Ajker Patrika

গ্রাফাইট রপ্তানিতে চীনের বিধিনিষেধ, ব্যাটারির বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ৩৭
গ্রাফাইট রপ্তানিতে চীনের বিধিনিষেধ, ব্যাটারির বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা

জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মূল্যবান খনিজ পদার্থ গ্রাফাইট রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন। দেশের বাইরে গ্রাফাইট বিক্রিতে এখন থেকে চীনা রপ্তানিকারকদের সরকারের অনুমতি নিতে হবে। গ্রাফাইট ব্যাটারি তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ায় বিশ্বজুড়ে এই পণ্যের বাজারে অস্থিরতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।     

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাজারে গ্রাফাইটের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে রাখতেই চীন এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের।

সাধারণ ব্যাটারির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ঋণাত্মক দণ্ড বা অ্যানোড হিসেবে গ্রাফাইট দণ্ড ব্যবহার করা হয়। আর একক দেশ হিসেবে চীন অপরিশোধিত গ্রাফাইটের বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬৭ শতাংশ একাই উৎপাদন করে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার মতে, কেবল উৎপাদনই নয় পরিশোধনেও শীর্ষে চীন। বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রাফাইট পরিশোধন হয় প্রতিবছর, চীন এককভাবে তার ৯০ শতাংশ করে থাকে।

চীন এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিল যখন, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলো নিজ নিজ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি যখন ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে তখন তার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর দাবি, বেশি ভর্তুকি দেওয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ হচ্ছে বেশি।

এর আগে, চীন জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দুটি বিরল ধাতুর ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। বিশ্ববাজারে চিপস নিয়ে বেইজিং-ওয়াশিংটনের টান টান সম্পর্কের মধ্য গতকাল সোমবার এমন ঘোষণা দেয় চীন। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমসের জারি করা নির্দেশনা অনুসারে গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম রপ্তানি করতে লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। গত ১ আগস্ট থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বৈদেশিক ক্রেতাদের এসব পণ্য ব্যবহারের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করতে হবে। কেননা, বিষয়টি চীনের ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণের’ জন্য জরুরি।

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, এলইডি ও সৌর প্যানেলের ফটোভোলটেইক প্যানেলসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরিতে গ্যালিয়ামের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটিকে বিশেষ কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করে। ইউরোপীয় কমিশনের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী গ্যালিয়ামের ৮০ শতাংশই উৎপাদন করে চীন। একই রিপোর্ট অনুসারে, অপটিক্যাল ফাইবার ও ইনফ্রারেড ক্যামেরা লেন্স তৈরির জন্য অপরিহার্য উপাদান হলো জার্মেনিয়াম। এর ৮০ শতাংশই চীন থেকে আসে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটন চীনা সংস্থাগুলোকে উন্নত আমেরিকান চিপ ও প্রযুক্তি কিনতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই রকম রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে চীন। এর মাধ্যমে চীন সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক সপ্তাহে সেমিকন্ডাক্টরগুলো রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে। পাশাপাশি মিত্রদেরও একই কাজ করতে চাপ দিচ্ছে। সেই সেপ্টেম্বর থেকে নেদারল্যান্ডস ইলেকট্রনিক চিপ তৈরির উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত