টানা ১৫ বছর সামিট গ্রুপের কাছ থেকে এলএনজি কিনবে সরকার

আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের শুরুতেই গ্যাস সরবরাহের বড় কাজ পেতে যাচ্ছে সামিট গ্রুপ। এই বিষয়ে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও সামিট গ্রুপের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির আওতায়, ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে একটানা ১৫ বছর বা দেড় দশক ধরে পেট্রোবাংলাকে বছরে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে সামিট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

তবে পেট্রোবাংলা কত দামে সামিট গ্রুপের কাছে এলএনজি কিনবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি সিঙ্গাপুরভিত্তিক সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান। তিনি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সন্তান হলেও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর ভাই মোহাম্মদ ফারুক খান নতুন সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। সামিট গ্রুপকে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহের কাজ দেওয়া নিয়ে পেট্রোবাংলার বক্তব্য জানতে ই-মেইল করেছিল রয়টার্স। তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দেয়নি পেট্রোবাংলা।

এক মাসের কম সময়ের মধ্যে চুক্তিটি সরকারের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান সামিটের চেয়ারম্যান আজিজ খান। পেট্রোবাংলাকে সরবরাহের জন্য কোন দেশ থেকে সামিট এলএনজি সংগ্রহ করবে, সে বিষয়েও রয়টার্সকে কিছু জানাননি তিনি। সম্ভবত কোম্পানিটি যেকোনো স্থান থেকে এলএনজি সংগ্রহের সুযোগ পাবে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক যুগের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন আজিজ খান। তবে বাংলাদেশে তাঁর বিস্তৃত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। সামিট গ্রুপের অধীনে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস ও আবাসন খাতের ব্যবসা আছে। তাদের সব সম্পদ বাংলাদেশেই। দেশে সামিট গ্রুপের এক ডজনের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

সামিটের অধীন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের যত ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর হোল্ডিং কোম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত। সে জন্য বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও এ কোম্পানির সম্পদের হিসাব করা হয় সিঙ্গাপুরে। গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’ সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর যে তালিকা প্রকাশ করে, সেই তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ছিল ৪১তম।

• প্লাস্টিক থেকে বিদ্যুৎ: যেভাবে বিলিয়নেয়ার হলেন সামিট গ্রুপের আজিজ খান

সামিট গ্রুপ বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করলেও প্রথম দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে। এলএনজি থেকে পুনরায় গ্যাসে পরিণত করার ইউনিট (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট—এফএসআরইউ) রয়েছে এই গ্রুপের।

এ ছাড়া এই শিল্পগোষ্ঠী পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছে। গত বছর জুনে কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিট গ্রুপের আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।

• সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে সামিট গ্রুপের আজিজ খান

রয়টার্সকে আজিজ খান বলেন, ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এলএনজি টার্মিনালটির নির্মাণকাজ আগামী বছর শুরুর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তবে মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনালের কাজ এখনো কাউকে দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তবে কাজটি পেয়ে ২০২৯ সাল নাগাদ প্রথম ধাপের কাজ শুরু করতে পারবে বলে সামিট আশা করছে।

জাপানি অংশীদার সুমিটোমো কর্প জেইআরএর সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী সামিট গ্রুপ। এই টার্মিনালের বার্ষিক সক্ষমতা হবে প্রায় ৭০ লাখ টন, যা প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বিশ্ববাজারে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় সামনের দিনে ‘স্পট মার্কেট’ বা খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনার পরিমাণ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন আজিজ খান।