Ajker Patrika

দাম কমলে নিজের শেয়ার কিনতে পারবে কোম্পানি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১০: ৪৯
দাম কমলে নিজের শেয়ার কিনতে পারবে কোম্পানি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ইস্যুমূল্যের চেয়ে নিচে নেমে গেলে ওই কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে নিজেদের শেয়ার কিনে নেবে। বিনিয়োগকারীদের দিক থেকে এই দাবি অনেক দিনের। কিন্তু দেশের কোম্পানি আইনে এই ‘বাইব্যাক’-এর সুবিধা নেই। বাধা আছে সিকিউরিটিজ আইনেও। 

তবে আইনি বাধা ঠেলে এ বিষয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোম্পানি আইনে বাইব্যাক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতি মিলেছে। এখন সিকিউরিটিজ আইনও প্রয়োজনমতো সংশোধন করা হবে। 

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এটা (বাইব্যাক) হয়নি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। উনি সম্মতি দিয়েছেন। শিগগিরই এটি কার্যকর হবে বলে আশা করি।’ 

এই আইন হলে পুঁজিবাজারে বড় পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এ ছাড়া কোনো কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে এলে পরবর্তী সময়ে বিপদে পড়বে। 

পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কারণে অনেক মৌলভিত্তির বা ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামও কমে যায়। এতে লোকসান হয় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের। পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতনে কোম্পানির আর্থিক মূল্য (ভ্যালুয়েশন) যাতে না কমে, সে জন্য কোম্পানি চাইলে নিজেই শেয়ার কিনতে পারবে। এতে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ কমে দরপতন রোধ হবে। বিনিয়োগকারীদেরও লোকসান কমবে। 

তবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, বাইব্যাক বা শেয়ার পুনঃক্রয় ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বন্ধ করতে। কোনো কোম্পানির শেয়ারদর যদি অফার মূল্য, অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের কাছে যে দামে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, সেই দামের নিচে নেমে যায়, তবে এই আইনের কারণে ওই কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার পুনরায় কিনতে বাধ্য থাকবে। 

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত অবশ্য বলছেন, ‘বাধ্য করা হবে এমন নয়। কেউ যদি মনে করে তার শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত হচ্ছে। সে চাইলে কিনতে পারবে।’ 

বিষয়টি আরও একটু ব্যাখ্যা করলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইস্যুমূল্যের নিচে নেমে গেলে শেয়ার কেনার ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের একটু স্বস্তি দেওয়ার জন্য এই আইন। তবে এখনো চূড়ান্ত নয়। কোম্পানি আইনে প্রথমে বাইব্যাক সংযুক্ত করতে হবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী সিকিউরিটিজ আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারব আমরা।’ 

তবে যেভাবেই হোক, বাইব্যাক আইন কার্যকর চান বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এস এম আবু বকর নামের এক বিনিয়োগকারী লিখেছেন, ‘বিএসইসিকে মেইল দিয়ে অনেক দিন ধরে এই দাবি করে আসছি। যা-ই হোক, পরিশেষে বাইব্যাক আইন হচ্ছে। এতেই আমি খুশি। এই আইন পাস হলে বাজার অনেক ভালো হবে।’ 

যদিও এ ক্ষেত্রে দুটি অসুবিধা দেখেন হিসাববিদ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জোর করে শেয়ার কিনতে বাধ্য করা হলে যেসব কোম্পানিকে বাইব্যাক করতে বলছি, দেখা গেল সেগুলোর সক্ষমতাই নেই। তাহলে কীভাবে সেটি আইন পরিপালন করবে?’ 

এ ছাড়া এসব ক্ষেত্রে কারসাজির সুযোগ থেকে যায় বলে মনে করেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শেয়ার কেনার সুযোগ দিলে অনেকেই আবার কারসাজি করবে। দুই নম্বরি করে দাম ফেলে দিয়ে শেয়ার কিনবে। এটা হতে পারে। তবে কারসাজি তো এখনো হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত