Ajker Patrika

এবারের ঈদটা অন্য রকম

সেলিনা আক্তার লীনা, দুবাই (ইউএই)
Thumbnail image

গত দুটি বছর দুবাইয়ে রোজা, ঈদ বা অন্য কোনো উৎসব তেমনভাবে পালন করা হয়নি; যা হয়েছে খুব ঘরোয়াভাবে, শুধু পরিবারের লোকজনদের নিয়ে করতে হয়েছে। তাই এবারের ঈদটা সম্পূর্ণ অন্য রকমভাবে আসছে। সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যেই। পুরো এক সপ্তাহ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও দুদিন, মোট নয় দিন ছুটি। চিন্তা করা যায়!

যেদিন রোজা শুরু হয়, সেদিন থেকেই ঈদের আমেজ বিরাজ করে দুবাইয়ে। ইফতার, সাহ্‌রিতে কত মজার মজার খাবার। ইফতারটা বাংলাদেশের মতোই ছোলা, পেঁয়াজু, কাবাব, হালিম, জিলাপি, ফলমূল ইত্যাদি দিয়ে করা হয়। রোজার মাসে দুবাইয়ের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে বিশেষ মূল্যছাড় দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংগঠন ইফতারের আয়োজন করে। তাই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো সংগঠনের ব্যানারে ইফতারের দাওয়াত থাকে। রমজানে বা ঈদে ধুমসে কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, চ্যারিটির কাজ চলে। তবে ফিতরা বা জাকাতের টাকা বাঙালিরা দেশেই পাঠায়।

‘রাতের দুবাই’ বলে একটা কথা আছে। বলা হয় রাতের দুবাই না দেখলে দুবাই দেখা সম্পূর্ণ হয় না। ঈদের আগে আগে দোকানপাট রাত ১২-১টা পর্যন্ত খোলা থাকে, বিশেষ বিশেষ মার্কেট সারা রাত খোলা থাকে। রেস্টুরেন্টগুলোও তাই। পার্ক কিংবা সৈকতে সারা রাত বসে থাকলেও কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। রাতে আলো ঝলমলে দুবাই অন্য রকম আমেজ নিয়ে আসে।

বাঙালিদের ঈদ আসে মূলত খাওয়াদাওয়া, নতুন সুন্দর কাপড় পরা আর ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে। তবে দুবাইয়ে বিভিন্ন ধরনের বাঙালির বসবাস থাকায় ঈদ উৎসব বা যেকোনো উৎসব নিজেদের কোম্পানির লোকজনের সঙ্গেই পালন করা হয়। এখানে প্রচুর বাঙালি এমিরেটস এয়ারলাইনসে কর্মরত, তাই আমরা নিজেদের কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করি। অন্যান্য কোম্পানির বাঙালিরাও তা-ই করে।

ঈদের চাঁদের ওপর নির্ভর করে ঈদ উদ্‌যাপন। পরপর দুবার আরবি মাস কখনোই ৩০ দিন বা ২৯ দিন হয় না। তাই আগের মাসের ওপর অনেকটা নির্ভর করে ঈদ কবে হচ্ছে (এটা আমাদের সাধারণের উপলব্ধি)। দু-তিন দিন আগে থেকে শুরু হয় ঈদের প্রস্তুতি। দুবাইয়ে ঈদের রান্নাগুলো আমরা নিজেরাই করি। অনেক ধরনের হালুয়া, সব রকম মিষ্টি (রসগোল্লা, কালোজাম, চমচম, রসমালাই), মুরগি, মাংস—আরও কত-কী! ঈদ শুরু হয় সকালের নাশতা দিয়ে। কারও না কারও বাসায় নাশতার নিমন্ত্রণ। তারপর দুপুরের, সবশেষে রাত ৮-৯টা থেকে শুরু হয় রাতের উৎসব, প্রায় সারা রাত চলে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, চা পান, নাচ-গান। পরের দিন দুপুর পর্যন্ত ঘুম। পরের দিনগুলোতে দাওয়াত বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে পাহাড়ে বা দূরে কোনো লেকের ধারে সারা দিন সময় কাটানো হয়। 
এর বাইরেও বিশাল একটা বাঙালি জনগোষ্ঠী আছে, যাঁরা শ্রমিক হিসেবে এখানে বিভিন্ন কোম্পানি বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। তাঁদের নিজস্ব কোম্পানি ঈদসহ যেকোনো উৎসবে তাঁদের উন্নতমানের খাবার দেয় এবং ছুটিও দেয় বেশ কয়েক দিন। তাঁরা বন্ধুবান্ধব নিয়ে হইচই করেন। অনেকে আবার দেশে যান।

ঈদ উপলক্ষে আমিরাত সরকার অনেক কয়েদিকে (যাঁরা ছোটখাটো অপরাধ করেন) মুক্তি দেয়। তাঁদের মধ্যে বাঙালিরাও থাকেন, তাঁরা দেশে ফিরে যান বা নতুন কাজ খুঁজে নেওয়ারর সুযোগ পান। বেশির ভাগ বাঙালিই এখানে আত্মীয়-স্বজনহীন, তাই বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই উৎসবের আনন্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত