Ajker Patrika

সয়াবিনের দাম বাড়াতে পাঁয়তারা

  • দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি।
  • অনেক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল।
  • খোলা তেলের দাম বেড়ে ২১০-২২০ টাকায় উঠেছে।
  • বিপাকে ভোক্তা, খুচরা দোকানি।
  • আমদানি পর্যাপ্ত বলছে ট্যারিফ কমিশন।

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৫৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানোর পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তেলের দাম আর বাড়ানো হবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরবরাহ সংকট আরও গভীর হয়েছে, বেড়েছে দামও। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ব্যবসায়ীদের দিক থেকে নতুন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সরকারের কাছে এসেছে। সাধারণত রমজানে তেলের চাহিদা দ্বিগুণ হয়। চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। সেই ফর্মুলাতে এগোচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রায় অনুপস্থিত। যে দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খোলা তেলের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যার দাম ২১০-২২০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছেছে। গোপীবাগ, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজারে তেলের সরবরাহ নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ক্রেতারা শঙ্কিত যে, রমজান মাসের আগেই আবার তেলের দাম বাড়াবে।

সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়। তখনো দাম বাড়ানোর আগ দিয়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলের সয়াবিন তেল। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৭৫ টাকা। দুই লিটারের বোতলে তা ৩৫০ টাকা এবং ৫ লিটার ৮৫২ টাকা। খোলা সয়াবিনের খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৫৭ টাকা। তার আগে বোতলের সয়াবিনের দাম ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল।

বিক্রেতারা জানান, সাধারণত এসব বাজারে বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাদা, মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ, বসুন্ধরা, সিটি গ্রুপের তীর, সেনাকল্যাণের সেনা ও সানসহ ৮ থেকে ১০টা ব্র্যান্ডের তেলের সরবরাহ থাকে। কিন্তু গত নভেম্বর মাস থেকে যখন সরবরাহ সংকট শুরু হয়েছে, তখন থেকে এক-দুটির বেশি কোম্পানির তেল আসছে না। তা-ও চাহিদার অনেক কম। এখনো পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।

এ কারণে সরবরাহ সংকটের কারণে তেল পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে।

গোপীবাগ বাজারের কয়েক দোকানি বলেন, ‘এখন তো তেল পাওয়া যাচ্ছে না, এমনকি যে কয়টি কোম্পানির তেল পাচ্ছি, সেটি খুব কম পরিমাণে আসছে। রমজান মাসে তেলের চাহিদা আরও বাড়বে, সেই সুযোগে দাম বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘সরবরাহের জন্য আমাদের সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। এখন যদি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে আমরা ব্যবসা চালাতে আরও বেশি সমস্যায় পড়ব।’

শান্তিনগর বাজারের একটি নামী ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেলের ডিলার মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ‘আমার প্রতিদিনের চাহিদা ২০০ কার্টন তেল, কিন্তু আমার কাছে সেগুলোর মাত্র ১১০ কার্টন এসেছে। তা-ও এক দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কোম্পানির কাছে আমি অগ্রিম টাকা জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সঠিক পরিমাণে তেল সরবরাহ করছে না। বাজারে তেলের সংকট চলতে থাকলে আমরা কীভাবে ব্যবসা চালাব?’

সেগুনবাগিচা বাজারের আল্লাহর দান মুদি স্টোরের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির প্রতিনিধিরা তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বাজারে তেলের সরবরাহ খুব কম আর তেল না পেলে তো আমাদের ব্যবসাও চলে না। তিনি মনে করেন, ‘রমজান মাসের আগে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ব্যবসায়ীরা চাপ দিচ্ছেন আর সরকারও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে এবং তেলের সংকট সাময়িক। কিন্তু বাস্তবে বাজারে যে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে, তা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। দেশে গত ডিসেম্বর থেকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে গেছে। কিছু দোকানে তেল পাওয়া গেলেও তা কেবল খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে এবং দাম বেড়ে ২২০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে।

ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ী সংগঠন ‘বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন’ জানায়, তারা গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সরকারকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আপাতত তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজারে তেলের দাম যদি আবারও বাড়ে, তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করছে। গোপীবাগ বাজারের ক্রেতা জামিল আহমেদ বলেন, ‘এত দিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, যদি আবার দাম বাড়ে, আমাদের জন্য তো আরও বিপদ। আমরা তো আর কিছুই কিনতে পারব না।’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে, তবে কিছু জায়গায় সরবরাহ ঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না। জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৪ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১ লাখ টন বেশি। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে এবং বাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে।

ক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, রমজান মাসের আগেই তেলের দাম আরও বাড়ানো হবে। তাদের জন্য এটি একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত