Ajker Patrika

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার কাজে আসছে না

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
Thumbnail image

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন নীতি সুদহার বাড়ানোর মিশনে। ইতিমধ্যে গত ১৫ মাসে ছয় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এতে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নীতি সুদহার ৬ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৯ দশমিক ৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ এই সময় সুদহার বেড়েছে ৩ টাকা বা ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে এই বাড়তি নীতি সুদহারের প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়েছে খুবই কম। সেটি সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরের হিসাবে কমার হার মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অন্যদিকে দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক অর্থনীতিতে। বাড়তি সুদের কারণে দেশে বিনিয়োগপ্রবণতা কমে গেছে। ব্যাংকগুলোও আগের তুলনায় ঋণ বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে। ছোট-বড় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছেনও কম। এসবের ধাক্কা লেগেছে উৎপাদন, আমদানি, কর্মসংস্থান, সরবরাহ শৃঙ্খলা ও বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর। এতে বেড়ে যাচ্ছে ভোগ্য ও ব্যবহার্য পণ্য ও সেবাসামগ্রীর দাম, যা মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণসীমায় ধরে রাখার চেয়ে উল্টো উসকে দিচ্ছে। যদিও প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ নীতি সুদহারের সুষ্ঠু ও কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

শুধু দেশেই নেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। বরং বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার পূর্বাভাস রয়েছে, ঊর্ধ্বসীমার এই মূল্যস্ফীতির যাত্রাপথ বাংলাদেশে দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। এই নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা প্রায় সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাক থেকে আগাম পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়েছে, দেশে নীতি সুদহার বাড়তেই থাকবে, যতক্ষণ না সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে চলমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতি। যার ধারাবাহিকতায় আসছে নভেম্বরেও পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে নীতি সুদহার বাড়ানো হবে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বা ডাবল ডিজিট স্পর্শ করবে। ফলে গ্রাহকপর্যায়ে নেওয়া ঋণের সুদহার হবে আরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে নীতি সুদহারের ভিত্তিতে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদহার চালু করা হয়। তখন নীতি সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৫০ টাকা। এভাবে ধাপে ধাপে তা বেড়ে চলতি বছরের আগস্টে দাঁড়ায় ৯ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, যদিও নীতি সুদহার সাধারণত প্রান্তিক গ্রাহক বা ভোক্তাপর্যায়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণের সঙ্গে জড়িত নয়। এটা মূলত ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) ধারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এটা সবাই বোঝে, ব্যাংক বেশি সুদে আমানত নিলে ঋণের সুদও রাখবে বেশি। এতে কৃষি এবং ক্ষুদ্রঋণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে উপাদন কমে যায়। শিল্পোৎপাদনেও ব্যয় বেড়ে যায়। এতে পণ্যের দামও বাড়ে। এতে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়। এ জন্য শুধু সুদহার না বাড়িয়ে পণ্যের সরবরাহ এবং বিনিয়োগের বাধা সৃষ্টির ইস্যুগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। তবে লক্ষ্য কত এবং কবে তা পূরণ হবে, সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে শুধু আগস্ট মাসে দুই দফায় নীতি সুদহার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমে একটা ভালো জায়গায় আসবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমানতে গড় সুদ ছিল ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা চলতি বছর জুলাইতে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশে উন্নীত হয়। আমানতের সুদহার বাড়ার অর্থ হচ্ছে ব্যাংকের বিতরণ করা সব খাতের ঋণে সুদহার বৃদ্ধি পাওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুদের হার দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগের পরিবেশ এখনো স্থিতিশীল না। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। বিনিয়োগ না বাড়লে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। আর ব্যবসা না চললে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান কমবে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত