Ajker Patrika

১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়, ২০২৫ সালে হত্যা করা হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের: বিটিএমএ সভাপতি

  • গ্যাস-সংকটে ধুঁকছে শিল্প।
  • ৫০ শতাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ।
  • চলতি মূলধন সংকুচিত হয়ে আসছে।
  • ঈদে বেতন-ভাতা অনিশ্চিত।
  • সরকারের কাছে তিন দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মে ২০২৫, ২৩: ২১
১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়, ২০২৫ সালে হত্যা করা হচ্ছে শিল্পোদ্যোক্তাদের: বিটিএমএ সভাপতি

গ্যাসসংকট যেন ধুঁকতে থাকা শিল্প খাতের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বলছেন, গ্যাসসংকট এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, উৎপাদন থেমে যাচ্ছে একের পর এক কারখানায়। ৫০ শতাংশ কারখানায় ইতিমধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলোও আগামী দুই মাস টিকতে পারবে কি না, সন্দেহ। প্রায় সবার চলতি মূলধন সংকুচিত হয়ে আসছে। এমনকি সামনে ঈদের সময় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য।

গতকাল রোববার গুলশানের একটি ক্লাবে ‘শিল্প খাতে জ্বালানি, বিশেষ করে গ্যাস সংকটে টেক্সটাইল ও পোশাকশিল্পে উৎপাদন বিপর্যয়’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

দেশের ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতদকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি), প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘গ্যাস না থাকলে কারখানা চলবে না। উৎপাদন না হলে বেতন-ভাতা কীভাবে দেব? সরকার যদি বেতন না দেওয়ার অপরাধে গাড়ি-বাড়ি বিক্রির নির্দেশ দেয়, তাহলে গ্যাস না দেওয়ার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির কি ব্যবস্থা হবে না? শিল্প বাঁচাতে না পারলে সামনে দুর্ভিক্ষ আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭১ সালে খুঁজে খুঁজে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। ২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে—এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা রাসেল বলেন, ‘বিডার বড় বড় গল্প শুনি, বিডা নাকি বিদেশি ইনভেস্টর নিয়ে আসবে। আরে ওগুলা তো সব জি-টু-জি। কই একটা শিল্পপতিকে নিয়ে আসেন না আমাদের সাথে একটু পার্টনারশিপে ব্যবসা করুক। গত আট মাসে ৮টা কেন একটাও তো আসেনি আমার জানামতে। আপনি বিদেশিদের দাওয়াত করতেছেন। আর আমাদের রেডিমেড ফ্যাক্টরি আছে। ওরা এলে তো কিছুদিন সময় লাগবে, রড-সিমেন্ট-বালু-জমি নিয়ে এগুলা ঢালাই-ঢুলাই দিয়ে আরো পাঁচ বছর লাগবে একটা ফ্যাক্টরি করতে। আমাদের রেডিমেড ফ্যাক্টরিতে পার্টনার হতে বলেন! না হবে না। তারা জানে যে, এখানে ফ্যাক্টরির অবস্থা ভালো না, ভায়াবল না।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের অনেক কারখানায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে একেবারে গ্যাস নেই। কিছু এলাকায় যেটুকু আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কারখানার প্রয়োজন যেখানে অন্তত ১০ পিএসআই চাপের গ্যাস, সেখানে মিলছে মাত্র ১-২ পিএসআই। ফলে কার্যত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু মাস শেষে কর্মীদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। একেকটি কারখানায় মাসে ১৫-২০ কোটি টাকার বেতন দিতে হয়, অথচ আয় নেই।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘গ্যাস নেই, উৎপাদন নেই, অথচ তিন মাস সুদ না দিলেই খেলাপি ঘোষণার হুমকি দিচ্ছে ব্যাংক। একই সঙ্গে সরকার বলছে, বেতন না দিলে গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে শিল্প কীভাবে চলবে?’

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সরকার শিল্পের চেয়ে গৃহস্থালি ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাঁরা বলেন, ‘সিলিন্ডারের দাম কমিয়ে গৃহস্থালিতে লাইন প্রতিস্থাপন বন্ধ করুন, ভোলার গ্যাস সরাসরি ঢাকায় না এনে সারকারখানা ভোলায় সরিয়ে নিন।’ একই সঙ্গে এলএনজি আমদানির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার দাবি তোলেন তাঁরা।

তাঁদের প্রশ্ন, ‘সরকার কি চায়, টেক্সটাইল শিল্প পাটশিল্পের মতো হারিয়ে যাক? ৫০ শতাংশ কারখানায় ইতিমধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি কারখানাগুলোও আগামী দুই মাস টিকতে পারবে কি না, সন্দেহ।’

বিটিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেহ উজ্জামান বলেন, ‘শিল্প খাত ধ্বংসে যেন পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হচ্ছে। একদিকে আপনারা সম্মেলন করে বিদেশি বিনিয়োগকারী আনছেন অথচ আমাদের কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমাদের ফ্যাক্টরিগুলোই তাঁদের দিয়ে দিন। অন্তত আমাদের জন্য সম্মানজনকভাবে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটি পথ তৈরি করুন। আমরা আর পারছি না। প্রতিদিন শ্রমিকদের চাপ আর গালি শুনে ব্যবসা করার কোনো মানে হয় না। ভবিষ্যতে যেন ব্যবসায়ীরা মর্যাদা রক্ষা করে বেরিয়ে যেতে পারেন, সেই ‘এক্সিট পলিসি’ তৈরি করা এখন জরুরি।’

বাংলাদেশ টেরিটোরিয়াল অ্যান্ড লাইন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান হোসেইন মেহমুদ বলেন, ‘গত ১৪ এপ্রিল থেকে আমাদের কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নেই। এ অবস্থায় আমরা শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেব? আমাদের যেন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ সংকট নিরসনে গ্যাস খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং গ্যাস বিতরণে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার। একই সঙ্গে, দীর্ঘমেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা জরুরি।

এ সংকট কাটাতে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন, অবিলম্বে শিল্প খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব স্থগিত রাখার আহ্বান জানান তাঁরা। একই সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দেন উদ্যোক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমইএ পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজীব হায়দার, বিটিটিএলএমইএর সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সোহেলসহ বিভিন্ন আয়োজক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বক্তারা রেশনিং পদ্ধতির আওতায় গ্যাস সরবরাহের দাবিও জানান। তাঁদের মতে, ‘যদি গ্যাস কম দিতে হয়, তাহলে অন্তত জানিয়ে দিন, কোন কোন সময় গ্যাস থাকবে না। সেই অনুযায়ী আমরা উৎপাদনের পরিকল্পনা নিতে পারি।’

শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস না দিলে উৎপাদন হবে না, উৎপাদন না হলে রপ্তানি কমবে, রপ্তানি না হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়বে—এটা বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার নেই। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখনই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত