়, অন্য কারও অভিনয়ে আমরা দেখতে চাই, নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে উপভোগ করতে চাই। দেখার নতুন চোখ, শোনার নতুন কান আর ভাবার নতুন মন নিয়ে আগামীর নতুন বিনোদনের চেহারাকে পুরোপুরি চিনতে চাইলে আপনিও তাই বাসায় নিয়ে আসতে পারেন ৮কে নিও কিউএলইডি প্রযুক্তির একটা নতুন টেলিভিশন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরানে বিপুল ঋণ রেখে বিলুপ্ত হলো সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট বেসরকারি ব্যাংক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টাকা ছাপিয়েও আয়েন্দে ব্যাংক রক্ষা করতে পারল না ইরান সরকার। ছবি: এএফপি
টাকা ছাপিয়েও আয়েন্দে ব্যাংক রক্ষা করতে পারল না ইরান সরকার। ছবি: এএফপি

মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট এবং পশ্চিমা বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে, ইরানের বৃহৎ বেসরকারি ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর অন্যতম ‘আয়েন্দে ব্যাংক’ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ‘ব্যাংক মেল্লি’-এর সঙ্গে এটিকে একীভূত করে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ইরানের ব্যাংক খাতের গভীর অস্থিরতাকে প্রকট করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই পরিস্থিতির চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে সাধারণ নাগরিকদের।

গত বৃহস্পতিবার ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করে, দেশটির অন্যতম ধনী পরিবারের মালিকানাধীন বেসরকারি আয়েন্দে ব্যাংক বিলুপ্ত করা হবে এবং এটি রাষ্ট্র-পরিচালিত ব্যাংক মেল্লির সঙ্গে একীভূত হবে। রোববার থেকে আয়েন্দে-এর শাখাগুলো ব্যাংক মেল্লির শাখা হিসেবে কাজ করবে। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তাঁদের অ্যাকাউন্ট ও আমানত নিরাপদ রয়েছে এবং সমস্ত চুক্তি আগের শর্তেই বহাল থাকবে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহজনক পরিচালনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বারবার হস্তক্ষেপের কারণে আয়েন্দে ব্যাংকের ওপর যে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা চেপেছে, তা ইরানের সামষ্টিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

বিশেষজ্ঞরা আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, ২০১০-এর দশকে দুর্নীতি এবং দুর্বল তদারকির কারণে ইরানের ব্যাংকিং খাতে যে সংকট তৈরি হয়, তার মধ্যেই আয়েন্দে ব্যাংকের উত্থান। সে সময় জাতিসংঘে পরমাণু কর্মসূচির নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান টালমাটাল ছিল। এই সুযোগে সামরিক বা ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত শত শত লাইসেন্সবিহীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারা দেশে গজিয়ে ওঠে। তারা আমানতকারীদের আকৃষ্ট করতে অস্বাভাবিক উচ্চ হারে সুদের লোভ দেখাত, কিন্তু পরবর্তীতে অনেক গ্রাহক আমানতের টাকা তুলতেই ব্যর্থ হন।

২০১৭ সালের মধ্যে সরকার এই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো অভ্যন্তরীণ ঋণ বিতরণ অর্থাৎ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই ঋণ নেওয়া এবং স্থাবর সম্পত্তিতে অর্থ বিনিয়োগের কারণে তহবিল প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছিল। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ মেটানোর জন্য সরকারকে নতুন করে টাকা ছাপাতে হয়েছে, যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে এবং সাধারণ ইরানিদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

আয়েন্দে ব্যাংক ২০১৩ সালে ‘তাত ব্যাংক’ এবং দুটি রাষ্ট্র-সংযুক্ত আর্থিক সত্তা—সালেহিন ক্রেডিট ইনস্টিটিউশন ও আতি ক্রেডিট ইনস্টিটিউশন—একীভূত হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী আলি আনসারি, যার পরিবার ইরানের অন্যতম ধনী পরিবার হিসেবে পরিচিত।

আয়েন্দে ব্যাংক বহু বছর ধরে রাষ্ট্রের নজরদারিতে ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তীতে শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাধিকার বাতিল করে। সরকারি হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, ব্যাংকটি টিকে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে।

বিলুপ্তির ঘোষণায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আয়েন্দে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৫ কোয়াড্রিলিয়ন রিয়াল (বর্তমান খোলা বাজারে বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪৬৭ কোটি ডলার), যেখানে জনগণের আমানত ছিল ২ দশমিক ৫ কোয়াড্রিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ২৩৪ কোটি ডলার)।

আইন অনুযায়ী, আয়েন্দে ব্যাংক তার প্রমাণিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ২০০ ট্রিলিয়ন রিয়াল (১৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার) ঋণ দিতে পারত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকটি বছরের পর বছর সেই পরিমাণের প্রায় ১০ গুণ বেশি অর্থ ব্যক্তি ও বিভিন্ন সত্তাকে (নামে-বেনামে কোম্পানি) ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৩ কোয়াড্রিলিয়ন রিয়াল (১২১ কোটি ডলার) সরাসরি আয়েন্দে ব্যাংক এবং এর অভ্যন্তরীণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অল্প কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। তবে এই সুবিধাভোগীদের পরিচয় প্রকাশ করতে কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।

অর্থনীতিবিদ বিজান খাজেহপুর উল্লেখ করেছেন, বেশির ভাগ ঋণই অনাদায়ি, সেগুলো উদ্ধারের সম্ভাবনাও কম। তাঁর মতে, ‘ক্ষমতার নেটওয়ার্কের মধ্যে কোনো নিয়ন নীতির তোয়াক্কা না করে লেনদেন, এবং জামানত সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করেই গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার ফলেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের দুর্বল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত ঋণ (Overdrafts) নিয়েছে তার ৪২ শতাংশই পেয়েছে আয়েন্দে ব্যাংক। পুরো ব্যাংক খাতের মূলধন অসামঞ্জস্যের ৪১ শতাংশের কারণও এই ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) ন্যূনতম ৮ শতাংশ হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও আয়েন্দে-এর অনুপাত ছিল ঋণাত্মক ৬০০ শতাংশ! এর বিলুপ্তি ইরানের ব্যাংক খাতের গড় সিএআর ১.৩৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করবে।

আয়েন্দে ব্যাংকের বিলুপ্তির ঘোষণা আসে বিচার বিভাগের প্রধান, কট্টরপন্থী ধর্মগুরু গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিনকে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়ার একদিন পর। এই বিলুপ্তি নিয়ে কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা, যারা সংস্কারপন্থীদের অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতির বিরোধী, তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবফ এই বিলুপ্তিকে ‘দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনা ব্যবস্থার জন্য একটি বিরাট সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আয়েন্দে-এর পতনের ফলে এর সম্পত্তি—যার মধ্যে পশ্চিম তেহরানে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শপিং মল ইরান মলও রয়েছে—সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এই বিপুল সম্পত্তি বিক্রি করা সময়সাপেক্ষ।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিপুল লোকসানের কারণে রাষ্ট্র এবং ব্যাংক মেল্লিকে মোট ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের হিসাব মেটাতে হবে। এই ঘাটতি পূরণের একটি অংশের সংস্থান করতে টাকা ছাপাতে হবে। এই অতিরিক্ত টাকা ছাপানোই মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ, যা বর্তমানে ৪০ শতাংশের বেশি এবং কয়েক দশক ধরে বিশ্বের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম।

সহজ কথায়, আগামী মাস ও বছরগুলোতে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কোটি কোটি ইরানিকে এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

এদিকে, আয়েন্দে-এর প্রতিষ্ঠাতা আনসারি বিবৃতিতে দাবি করেছেন, ব্যাংকের দেউলিয়াত্ব ‘ব্যাংকটি তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ও নীতির ফল’। তাঁর দাবি, তিনি জনকল্যাণের জন্য তাঁর সব শক্তি ও সক্ষমতা উৎসর্গ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
কোম্পানি লোকসানে, তবু শেয়ারের লেনদেন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৪৬টি কোম্পানি বহু বছর ধরে লোকসানে চলছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ১৩টি কোম্পানি টানা এক দশক কিংবা এর বেশি সময় ধরে মুনাফা করতে পারেনি। এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বাজারে কেনাবেচা হচ্ছে—কখনো কখনো দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষেও উঠে আসে।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, এই লোকসানি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির পুঞ্জীভূত লোকসান প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি কোম্পানিগুলোর হিসাব এখনো অজানা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি, সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করে না। ফলে তাদের স্থান হয়েছে ‘জাঙ্ক’ বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

নিয়ম অনুযায়ী, জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কেনাবেচায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেই সতর্কতা খুব একটা দেখা যায় না।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের দেনা সম্পদের চেয়ে বেশি, তাদের বাজারে রাখা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপজ্জনক। এমন কোম্পানিগুলোকে হয় তালিকা থেকে বাদ দেওয়া (ডিলিস্টিং) উচিত, নয়তো লিকুইডেশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের অন্তত কিছু অর্থ ফেরানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ডিলিস্টিং মানে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারকে সাধারণ বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়া। তখন শেয়ারহোল্ডাররা কাগজে শেয়ারধারী থাকলেও তা বেচাকেনা করা যায় কেবল ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) বাজারে; যেখানে লেনদেন সীমিত হলেও ঝুঁকি অনেক বেশি।

ডিএসইর নিয়মে বলা আছে, কোনো কোম্পানি টানা তিন বছর এজিএম না করলে, পাঁচ বছর লভ্যাংশ না দিলে কিংবা তিন বছর উৎপাদন বন্ধ রাখলে সেটি ডিলিস্ট করা যেতে পারে। তবু এই প্রক্রিয়া খুব কমই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে ডিএসইর তালিকাভুক্ত এসব দুর্বল কোম্পানির মধ্যে ১৩টি ১০ বছর কিংবা এর বেশি সময় ধরে লোকসানে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, পিপলস লিজিং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, জিল বাংলা সুগার মিলস, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, জুট স্পিনার্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি সার্ভিসেস ও অ্যাটলাস বাংলাদেশ।

এ ছাড়া আরও ৩৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত পাঁচ বছর ধরে টানা লোকসানে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, কেয়া কসমেটিকস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আরএসআরএম স্টিল, সুরিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।

২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৭টি কোম্পানির জমা লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তো এখন কোনো আর্থিক তথ্যই প্রকাশ করে না। অ্যাটলাস বাংলাদেশ ২০২১ সালের পর থেকে ডিএসই ওয়েবসাইটে তাদের যোগাযোগের তথ্য আপডেট করেনি। একই অবস্থা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও।

সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্টক মার্কেটে শত শত কোম্পানি থাকলেও আসলে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি খুবই কম। বিনিয়োগযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাব এতটাই প্রকট যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিকল্প পাচ্ছে না।’

আসিফ খান আরও বলেন, ‘যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের আর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে তাদের ডিলিস্ট বা লিকুইডেট করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ফেরত পান।’

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই টক্সিক স্টকগুলো অনেক আগে ডিলিস্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে, খারাপ কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে ফেলে রাখলেই দায়িত্ব শেষ।’

সাইফুল ইসলামের মতে, বিএসইসি ও ডিএসইর এখন উচিত বাজার পরিষ্কার করা এবং দীর্ঘদিনের লোকসানি কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বাজার থেকে বাদ দেওয়া।

যাদের ভবিষ্যৎ নেই, তাদের রেখে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া অন্যায়।

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৪০০ কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগযোগ্যের সংখ্যা খুব কম। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড বা বিমা কোম্পানির মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিকল্প সীমিত। গত মে মাসে বিএসইসি সব জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিএসই যদি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়, কমিশন অবশ্যই সহযোগিতা করবে। প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে ডিএসইর এই ক্ষমতা রয়েছে।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডিলিস্ট করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তা ছাড়া ডিএসই এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেট করার আইনি ক্ষমতা পায়নি। আমরা সেই ক্ষমতা যুক্ত করতে আইনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ড মার্কেটে জোর

বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

  • ব্যাংকের বিকল্প উৎস হচ্ছে বন্ড মার্কেট।
  • বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে।
  • আগামী বছরেই বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর পরিকল্পনা।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ১৩
বন্ধ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংকঋণের পথ

দেশের ব্যাংকগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ বন্ধ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বছরই ব্যাংকের পরিবর্তে শুধু বন্ড মার্কেট থেকেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালু করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন একটি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশও এই চর্চা শুরু করতে চায়। এ জন্যই ব্যাংকের পরিবর্তে বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নির্দেশনায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পদ্ধতি, প্রসার এবং ঝুঁকিসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সরকারও বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ এবং সুপারিশসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেছে বিশেষ এই কমিটি। বৈঠকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। গভর্নর দেশে না থাকায় ভার্চুয়ালি নানা পরামর্শ দিয়েছেন কমিটিকে। তাঁর পরামর্শের আলোকে বন্ড মার্কেটের নীতিমালা, ঝুঁকি, নিরাপত্তা, গ্রাহকের স্বার্থ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গভর্নর দেশে ফিরলে প্রতিবেদন আকারে সুপারিশগুলো জমা দেওয়া হবে। তাঁর কাছে থেকে সংযোজন, সংশোধনী এবং পরামর্শ এলে তা ঠিক করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে এবং নিয়মমাফিক তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে সুপারিশমালা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন নাগাদ বন্ড মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন শুরু হবে।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রজেক্ট করা সম্ভব। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে।

বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট এখনো উন্নত হয়নি জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকারি বন্ড সেগমেন্ট থাকলেও সেখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ খুবই কম, আর শেয়ারবাজার প্রায় নগণ্য। ফলে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রকল্পগুলো ঝুঁকি ভাগাভাগি না করে শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতে ঋণখেলাপি ও তহবিল অপব্যবহারের ঘটনা ঘটছে, যা দেশের জন্য বড় ট্র্যাজেডি। প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকি ভাগাভাগি করতে হলে মানুষকে বন্ড, ডিবেঞ্চার ও শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক থেকে শুধু ঋণ নেওয়া এবং পরে তা ভুল খাতে ব্যবহার করা কোনো সমাধান নয়। তাই ক্যাপিটাল মার্কেটে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদেরও বুঝতে হবে যে এখানে ঝুঁকি যেমন আছে, তেমনি লভ্যাংশ বা মুনাফার সম্ভাবনাও আছে।

বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড রিকমেন্ডেশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। সেই প্রতিবেদনে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নের লক্ষ্যেই গঠনমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ , চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাংকগুলোকে নিয়ে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় সেমিনারের কথা বলা হয়েছে। সেই সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ৭ অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন ও প্রসারে গঠিত কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কাজ চলছে।

পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন তথা পুঁজি উত্তোলনের সুযোগকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকঋণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকঋণের পরিবর্তে বন্ড ও সিকিউরিটিজ ইস্যুর মাধ্যমে অর্থায়নের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগে সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা ও বন্ড মার্কেটের তারল্য বৃদ্ধি করা হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদে সরকারের বন্ড ইস্যু করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনও চাইলে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যু করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও মাসরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ বন্ড মার্কেটে একেবারে সীমিত। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া যায় না বললেই চলে। প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক শিল্পায়ন এবং বড় শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন জরুরি। সে জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন প্রয়োজন। এটি যত দ্রুত প্রসার হবে, তত বেশি লাভ হবে। বর্তমানে সরকার কিছু বন্ড ছাড়ে, সেটা বাড়াতে হবে। বেসরকারি কোম্পানিকে এগিয়ে আসত হবে। আর বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে, সেটা মার্কেটেও রয়েছে। এ জন্য সংস্কার ও নীতিমালা করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে মাত্র ১৬টি করপোরেট বন্ড চালু রয়েছে। আর সুকুক বন্ড রয়েছে ২৩৩টি। সরকারি বন্ড সেকেন্ডারি মার্কেটে আসেনি। সব মিলিয়ে স্টক মার্কেটের বন্ডের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ইক্যুইটি ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা, সিকিউরিটিজ ২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা পাওয়া যায়। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে সরকারি বন্ড, করপোরেট বন্ড এবং অন্যান্য বন্ড রয়েছে। বন্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সরকার, ব্যাংক বা করপোরেশন। বন্ড কেনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। বন্ডের জন্য ন্যূনতম এক লাখ টাকা জমা রাখতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

  • টিক সাইজ এক পয়সা নির্ধারণ।
  • ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এক টাকার নিচের শেয়ার লেনদেনে নতুন নিয়ম

দাম এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নতুন নিয়মে এই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা ‘টিক সাইজ’ নির্ধারণ করা হয়েছে এক পয়সা, যা ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় ডিএসই। এর আগে গত রোববার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়।

বর্তমানে সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ১০ পয়সা নির্ধারিত রয়েছে। সাম্প্রতিক পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার ৯০ পয়সায় নেমে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ার দাম বাড়া ও কমার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, ডিএসইর লেনদেনবিধি অনুযায়ী, শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের ধাপ বা টিক সাইজ ১০ পয়সা। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম একবারে ১০ পয়সার কমে ওঠানামা করতে পারে না।

অন্যদিকে সার্কিট ব্রেকার বা দৈনিক মূল্যবৃদ্ধি-পতনের সীমা রয়েছে ১০ শতাংশ। ৯০ পয়সা দামের শেয়ারে ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা। কিন্তু টিক সাইজ যেহেতু ১০ পয়সা, তাই ৯ পয়সা বাড়া বা কমার সুযোগ নেই। ১০ পয়সা বাড়িয়ে শেয়ারদর ১ টাকা বা ১০ পয়সা কমিয়ে ৮০ পয়সা করা সম্ভব নয়; তাহলে সার্কিট লিমিট ভাঙবে, নিয়মের লঙ্ঘন হবে। ফলে এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম না পারছে বাড়তে, না পারছে কমতে। লেনদেন কার্যত ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর ডিএসই থেকে এক টাকার নিচে নেমে যাওয়া শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে টিক সাইজে পরিবর্তন আনা হলো।

ডিএসই জানায়, নতুন টিক সাইজ কার্যকর হলে দামের সূক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব হবে, মূল্য নির্ধারণ আরও বাজারবান্ধব হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজার কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আসবে।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারদর এক টাকার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে এবং এরই মধ্যেই দুটি কোম্পানির দাম এক টাকার নিচে নেমে গেছে। পুরোনো ১০ পয়সা টিক সাইজের কারণে এই শেয়ারগুলো সার্কিট ব্রেকারের সীমায় আটকে ছিল, ফলে বাজারে স্বাভাবিকভাবে দরপতন বা উত্থান সম্ভব হচ্ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে ডিএসই অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯-এর ১৮ নম্বর প্রবিধান অনুযায়ী নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৯, ৮৮, ৮৭, ৮৬, ৮৫ পয়সা ইত্যাদি সূক্ষ্ম দামে অর্ডার দিতে পারবেন। এতে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবধান কমবে, তারল্য বাড়বে এবং লেনদেন ব্যয়ও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত