Ajker Patrika

ব্যাংক পরিচালনায় বেআইনি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৫২
ব্যাংক পরিচালনায় বেআইনি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি

ব্যাংক খাতের বর্তমান করুণ দশা কাটাতে আইনি সংস্কার দরকার হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও পরিচালনা পর্ষদের ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রভাব বিস্তার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি ব্যাংক খাতকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক এবং বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে। 

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সচেতন ব্যাংকার সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ব্যাংক খাত সংস্কার: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। 

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের নিজস্ব ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যাংকেও ঋণ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীত কাজের রেকর্ড ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর পরিচালনা পরিষদে নিরপেক্ষ, বিজ্ঞ ও দক্ষ লোকদের দ্বারা এক–তৃতীয়াংশের বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। 

তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় শুধু আইন প্রণয়ন বা সংস্কার করলে হবে না। ব্যাংকিং যথাযথভাবে চর্চার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে রেগুলেশন প্রয়োগ করতে হবে। ব্যাংকের নন–পারফর্মিং বিনিয়োগ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদের বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দক্ষ ও সৎ মানুষদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক হিসেবে সংশ্লিষ্ট খাতের প্রকৃত অভিজ্ঞতাধারীদের নিয়োগ দিতে হবে। যাঁদের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক সফল হয়েছে, তাঁদের কাছেই ব্যাংকের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। 

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা যেতে পারে। ব্যাংকিং কমিশন স্বাধীন নিরীক্ষকের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের বাস্তব অবস্থা নিরূপণ করবে। 

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী দুর্বৃত্ত, নীতিনির্ধারক ও অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ব্যাংককে পরিবার ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং পরিচালনায় অনিয়ম–সংক্রান্ত বিষয়াদি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের একটি ডেডিকেটেড বেঞ্চ গঠন করা দরকার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আওয়াল সরকার বলেন, নামে-বেনামে বিতরণকৃত বিনিয়োগ আদায়ে রেগুলেটরি সংস্থাকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হিস্যা ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ ব্যাংকের মালিকানা দখলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা আইনে থাকতে হবে। 

তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকে ইসলামীকরণ করতে হলে পুরোপুরি ইসলামীকরণ করা প্রয়োজন। কেবল উইন্ডো অথবা ব্রাঞ্চ দিয়ে ইসলামিক মান রাখা কঠিন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শক্তিশালী শরিয়া বোর্ডও থাকতে হবে। 

অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, একই পরিবার থেকে দুজনের বেশি সদস্য রাখা এবং তিন বছর মেয়াদে পরপর দুবারের বেশি পরিচালকের বয়স না রাখার বিধান জরুরি। পর্ষদ গঠনে উচ্চ শিক্ষিত, ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ও বয়স বিবেচনায় আনতে হবে। 

তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংককে রাষ্ট্রের তহবিল দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। ব্যাংকের পরিচালক তার পুঁজির ৫০ ভাগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির সমন্বয়ে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। দেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা যেতে পারে। কোনোভাবে দুর্বল ব্যাংককে রাষ্ট্রের টাকা টিকিয়ে রাখার উচিত নয়। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, সাবেক সচিব ড. এম আসলাম আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সচেতন ব্যাংকার সমাজের আহ্বায়ক  মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত