Ajker Patrika

টালমাটাল শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রিহ্যাব ও লিংকেজ শিল্প সংগঠনগুলো গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রিহ্যাব ও লিংকেজ শিল্প সংগঠনগুলো গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০২২-৩৫) নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবার প্রকাশ্যে এসেছে গৃহায়ণ ও সংযোগ শিল্পের পক্ষ থেকে। নতুন এই ড্যাপের ফলে রাজধানীকেন্দ্রিক আবাসন খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে, যার ঢেউ গিয়ে লেগেছে নির্মাণসংশ্লিষ্ট প্রায় সব শিল্পে। রিহ্যাবসহ একাধিক শিল্প সংগঠনের নেতারা বলছেন, জমির মালিকেরা এখন আর ডেভেলপারদের সঙ্গে হাত মেলাতে আগ্রহী নন। কারণ, ভবনের উচ্চতা, আয়তন এবং ব্যবহার নিয়ে যেভাবে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, তাতে প্রকল্প হাতে নেওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে রিহ্যাব ও লিংকেজ শিল্প সংগঠনগুলোর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে এই সংকটের নানা দিক। রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নতুন ড্যাপ বাস্তবায়নের পর থেকেই ফ্লোর এরিয়া রেশিও-সংক্রান্ত (এফএআর) বিধিনিষেধের কারণে প্রকল্প উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এতে শুধু বিনিয়োগ কমছে না, বিপর্যস্ত হচ্ছে শ্রমবাজারও। তাঁর ভাষায়, আবাসন খাতে এখন যে স্থবিরতা, তা একমাত্র এই বৈষম্যমূলক ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ফল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশের প্রায় ২০০টির বেশি সংযোগ শিল্প যেমন রড, সিমেন্ট, ইট, রং, কেব্‌ল, লিফট, স্যানিটারি ফিটিংস, অ্যালুমিনিয়াম ও গ্লাসসামগ্রী—সবই আজ আবাসন খাতের স্থবিরতায় হোঁচট খাচ্ছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ডেভেলপাররা তাঁদের পণ্যের মূল ক্রেতা। এখন সেই চাহিদা নেই বললেই চলে। তাঁর ভাষ্যমতে, শুধু রডের চাহিদাই ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

আবাসনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মসংস্থান সংকটও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এতে। রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে একসময় যেখানে ৩৫০ জন কর্মী কাজ করতেন, সেখানে এখন মাত্র ৭৫ জন। বাকিদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। একই রকম চিত্র বিদ্যুৎ কেব্‌ল শিল্পেও। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল কেব্‌লস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আকতার হোসেন ঢালী জানালেন, ৯৮ শতাংশ কেব্‌ল দেশেই উৎপাদিত হয়, কিন্তু প্রকল্প কমে যাওয়ায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

লিফট খাতের অবস্থাও তথৈবচ। এলিভেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান বললেন, ভবনের উচ্চতা যখনই কমে যায়, তখনই লিফটের প্রয়োজনীয়তা কমে আসে। এখন সেই পরিস্থিতিই চলছে।

সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, এই খাতে সরাসরি প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান; আর পরোক্ষভাবে জড়িত ২ কোটির বেশি মানুষ। এমন একটি খাতের ওপর এভাবে চাপ সৃষ্টি হলে তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক ছাপ ফেলবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় উন্নয়নকে থমকে দিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। তাঁদের দাবি, সংকট সমাধানে সময়ক্ষেপণ করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলেও তারা যেন এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, এই প্রত্যাশাই করেছেন শিল্প সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত