Ajker Patrika

সিগারেটে ৫ বছরে রাজস্ব ক্ষতি ৩৩ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক
আজ সোমবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার কারণে সরকার প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন সমন্বয়’ আয়োজিত এক সেমিনারে। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত, যার মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

আজ সোমবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) প্রফেসরিয়াল ফেলো ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী।

এ ছাড়া আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলাম, অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্সের সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসকনীতি) মো. মশিউর রহমান, প্রথম সচিব (করনীতি) মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত এবং সিটিএফকে বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সকল স্তরের সিগারেটের দাম প্রতি শলাকায় ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর ওপর শুল্কহারও দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাই আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সিগারেট পণ্য থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হতে পারে। তবে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ানো সম্ভব হলে চলতি অর্থবছরেই ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হতো।

নাদভী আরও বলেন, গত পাঁচ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৩২ শতাংশ। অথচ এই সময়ে সিগারেটের দাম মানভেদে সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গবেষক নাদভী বলেন, পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে দেশে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ ৩৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, পণ্যটি বিক্রি করে বছরে গড়ে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে বেশি অর্থ পেয়েছেন প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারকেরা। অথচ কার্যকর করারোপ করা সম্ভব হলে বছরে ১১ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারত সরকার।

আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, চলতি অর্থবছরজুড়ে গড় মূল্যস্ফীতির ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে ৷ তাই আসন্ন বাজেটে সকল স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, কিশোরদের একটা বড় অংশ ধূমপানে আসক্ত। একটা অস্বাস্থ্যবান তরুণ সমাজ আমাদের সামনে বেড়ে উঠছে। এটাকে আমাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে সিগারেটের ওপর কর বিবেচনা করা উচিত। পাশাপাশি তামাকজাত অন্যান্য তামাক পণ্যের ওপর যৌক্তিক হারে কর বসাতে হবে।

ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের মোট আয়ের ৮৬ শতাংশই এনবিআর রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে আদায় করে। এককভাবে সিগারেট কোম্পানিগুলো থেকেই আসে ১০ শতাংশ। এই আয় আরও বাড়াতে সিগারেটের প্যাকেটের ওপর ট্যাক্স বসানো যেতে পারে।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্র যদি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথেষ্ট দায়িত্ব না নেয়, তাহলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন। নীতিমালা প্রণয়নে রাষ্ট্রের স্বার্থ তৈরি করতে হবে। যদি তামাক নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব আদায়কে প্রাধান্য দেই, তাহলে তা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। তখন এনবিআর প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে যাবে রাজস্ব আদায় করা। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব আছে তা পালনে সিগারেটে কর বাড়াতে হবে।

তামাকের এত বেশি বৈধ ব্যবহার পৃথিবীর আর কোথাও নেই উল্লেখ করে মশিউর রহমান বলেন, তামাক ব্যবহারের উচ্চহারের কারণে এ দেশে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক নাগরিক অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন। আমাদের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে করহার নির্ধারণ করতে হবে।

মশিউর রহমান বলেন, আইনের প্রয়োগ দরকার। কেবল রাজস্ব বাড়িয়ে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া ও খোলা সিগারেট বিক্রি নিষেধ হলেও এই আইন কাগজেই রয়ে গেছে।

মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত বলেন, চলতি অর্থবছরে সিগারেট কোম্পানি থেকে ৪৫ শতাংশ হারে কর নেওয়া হচ্ছে। কর আদায় আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে জনকল্যাণও আমাদের মাথায় রাখতে হয়। তামাক পণ্যে কর বাড়ানো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেলে এনবিআর তা বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য গবেষণা করে জনহিতকর প্রস্তাবনা তৈরি করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাক ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। দেশে প্রতিবছর যে সংখ্যক মৃত্যু হয়, তার প্রায় ২২ শতাংশই তামাকের জন্য হয়। তা ছাড়া তামাকজাত পণ্য সেবনের কারণে দেশে যে পরিমাণ স্বাস্থ্য ক্ষতি হয়, এ খাত থেকে আদায় করা সরকারের রাজস্ব থেকে তার কেবল ৭৫ শতাংশ কাভার হয়। অর্থাৎ, তামাকজাত পণ্যে স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতির চেয়েও কম রাজস্ব আদায় হয়। তাই সিগারেট নিরুৎসাহিত করতে দাম বৃদ্ধি ও রাজস্ব বাড়ানো খুবই জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত