Ajker Patrika

ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের চেয়ে রেমিট্যান্স রমরমা, আরব-ইউরোপে অভিবাসনে নজর

ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বিপুল জনগণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এই জনগোষ্ঠী প্রতিবছর দেশটিতে এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠায় যে, তা প্রায়ই দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়। আর তাই নয়াদিল্লি আরও বেশি বেশি বৈধভাবে অভিবাসনের লক্ষ্যে স্পষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ট্রিবিউন ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এমনটাই জানা গেছে।

গত বছরের ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতের অভিবাসন সংক্রান্ত নীতি ও অবস্থান তুলে ধরেন। এটি ছিল ভারতের বৈশ্বিক শক্তি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দেশটির ভূমিকা বৃদ্ধির এক সুস্পষ্ট পদক্ষেপ। এর মূল উদ্দেশ্য, ভারত তার দক্ষ এবং অর্ধ দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য বিশ্ব বাজারে অধিক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়, যাতে তাদের দক্ষতা পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হয়।

এর পাশাপাশি, ভারত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে সে সময়। আর তা হলো, ভারত দেশের অভ্যন্তরে ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজ নাগরিকদের অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ এবং সেই সঙ্গে তাদের বৈধ অভিবাসনের সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে চায়।

ভারত সরকার বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা সাড়ে ৩ কোটি ভারতীয় অভিবাসীকে এক শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ, তারাই ভারতকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জনে সাহায্য করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে আসা রেমিট্যান্স দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারত ১২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। যা কিনা ওই বছরের দেশটিতে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে ২২০ শতাংশ বেশি। আর ২০২৪ সালে ভারতের রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল (আনুমানিক) ১২৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, প্রতিবছরই ভারতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পায় ভারত সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং যুক্তরাজ্য অন্যতম।

নতুন শতকের শুরু থেকেই ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে ২০০৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ভাটা দেখা যায়। এরপর ২০১০ সাল থেকে আবার ভারত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পেতে শুরু করে। সে বছর দেশটি বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ একাই দখল করে। ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে উত্থানপতন দেখা যায়। ২০২১ সালে দেশটি রেমিট্যান্স পায় বৈশ্বিক প্রবাহের ১১ দশমিক ২ শতাংশ।

এরপর ২০২২ সাল থেকে ক্রমেই বাড়তে শুরু করে। সে বছর বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ পায় ভারত। তার পরের বছর ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রেমিট্যান্স একাই নিয়ে যায় ভারত।

এ ছাড়া, ভারত সরকার বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত আনার বিষয়ে একটি স্পষ্ট নীতি গ্রহণ করেছে। জয়শঙ্কর পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, ভারত বিদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত, তবে তাদের ফেরত আসা কেবল বৈধভাবে হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে আলোচনা করে এই নীতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতের নীতি ‘অটল ও নীতিগত’ এবং এই নীতি দেশের সুনাম রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের সরকার অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে এ ধরনের অভিবাসনকে একটি বিপজ্জনক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ, এটি কেবল বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করে না, বরং এটি দেশের জাতীয় সুরক্ষার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এর বিপরীতে, ভারত বৈধ অভিবাসনকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে যে, বৈশ্বিক কর্মক্ষেত্রের জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ভারতীয় পেশাজীবীদের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার।

ভারতীয় অভিবাসীরা বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ফরচুন—৫০০ কোম্পানিগুলোর নেতৃত্বে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও রয়েছেন। এর মধ্যে গুগলের সুন্দর পিচাই এবং এবং মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা। এ ছাড়া, বিশ্ব ব্যাংকে অজয় বাঙ্গা এবং গীতা গোপীনাথও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

এদিকে, ভারত সরকার গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অভিবাসন চুক্তি এবং শ্রম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিগুলো মূলত শ্রমশক্তি ব্যবস্থাপনা, দক্ষ কর্মী নিয়ে কাজ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশেষ করে, ভারত বিভিন্ন দেশ যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জর্ডান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, পর্তুগাল, জাপানসহ আরও বেশ কিছু দেশের সঙ্গে মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে।

এ ছাড়া, ভারত সরকার দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষা, গবেষণা এবং পেশাদারদের জন্য সহজ ভিসা প্রক্রিয়া তৈরি করার ব্যাপারেও কাজ করছে। এই ব্যবস্থা শুধু বৈধ অভিবাসনই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও প্রতিভা প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। ভারতের অভিবাসন নীতি বর্তমানে আরও শক্তিশালী ও সংহত হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ভারতের বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং দেশের মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান ও সুযোগ সৃষ্টি করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত