Ajker Patrika

বিডার বড় বড় গল্প শুনি, কই ৮ মাসে একটা বিনিয়োগও তো আসে নাই: বিটিএমএ সভাপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৬: ৪৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে উচ্চাশা দেখালেও বাস্তবে গত আট মাসে বাংলাদেশে কোনো উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে এক ক্লাবে ‘শিল্প খাতে জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সংকটে টেক্সটাইল ও পোশাকশিল্পে উৎপাদন বিপর্যয়’ শীর্ষক এফবিসিসিআইসহ সাতটি ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বিডার বড় বড় গল্প শুনি, বিডা নাকি বিদেশি ইনভেস্টর নিয়ে আসবে। আরে ওগুলা তো সব জি-টু-জি। কই, একটা শিল্পপতিকে নিয়ে আসেন না, আমাদের সাথে একটু পার্টনারশিপে ব্যবসা করুক। গত আট মাসে ৮টা কেন, একটাও তো আসেনি, আমার জানামতে।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার রাসেল বিডার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বিদেশিদের দাওয়াত করতেছেন। আর আমাদের রেডিমেড ফ্যাক্টরি আছে। ওরা এলে তো কিছুদিন সময় লাগবে, রড-সিমেন্ট-বালু-জমি নিয়ে এগুলা ঢালাই-ঢুলাই দিয়ে আরও পাঁচ বছর লাগবে একটা ফ্যাক্টরি করতে। আমাদের রেডিমেড ফ্যাক্টরিতে পার্টনার হতে বলেন! না হবে না। তারা জানে যে এখানে ফ্যাক্টরির অবস্থা ভালো না, ভায়াবল না।’

সরকারের শিল্পনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই কিছুদিন আগে বই খাতা ছাপানো হবে বলে ১০ হাজার টন পেপার নিয়ে আসছে। যখন পেপারটা এসে পৌঁছাইল, তখন কিন্তু বই ছাপানো শেষ। আর সেই পেপার এখন ডিউটিও দেয় নাই, পোর্ট ডেমারেজও দেয় নাই। সেটা এখন কম্পিটিশন করতেছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সাথে, এখন খোলাবাজারে এটা বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নতুন করে পাঁয়তারা চলতেছে, আরও ৩০০ টন পেপার ইমপোর্ট করবে তারা, ডিউটি ফ্রি, ডেমারেজ ফ্রি। তাইলে আমাদের শিল্প করে লাভটা কী? এতগুলা পেপার মিল, আপনি তো নিজে নিজের পেপার মিলের গলা টিপে ধরে মেরে ফেলতেছেন; নিজের ইন্ডাস্ট্রিকে গলা টিপে ধরে মেরে ফেলতেছেন। আপনি সুগার ইমপোর্ট করেন, কিন্তু এখানে রিফাইনারি আছে। ইন্ডাস্ট্রিবিরোধী পলিসি হচ্ছে এগুলা।’

সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, আপনারা কেমনে চালাবেন বা নিজেরা চলবেন। আমরা কেমনে চলব, আমি জানি না। আর কিছুদিন পরে হয়তো ঘর থেকে বের হইতেও পারব না। আরও অনেক বক্তা আছেন, উনারা আপনাদেরকে আলোকপাত করবেন। আমাদের কী দুরূহ অবস্থা! সবকিছু আপনারা আজকে জানতে পারবেন।’

হতাশা প্রকাশ করে রাসেল বলেন, ‘আমার মনে হয়, এরপরে আর সাংবাদিক সম্মেলন আমাদের দরকার হবে না। এমনি ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে হবে। উদ্বৃত্ত গ্যাসও এসে যেতে পারে। কারণ, যখন গ্যাস আপনার দরকার হবে না, তখন গ্যাসটা উদ্বৃত্তই থাকবে। তো সে আশায় বসে রইছি। কেউ হয়তো মরবে, কেউ হয়তো বাঁচবে। দেখা যাক, আমাদের নসিবে কী আছে। আল্লাহ খোদা কী রাখছে!’

ঢাকার গুলশান ক্লাবে রোববার ‘শিল্প খাতে জ্বালান বিশেষ করে গ্যাস সংকটে টেক্সটাইল এবং পোশাক শিল্পে উৎপাদন বিপর্যয়’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতদকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি), প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ)।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিটিএমইএর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হায়দার, বাংলাদেশ টেরিটাওয়্যাল অ্যান্ড লাইন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেইন মেহমুদ, বিটিটিএলএমইএর সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সোহেল, বিটিএমইএর সহসভাপতি সালেহ উজ্জামান খানসহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, শিল্পবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিল্পকারখানা গলা টিপে মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্যাস-সংকটে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চলতি মূলধন সংকুচিত হয়েছে। আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারবে কি না, সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বক্তারা তাঁদের কারখানাগুলোতে গ্যাস-সংকটের চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত ১৪ এপ্রিল থেকে অনেকের কারখানায় গ্যাস একেবারেই বন্ধ। যা আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কারখানায় প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপ)। সেখানে আসছে ১ থেকে ২ পিএসআই। কারখানাগুলোতে কাজ হচ্ছে না; বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। প্রতিমাসে একেকটি কারখানা ১৫ থেকে ২০ কোটি বেতন কোথা থেকে দেবে।

আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। গ্যাস-সংকটের কারণে ৬০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হচ্ছে না কারখানায়। তিন মাস সুদ না দিলেই ঋণখেলাপি করছে ব্যাংক। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের ধমক দিচ্ছে সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানান শওকত আজিজ রাসেল। এগুলো হলো অবিলম্বে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিল্প খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; শিল্প খাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ভিসায় ছয় দেশ

এর জবাব দেশে দিইনি, জাপানে দিলে বিপদ হবে: পদত্যাগ প্রশ্নে ড. ইউনূস

চারটি গুলির পর নিরস্ত্র মেজর সিনহার গলায় পাড়া দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

‘বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেও পাকিস্তানের কোনো লাভ হবে না’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত