Ajker Patrika

ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুযোগ: পুনঃ তফসিলের আবেদন ১২৫০, সুদ মওকুফ চায় আড়াই হাজার

  • পুনঃ তফসিলের ৩০০ আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে কমিটি।
  • চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চলতি মাসে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হবে।
  • সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকার ঋণ হলে পুনর্গঠনের আবেদন করতে পারবে।
  • সুদ মওকুফে ২৫০০ আবেদন, নিজস্ব নীতিতে নিষ্পত্তি করবে ব্যাংক
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১: ২০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য সরকারি ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ সুযোগ নিতে ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। এই আবেদনগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলতি মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হবে।

এদিকে সুদ মওকুফের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতি অনুযায়ী এসব আবেদন নিষ্পত্তি করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনা মহামারি, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য আমদানি, চামড়াসহ বৃহৎ শিল্প খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃ তফসিলের এই বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তম করপোরেট ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে মাত্র ১ শতাংশ এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ৩০০ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুবিধা দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধার আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ১ শতাংশ এককালীন (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে সর্বোচ্চ তিন বছরের গ্রেস পিরিয়ডে ১৫ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেতে পারে। সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকার ঋণ হলে পুনর্গঠনের আবেদনযোগ্য। কিন্তু ইচ্ছাকৃত খেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠনের (পুনঃ তফসিল) সুযোগ পাবে না। বিষয়টি এ-সংক্রান্ত বাছাই কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ পুনঃ তফসিলের এমন সুযোগ ব্যাংক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বৃদ্ধির প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে। এ সুবিধায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ পেলেও এতে এগুলোর ক্যাশ-ম্যানেজমেন্টে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে ব্যবসায়ীদের ধারণা, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, চড়া সুদহার, করোনা মহামারি এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এই সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। যার প্রভাব দেশের জনজীবনে প্রতিফলিত হবে।

এ-সংক্রান্ত বাছাই কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১ হাজার ২৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। পুনঃ তফসিলের প্রতিটি আবেদনের বিষয় ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আবার এমন অনেকে আবেদন করেছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। কিছু আবেদন আছে, যেগুলো ব্যাংক নিজেই চাইলে পুনঃ তফসিল করতে পারে। আবার কেউ কেউ সুদ মওকুফের আবেদন করেছেন, যা এই কমিটির এখতিয়ারের বাইরে। এ অবস্থায় যৌক্তিক কারণে খেলাপি গ্রাহকের আবেদন বাছাই করা চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই অনুমতি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নেবে ঋণ পুনঃ তফসিল করবে কি না। ঋণ পুনঃ তফসিল করা হলে ব্যাংকগুলোর নগদ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ঋণ পুনঃ তফসিলের আবেদন করা ক্ষতিগ্রস্ত একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শত শত ব্যবসায়ী নিজের আবেদন বাছাই করাতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। দৌড়ঝাঁপের পর কমিটির সভায় তাঁর আবেদন বাছাই হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর ঋণ পুনর্গঠন হওয়ার কথা। দুটি ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনে এগিয়ে এলেও ঋণদাতা অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো সাড়া দেয়নি। এ কারণে কমিটির সভায় বাছাইয়ের পরও ঋণখেলাপি পরিচয় থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। যত দ্রুত খেলাপিমুক্ত হওয়া যায়, তত মঙ্গল। দিন যত যাচ্ছে, বন্ধ কারখানার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়, তবে তা দ্রুততম সময়েই হওয়া দরকার। অন্যথায় পুনর্গঠনের সুযোগ পেলেও সেটি কোনো কাজে লাগবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ পুনঃ তফসিলের ১ হাজার ২৫০ আবেদন জমা পড়েছে। সেখান থেকে ২৫০টি বাছাই করা হয়েছে।

ব্যাংক আটকে যাওয়া ঋণ সুদসহ আদায়ের চেষ্টা করে। এই আলাপ-আলোচনায় প্রায় সব ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সুদ মওকুফের শর্ত জুড়ে দেন। গ্রাহক মনে করেন, ব্যাংক সহযোগিতা করতে চাইলে সুদ মওকুফ হয়ে যায়। পরিচালনা পর্ষদ চাইলে সুদ মওকুফ করতে পারে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি সুদ মওকুফের আড়াই হাজার আবেদন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা পড়েছে। যা ব্যাংক নিজের মতো করে চূড়ান্ত করবে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা লাগে না।

ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ধারা-৪৯ (চ)-তে বলা হয়েছে, ‘ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে সকল ব্যাংক-কোম্পানি বা কোনো বিশেষ ব্যাংক-কোম্পানি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যাংক-কোম্পানির জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, ঋণ মওকুফ, পুনঃ তফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন-সংক্রান্ত বিষয়সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের স্বার্থ বিবেচনায় ঋণ পুনঃ তফসিলে গঠিত কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গভর্নর নিজেই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ঋণ পুনঃ তফসিলের বিষয়ে পুরো কাজ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। তাদের গ্রাহক তারা ভালো করে ডিল করতে পারবে। সুদ মওকুফের বিষয়টি ব্যাংকের নিজস্ব ইস্যু।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ