Ajker Patrika

টাকা হাতে রাখার প্রবণতা বাড়ছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ১১: ১৭
Thumbnail image

ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি, এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও তারল্যসংকটের জেরে অনেক গ্রাহকের আস্থার সংকট দেখা দেয়। এর ফলে বছরজুড়ে ব্যাংকে টাকা না রেখে হাতে রাখার বাড়তি প্রবণতা সৃষ্টি হয়, যা গত অর্থবছরের শেষের দিকে আরও বেড়ে যায়।

পাশাপাশি ব্যাংকে রক্ষিত আমানতের সুদহার হ্রাস, নিত্যপণ্যের চড়া দামের প্রভাবে ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে অর্থের বাড়তি চাহিদা মেটাতে অনেক গ্রাহক সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে হাতে রাখতে শুরু করেন। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন, যার ফলে মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের মে মাসে ব্যাংক খাতের বাইরে টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।কিন্তু চলতি বছরের মে মাস শেষে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে মানুষের হাতে টাকা চলে গেছে ৩০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

শতকরা হিসাবে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর চলতি বছরের এপ্রিল শেষে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছিল ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

ঢাকার আশুলিয়ার মর্জিনা বেগম বলেন, ‘দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর রামপুরায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সরকারি চাকরিজীবী স্বামী আবদুল ওয়াদুদ ২০২০ সালে করোনার সময় তিনটি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখেছিলেন। যদিও সুদ কম ছিল। এদিকে বাজারে পণ্যের চড়া মূল্য। পরে শুনছিলাম ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে। সংশয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সংসার সামাল দিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে ব্যাংক খাতের বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থার সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি ব্যাংকে টাকা রাখলে পাওয়া যাবে না এমন ধারণা থেকে ও মূল্যস্ফীতি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা তুলে নেওয়া শুরু করে। কোনো কোনো গ্রাহক এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করছেন। বিশেষ করে শরিয়াহ আইনে পরিচালিত ব্যাংকের গ্রাহকেরা টাকা তুলে সরকারি কিংবা বিদেশি ব্যাংকে রাখছেন। আর নেহাত যাঁদের ব্যাংকের ওপর আস্থা কম, তাঁরা টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এতে ব্যাংকের বাইরে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও জয়তুন বিজনেস সলিউশনসের চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী বলেন, ‘ব্যাংকের বাইরে টাকা চলে যাওয়া ভালো না। এটা ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট তৈরি করতে পারে। প্রথমত, দেশে যদি দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, তখন মানুষ সংসার চালাতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়ত, যদি ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ মনে না করে, তাহলে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া আমানতে সুদের হার কম থাকলেও মানুষ টাকা ব্যাংকে না রেখে অন্য খাতে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত