Ajker Patrika

বিকল্প আমদানি উৎস ও বাজার না পেলে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা

রেজাউর রহিম, ঢাকা 
বিকল্প আমদানি উৎস ও বাজার না পেলে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা

পোশাক পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ৭০০ বিলিয়ন (৭০ হাজার কোটি) ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশের দখলে আছে ৩ হাজার কোটি ডলারের কম। করোনা পরিস্থিতিতে এই রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধাক্কা খেয়েছে। আগে চীনের পরই একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান থাকলেও এখন সে অবস্থান ভিয়েতনামের দখলে। এ অবস্থায় পোশাক রপ্তানিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলে বিকল্প আমদানি উৎস ও রপ্তানি গন্তব্য খোঁজার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

করোনা পরিস্থিতির কারণে সব দেশেরই অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পরিস্থিতি সামলাতে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও গত বছর নিজের অবস্থান হারায় বাংলাদেশ। করোনায় সবাই যখন পোশাক রপ্তানি নিয়ে ধুঁকেছে, তখন ভিয়েতনাম পোশাক পণ্যের বাজারে নিজেদের হিস্যা বাড়িয়েছে। পণ্য, আমদানি উৎস ও রপ্তানি গন্তব্যে বৈচিত্র্য থাকার কারণেই দেশটি এই খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এর ঠিক বিপরীত অবস্থা বাংলাদেশের। 

বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে আয় এখনো কিছু দেশ ও অঞ্চলে বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা প্রাপ্তির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর দেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানির ৬০ শতাংশই হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে, যেখানে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে কোটা সুবিধা দিত। পরে তা বাতিল হলে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) দিত। কিন্তু বর্তমানে তাও বন্ধ। এ নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা হলেও এখনো কোনো ফল আসেনি। 

দেশের মোট রপ্তানির বড় অংশই তৈরি পোশাক পণ্য। দীর্ঘদিন এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলেও গত বছর এক ধাপ নেমে যায়। দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে ভিয়েতনাম। এই অবনমনের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই বাজারের ওপর অতিনির্ভরশীলতার কথা। একই সঙ্গে একক দেশ হিসেবে মোট পোশাক রপ্তানির বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা কম থাকাকেও কারণ হিসেবে দেখছেন তাঁরা। 

তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও সুতা, বোতাম, জিপার থেকে শুরু করে নানা কাঁচামাল এখনো বাইরে থেকেই আমদানি করতে হয়বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীন সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। মোট বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির প্রায় ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল চীনের। ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ভিয়েতনামের অবস্থান দ্বিতীয়। আর বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে শীর্ষ অবস্থানের সঙ্গে তফাৎটি বেশ স্পষ্ট। এ অবস্থায় নিজেদের অবস্থান ফিরে পেতে বাংলাদেশকে ইউরোপের বাজারের দিকেই তাকাতে হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষে এই কয়েক দিন আগেই ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইইউয়ের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেপ বররেল আশ্বস্তও করেন। কিন্তু সংশয় কাটেনি। 

বাংলাদেশ ইইউভুক্ত দেশগুলোতে এভরিথিং বাট নট আর্মস (ইবিএ) স্কিমের আওতায় ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। তবে ইইউ ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন জিএসপি প্লাস নীতি প্রণয়ন করছে। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশের জন্য ইবিএ সুবিধা অব্যাহত না থাকারও শঙ্কা রয়েছে। এখনো এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। যদিও বিশ্বের আটটি দেশ এরই মধ্যে এই সুবিধা পাচ্ছে, যার মধ্যে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও রয়েছে। 

জিএসপি প্লাস পেতে কী চাই
জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি শর্ত পরিপালন করতে হবে। শর্তের শুরুতেই রয়েছে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক পূরণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে, তা হলো ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ। উদাহরণ হিসেবে সুতার কথা বলা যায়। শর্ত অনুযায়ী, মোট পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা দ্বারা তৈরি হতে হবে। নিট পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই শর্ত পূরণ করলেও ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ৫০ শতাংশ। বাকি ৫০ শতাংশ আসছে আমদানি উৎস থেকে। 

জিএসপি প্লাসের শর্ত অনুযায়ী, একটি দেশের শীর্ষ সাতটি পণ্যের মোট রপ্তানিমূল্য জিএসপির আওতায় রপ্তানি করা পণ্যের মোট মূল্যের ৭৫ শতাংশ হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৯৫ শতাংশই আসছে জিএসপির আওতায় পণ্য রপ্তানি থেকে। জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এ সূচকে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। 

জিএসপি প্লাসের জন্য আরেকটি শর্তে বলা হচ্ছে, ইইউ থেকে এলডিসির যেসব দেশ জিএসপি সুবিধা পায়, তার ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি হিস্যা হলে ওই দেশ জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্য হবে না। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা বর্তমানে প্রায় ২৬ শতাংশ। ফলে এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। 

বিদ্যমান আমদানি উৎস ও রপ্তানি গন্তব্যগুলোর বিকল্প খুঁজে বের করতে না পারলে সামনে রপ্তানি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বেরয়েছে আরও সংকট
এ তো গেল জিএসপি প্লাসের শর্ত ও এর বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়টি। সঙ্গে রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশের তালিকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেরিয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যদিও এই তালিকা থেকে পুরোপুরি বের হতে বাংলাদেশের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই উত্তরণ বেশ কিছু সুবিধাও হারানোর শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, তা আর পাওয়া যাবে না। যদিও ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে। তবে তা তারা দেবে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধার আওতায়। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাওয়া জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় ঢুকতে না পারলে আর মাত্র ৭ বছর এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। 

কথা হলো ইউরোপের বাজারের দিকে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতটি কেন এভাবে তাকিয়ে আছে? কারণ, এটিই একমাত্র না হলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি করা পোশাকের ৬২ শতাংশ ও মোট রপ্তানির ৫৬ শতাংশের গন্তব্য ইইউ ও যুক্তরাজ্য। ফলে অঞ্চলটিতে চলমান শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা না থাকলে তা রপ্তানি বাণিজ্য এবং প্রতিযোগী সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

বিকল্প প্রয়োজন
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় থাকতে হলে বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। আর এ ক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে আমদানি উৎসের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দিচ্ছেন খাতটির নেতারা। 

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীএ বিষয়ে ইএবি সভাপতি ও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং বাজার সম্প্রসারণে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প আমদানি উৎস ও রপ্তানি গন্তব্য খোঁজার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল আমদানির জন্য আমাদের চীন, ভিয়েতনামের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশে থাকা দূতাবাসগুলোকে নতুন বাজার সৃষ্টির কাজে লাগাতে হবে।’ 

তবে আমদানি উৎসের বিকল্প খোঁজার পাশাপাশি দেশেই তৈরি পোশাক উৎপাদনের জন্য দরকারি কাঁচামাল উৎপাদনের ওপর জোর দিলেন বিজিএমইএর এ সাবেক সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহারের বিষয়টির ওপর আমাদের জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই কাঁচামাল আমদানির ব্যয় মেটাতে চলে যায়। এতে অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে।’ 

দেশেই কাঁচামাল তৈরির বিষয়টি আবার জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার শর্তের মধ্যে রয়েছে। যে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের কথা এতে রয়েছে, সেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাঁচামালের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আছে। ফলে এ ক্ষেত্রে মনোযোগ দিলে সাত বছর পর জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাও অনেকটা কেটে যাবে। 

একই সঙ্গে ইউরোপের বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজার খোঁজার ওপরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ী নতারা। পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বাজারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে নীতি সহায়তার পাশাপাশি জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার কোনো বিকল্প নেই বলেও মত তাঁদের। 

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিমএ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হবে। কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের জন্য চীনসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। 

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তবে কোন দেশগুলোর দিকে নজর দিতে হবে? শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা জোরদার করতে হবে। এসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে ‘অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসি’ চালাতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সাবেক রাষ্ট্রদূত, যারা বাংলাদেশে ছিলেন, তাঁদের মাধ্যমে দেশের পোশাক খাতের অবস্থান তুলে ধরাও জরুরি। পাশাপাশি জিএসপি প্লাসের নতুন নীতিমালায় যাতে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য বাংলাদেশকে এখন থেকেই কূটনৈতিকভাবে ইইউর সঙ্গে দেন-দরবার জোরালো করতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপের বাজারে স্থায়ীভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে ইইউভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকে যেতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত