Ajker Patrika

বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলল বিশ্বব্যাংক

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ০৯: ৪৭
বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলল বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকলেও চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়বে বলে ছয় মাস আগের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে বিশ্বব্যাংক। তবে অর্থবছরের ৯ মাসের হিসাব দিয়ে সরকার বলছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে।

গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস ছিল। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই পূর্বাভাস বহাল রেখেছে সংস্থাটি। আগের অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

শিল্প পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাংক বলেছে, কয়েক মাস ধরে আমদানিতে কড়াকড়ির কারণে কাঁচামাল আমদানি কমার পাশাপাশি তীব্র জ্বালানিসংকটে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশই নয়, আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য আনতে এবং বিনিময় হারের চাপ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে এখন আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হচ্ছে। তবু উৎপাদনে তার বড় প্রভাব রয়ে গেছে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশ কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংক বলছে, এখন বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম কমে এলেও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বছরের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকতে পারে।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের উন্নতি হলেও পরিবারের প্রকৃত উপার্জন এখনো মহামারির আগের পর্যায়ে যেতে পারেনি বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি
উচ্চ মাত্রায় খেলাপি ঋণ, পুঁজির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি রয়ে গেছে। এসব দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে, পাশাপাশি করপোরেট খাতে সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজির সংকটও আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

লাগামহীন সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, আর্থসামাজিক উত্তেজনা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে আর্থিক সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব সংকট শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, এই অঞ্চলের দেশগুলোতে আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যায়নি।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমবে
সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে তাদের পূর্বাভাস আগের তুলনায় বাড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কঠোর মূল্যস্ফীতিবিরোধী পদক্ষেপের সম্মিলিত প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

একই সঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের দারিদ্র্যবিরোধী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোকে নতুন ঋণসংকটের ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দারমিত গিল বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছে। উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণের চাপ বাড়ছে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা ইতিমধ্যে অনেক নিম্ন আয়ের দেশকে ঋণসংকটে ফেলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৯ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে চায় ড্যাফোডিল কম্পিউটারস

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৪৯ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে চায় ড্যাফোডিল কম্পিউটারস

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটারস পিএলসি তাদের গ্রুপ থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে নতুন শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটারস।

কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন এবং বিনিয়োগকারীদের সম্মতি নিয়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণের অর্থের বিপরীতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ৫ টাকা প্রিমিয়াম যুক্ত করে মোট ১৫ টাকা দরে প্রতিটি শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটারসের পর্ষদ। কোম্পানিটি তাদের গ্রুপ থেকে ৪৯ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বিপরীতে তাদের ৩ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার সাধারণ শেয়ার ইস্যু করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খেজুরের শুল্ক-কর ২০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে খেজুরের আমদানি শুল্ক ১৭ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং উৎসে করহার ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

রোজা উপলক্ষে খেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর ও শুল্কায়ন যৌক্তিকীকরণ নিয়ে সম্প্রতি বিটিটিসি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে বাণিজ্যসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন আরও বলেছে, খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সব ধরনের শুল্কছাড় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল রাখা যেতে পারে।

শুল্ক কমানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও ইটিআইএন, বিআইএন লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করার অনুরোধ জানানো হয়েছে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে। সংস্থাটি বলেছে, এতে খেজুরের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।

বিটিটিসি বলেছে, প্রতিবছর রোজার সময় খেজুরের চাহিদা বাড়ে। এ সময় পণ্যটির সরবরাহ সহজলভ্য করতে খেজুর আমদানিতে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ও আমদানি শুল্ক যৌক্তিক করা প্রয়োজন।

জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে সব মিলিয়ে ৫৭ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ক-কর রয়েছে। এর মধ্যে সিডি ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ১০ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ। খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর থেকে প্রায় তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আগামী রোজা শুরু হতে তিন মাসের কম সময় রয়েছে, তাই যত শিগগির সম্ভব এ বিষয়ে এনবিআর ব্যবস্থা নিতে পারে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টন। এর মধ্যে রমজান মাসে ৬০–৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকে। এসব খেজুর মূলত সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।

উল্লেখ্য, খেজুরের দাম সহনীয় রাখতে গত বছর রোজা শুরুর তিন মাস আগে খেজুরের শুল্ক-কর কমানো হয়। তাতে আমদানিতে খরচ কমে এবং আমদানি বাড়ে। ফলে দাম স্থিতিশীল ছিল। এবারও একইভাবে খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়ে দাম স্থিতিশীল রাখার সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়ন

‘সি’ গ্রেডের গভর্নর খেতাব পেলেন ড. আহসান মনসুর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা ও দেশের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সংস্কারের ধারাবাহিক উদ্যোগে মনোনিবেশ করেন। তবে নীতিগত দিকনির্দেশনা সঠিক পথে থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি এখনো প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি—এমন মূল্যায়ন করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স। সাময়িকীটির সদ্য প্রকাশিত সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড ২০২৫-এ বিশ্বের ১০০ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নে ড. আহসান এইচ মনসুরকে ‘সি’ গ্রেড দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে ভিয়েতনামের গভর্নর নুয়েন থি হং সর্বোচ্চ ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন, আর শ্রীলঙ্কার গভর্নর নন্দলাল উইরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের মূল্যায়নে বাংলাদেশের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পেয়েছিলেন ‘ডি’ গ্রেড। ফলে এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান এক ধাপ উন্নত হয়েছে।

গ্লোবাল ফাইন্যান্স মন্তব্য করেছে, ড. আহসান এইচ মনসুরের নীতি-দিকনির্দেশনা যুক্তিসংগত হলেও বাস্তবায়নের গতি তুলনামূলক ধীর। জনগণের আস্থা পুরোপুরি ফিরে না আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি প্রয়োগে কাঙ্ক্ষিত ফল দৃশ্যমান নয়। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, ‘সি’ গ্রেড মানে নীতিগত দিক সঠিক পথে থাকলেও এর কার্যকারিতা বা বাস্তব পরিবর্তনের প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট হয়নি।

মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ অনিয়ম, ডলারের অস্থিরতা ও রিজার্ভসংকট এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, আর দেউলিয়া আইন ও ব্যাংক পরিচালনায় জবাবদিহি বৃদ্ধিতেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে রিপো রেট ৮.৫ থেকে ১০ শতাংশে বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি ৩.৯ শতাংশে নেমেছে; যা গত এক দশকের গড় ৬ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ফলে সংস্কারের বাস্তবায়নই এখন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মূল চ্যালেঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে বৈঠক

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘ মিশনের প্রতিনিধিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘ মিশনের প্রতিনিধিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার রাজধানীতে জাতিসংঘ মিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক কৌশলগত পরামর্শ সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এই অনুরোধ করেন। এ সময় তাঁরা বলেন, বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণের পথে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই নীতিসহায়তা প্রয়োজন।

এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন, তা জানতে জাতিসংঘের এলডিসি-বিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রোনাল্ড মোলেরুসের নেতৃত্বাধীন একটি মিশন চার দিনের সফরে এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইউএন হাউসে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘ মিশনের প্রতিনিধিরা। কৌশলগত এই পরামর্শ সভায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, এলডিসি উত্তরণের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয় ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার মুখে। বিশেষ করে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ক্যাপটিভ ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৪০ ও ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে উৎপাদন সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ এবং ব্যাংক সুদের হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে ক্রয়াদেশ হ্রাসের প্রবণতা এবং এলডিসির উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের শিল্পে তেমন বৈচিত্র্য নেই। সেই সঙ্গে কাঁচামালের আমদানিনির্ভরতা আছে, এসব কিছু দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির প্রমুখ।

এলডিসি উত্তরণ কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, সে লক্ষ্যে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁদের দেওয়া স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে ডব্লিউটিওর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিকল্প প্রণোদনা চালু, ব্যাংক সুদের হার হ্রাস ও ইডিএফ পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ কমানো, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত ও লজিস্টিকস অদক্ষতা (বন্দর ও শুল্ক) দূর করা। মধ্যমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে আছে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ হ্রাস, দ্রুত গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের কাঠামোগত ভিত্তি মজবুত করা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ব্যাংক লুটপাট, উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশের শিল্পকারখানা বর্তমানে আইসিইউতে আছে। এ অবস্থায় রোগীকে (শিল্প) সুস্থ অবস্থায় আনতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে; তা না হলে রোগীকে (শিল্প) বাঁচানো যাবে না—এমন উদাহরণ দিয়ে এলডিসি উত্তরণ পেছানোর অনুরোধ করেছি আমরা।’

সফল এলডিসি উত্তরণের পর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য মসৃণ উত্তরণকাল নিশ্চিত করা দরকার বলে মত দেন বিজিএমইএ সভাপতি। একই সঙ্গে শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং পরিবেশবান্ধব রূপান্তরের জন্য স্বল্প সুদের মিশ্র অর্থায়ন এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি।

বৈঠকে পোশাক ও বস্ত্র খাতের নেতারা শিল্পের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, ডিকার্বনাইজেশন বিনিয়োগে সহায়তা দান এবং প্রযুক্তি অভিযোজন এবং সার্কুলার ইকোনমি কর্মসূচিতে সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত