Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুত এগোচ্ছে ভিয়েতনাম

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫১
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুত এগোচ্ছে ভিয়েতনাম

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাকের বাজারে একসময় শীর্ষস্থান দখল করে ছিল চীন। তবে চলতি বছর মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব ও বাড়তি শুল্কের কারণে চীনের রপ্তানি ধীরে ধীরে কমে আসছে। এ সুযোগে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।

বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ঠিকই, তবে ভিয়েতনামের তুলনায় তার গতি কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরিতে মনোযোগ না দেয় এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকটের সমাধান না করতে পারে, তাহলে ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় সুবিধা করা কঠিন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের একই সময়ে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার বেশি।

অন্যদিকে, একই সময়ে চীনের রপ্তানি কমে ৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন হয়েছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, যা শূন্য দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। একক মাস হিসেবে জুনে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছিল প্রায় ৩০ কোটি ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৭ কোটি ডলার।

রপ্তানিকারকেরা জানান, ভিয়েতনাম চীনের মতো উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি করে এবং তাদের সমুদ্রবন্দর সুবিধা থাকায় রপ্তানিতে লিড টাইম কম। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে, যা ভিয়েতনামের নেই। তা ছাড়া, ভিয়েতনাম চীনের প্রতিবেশী হওয়ায় চীন থেকে উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ভিয়েতনামে সরে যাচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে চীনের স্থান দখল করেছে।

নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ভিয়েতনামের যেসব সুবিধা রয়েছে, আমাদের তার অনেক কিছুই নেই। আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার সঙ্গে বহু বছর ধরে লড়ছি। যদিও এখন প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক বেশি নয়, কিন্তু এর সুবিধা নিতে হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।’

ওটেক্সার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ভিয়েতনাম যে পণ্য রপ্তানি করেছে, তা পরিমাণের দিক থেকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। বিপরীতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। শুধু রপ্তানির দিক থেকেই নয়, পোশাকের দামের দিক থেকেও ভিয়েতনাম এগিয়ে গেছে। গত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা তৈরি পোশাকের দাম বাড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিপরীতে একই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ভিয়েতনাম যেহেতু উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তাই চীন থেকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার পর উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক আমদানি করে—এমন ক্রেতারা ভিয়েতনামে সরে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশে আসছে কম মূল্যের পণ্য আমদানি করে—এমন ক্রেতারা। এ ছাড়া তারা পলিসি সাপোর্টও আমাদের চেয়ে বেশি পায়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ