Ajker Patrika

চালু স্ক্যানার, নির্লিপ্ত কাস্টমস নিরাপদ বাণিজ্য ঝুঁকিতে

আজিজুল হক, বেনাপোল (যশোর) 
বেনাপোল বন্দরে বসানো নতুন স্ক্যানিং মেশিন সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও গত তিন মাসে একটি ট্রাকও স্ক্যানিং করা হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেনাপোল বন্দরে বসানো নতুন স্ক্যানিং মেশিন সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও গত তিন মাসে একটি ট্রাকও স্ক্যানিং করা হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেনাপোল বন্দরে বসানো হয়েছে নতুন স্ক্যানিং মেশিন, যা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও গত তিন মাসে একটি ট্রাকও স্ক্যানিং করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে, অন্যদিকে নিরাপদ বাণিজ্য পড়েছে সরাসরি ঝুঁকিতে।

ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৈধ পথে অনিয়ম ও চোরাচালানের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। এর ফলে এক বছরে পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ ১৬টি সোনার চালান জব্দ করেছে। এসব চালান বেনাপোল কাস্টমসের নজরদারিতে ধরা না পড়ে নির্বিঘ্নে সীমান্ত অতিক্রম করায় উদ্বেগ বেড়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে আগে মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটিতে সেটি এক বছরের বেশি সময় অকেজো। যদিও সেই শূন্যতা পূরণে নতুন একটি স্থায়ী স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালে, তবে পণ্য স্ক্যানিং কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। ফলে বিপুল ব্যয়ে স্থাপন করা যন্ত্র পড়ে রয়েছে কার্যত অকার্যকর অবস্থায়।

স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৈধ পণ্য আমদানিকারকেরা পড়ছেন হয়রানি ও ক্ষতির মুখে। আমদানিকারক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের সুবিধা হলেও আমরা যারা নিয়ম মেনে পণ্য আনছি, তারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছি। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও বাস্তবে কোনো সুফল আসছে না।’

ট্রাকচালক আশিক জানান, স্ক্যানিং চালু থাকলে কেউ অবৈধ পণ্য ট্রাকে তুলে দেওয়ার সাহস করত না। এভাবে চালকদের হয়রানিও কমত। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমানের মতে, বাণিজ্য সহজীকরণ, চোরাচালান রোধ ও সময় বাঁচানোর জন্য স্ক্যানিং মেশিন অপরিহার্য। এটা বন্ধ থাকা মানে নিরাপদ বাণিজ্যের পথে বাধা।

বন্দর ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক শামিম হোসেন জানিয়েছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে স্ক্যানিং কার্যক্রম শুরু করতে। অন্যদিকে স্ক্যানিং মেশিন পরিচালনায় নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিনিধি বনি আমিন বলেন, ‘নতুন মেশিন পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু কাস্টমস ট্রাক পাঠাচ্ছে না, তাই আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৭ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঘোষণা দিয়েছিল ৩৮ ধরনের পণ্য খালাসের আগে বাধ্যতামূলকভাবে স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনার। সে উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি ও পণ্য পাচার রোধ। অথচ বাস্তবে বছরজুড়ে বিভিন্ন অজুহাতে স্ক্যানিং কার্যক্রম স্থবির থাকছে। ফলে বেনাপোল বন্দরের স্ক্যানিং ব্যবস্থা যান্ত্রিকভাবে যত সচল হোক, কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় তা কার্যকর হচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার, ব্যবসায়ীসহ পুরো বাণিজ্যিক নিরাপত্তাব্যবস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত