Ajker Patrika

আত্মার আধেকজুড়ে প্রেম

রিক্তা রিচি, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৩: ২৯
আত্মার আধেকজুড়ে প্রেম

আমার মুহূর্তরা ক্রমশ নিশ্চুপ হতে থাকে। মনে হয় ধোঁয়ার মতো বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে কিছু বেনীল হাওয়া, কিছু স্মৃতির ধূলিকণা আর কিছু নীরব দুঃখ। জানলার গ্লাসের ওপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মন হারানোর দিনগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক কেন এমন? এমন বিবর্ণ কেন? এর উত্তর খুঁজতে চাইতাম আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের কাছে। এটি নীরব কোনো চাবুকের ক্ষত নাকি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাওয়া ক্লান্তির দাগ, ঠিক বুঝতে পারতাম না। যা হোক, এমনই দহন দিনে আমার পথচলা।

পথচলা নতুন এক পরিবারের সঙ্গে। আমার ভরসার কাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই পরিবারের সদস্যরা। সেখানে আমার কেটে গেছে এক থেকে প্রায় দেড় বছর। সময়টা খুব একটা বেশি না। তবুও এই সময়টা ভীষণ আনন্দের। নতুন করে বেঁচে থাকার। যাপিত জীবনের ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে মনকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়ার। হ্যাঁ। ঠিক এই সময়ে বন্ধুত্বের নতুন এক সংজ্ঞার জন্ম হয়। এক চিলতে রোদের মতো আবারও মলিন শহর জুড়ে আনন্দেরা কানাকানি করে।  

আজকের পত্রিকায় আসার আগে থেকে মনে ভয় কাজ করত। নতুন সব মানুষ, নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ ঠিক কেমন হবে, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। আমার সব শঙ্কা, অনিশ্চয়তা, ভয় কেটে গিয়েছে নিমেষেই। ওই যে বলেছিলাম এই সময়ে বন্ধুত্বের নতুন এক সংজ্ঞার জন্ম হয়। হ্যাঁ, আজকের পত্রিকায় এসে সহকর্মীদের কাছ থেকে ঠিক তাই শিখেছি। এখানে সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়। এখানকার মানুষদের কাছ থেকে প্রেম-মায়া-মমতা শেখা যায়, যাদের কাছ থেকে মানুষকে আপন করে নেওয়ার বিষয়টাও শেখা যায়।

আজকের পত্রিকার বড় শক্তি হলো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। সম্পাদক থেকে শুরু করে কর্মরত সবাই সহজে মিশে যান সবার সঙ্গে। যেকোনো সময় যে কারও দুয়ার খোলা থাকে। কাজে তো ভুল কম বেশি সবারই হয়। বয়োজ্যেষ্ঠরা ছোটদের ভুল নিজেদের ভুল হিসেবে মেনে নেন; যেন নতুনদের শেখার আগ্রহটা হারিয়ে না যায়। ভুলকে যে সুন্দরভাবে গ্রহণ করা যায় তা তাদের কাছে দেখেছি।

এখানে প্রতিটা দিনকে জীবনের নতুন দিন হিসেবে গ্রহণ করেছি যেন। শুরু থেকে আমরা কয়েকজন একটা শিউলি ফুল দেখেও আনন্দে বিভোর হয়ে যাই, একটি মানি প্ল্যান্টের পাতা কিছুদিন পানিতে রাখার পর শেকড় গজানোর আনন্দটাও যেন আমাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। খুব ছোট্ট একটা বিষয়কেও যে জীবনের পরম মুহূর্ত ভাবা যায় তা এখানকার সহকর্মীরা জানেন।

আমার প্রতিটি দিনযাপন ফিচারে। সেখানে আমাদের আনন্দগুলো অন্যরকম। সত্যিই অন্যরকম। জাহীদ ভাই, বিভু দার মতো একটা ছায়া, আশ্রয় আমাদের আছে। এখানে বন্ধুত্বের গভীরতা এত বেশি যে যেকোনো সময় জাহীদ ভাইকে বলা যায়, একটি নতুন গল্প শোনানোর কথা। যেকোনো সময় দ্বিধাহীনভাবে বলা যায় কবিতা আবৃত্তির কথা। যেকোনো সময় অন্য যেকোনো বিষয় নিয়ে ভাইয়াকে জ্বালানো যায়। যেন পিতার কাছে তার কন্যারা বিভিন্ন আবদার করছে। ভাইয়া সেসব জ্বালাতন সহ্য করেন এবং ছোট ছোট আবদারগুলো আনন্দ নিয়ে পূরণ করেন। অফিসে ঢুকেই সবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, কে কেমন আছেন, মন ভালো কিনা ইত্যাদি। ভাইয়া প্রায় দিন নিজ হাতে খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। রামেন, আলু সসেজ, গরুর মাংস, খিচুড়ি কত কি! গুলিস্তান অথবা মতিঝিলের ওইদিকে গেলেই আমাদের জন্য নিয়ে আসেন দেশবন্ধুর পরোটা, সবজি ও সুজির হালুয়া। দেখা গেল আমাদের কারও দাঁত ফেলে দেওয়া হয়েছে তো তিনি স্যুপ নিয়ে হাজির হলেন অফিসে। কারণ এই সময়ে শক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ। এই যত্নগুলো এই পরিবারে মেলে।

বিভুদাকে শুরুর দিকে গম্ভীর মনে হলেও, কিছুদিন পরেই দেখতে পেলাম তার বাক্য জুড়ে শুধু রসবোধ। ভীষণ মজা করে কথা বলেন। সেই সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, ইতিহাস, কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। আমাদের কখনোই মনে হয় না সিনিয়ররা আমাদের বন্ধু নয়।

আজকের পত্রিকায় যোগদানের শুরু থেকে কোনো না কোনো উৎসবের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। ফল উৎসব অন্যান্য বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে দিয়েই যাই প্রতিনিয়ত। বর্ষা কিংবা শরতে নীল রঙের পোশাক পরতে ভুল হয় না আমাদের। ফাল্গুনে বাসন্তী রঙের বসন। রবি ঠাকুরের জন্ম দিবসেও আমরা আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিই। অফিসের সব ফ্লোরের সব নারী একসঙ্গে শাড়ি পরে আসি প্রায় সময়। এ রকম হৃদ্যতা, আন্তরিকতা, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়গুলো এখানে আছে।

কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই গানের আসর বসে। সেখানে গান গেয়ে থাকেন আজকের পত্রিকার ‘কণ্ঠশিল্পী’ কর্মীরাই। গানের সুরে সুরে কখনো স্নিগ্ধ, কখনো আরও মনোরম হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।

উপেন্দ্রকিশোরের বাছাই করা গল্পে ভয়েস দেওয়া থেকে শুরু করে কাজের ফাঁকে করা প্রতিটি আড্ডা গুরুত্বপূর্ণ। শিঙাড়া, পিৎজা পার্টি, জন্মদিন পালন সবকিছুতেই মিশে থাকে সীমাহীন আনন্দ। আমাদের কর্মীদের জন্মদিন আমরা ক্ষুদ্র পরিসরে পালন করার চেষ্টা করি। কোনো একটি বিশেষ দিনকে একটু বিশেষ করে তোলার প্রয়াস থাকে!

আজকের পত্রিকার ছাদ, জলছাদ দুটোই মনোরম। বিভিন্ন ফুল ও পাতাবাহার গাছ সেখানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। দুপুরে ক্যানটিনে খাবার খাওয়ার সময় যখন আকাশ কালো হয়ে মেঘের ঝরনা নেমে আসে পৃথিবী জুড়ে, সে সময়টুকু ভীষণ উপভোগ করি আমরা। ক্লান্ত চোখগুলোকে শীতল পরশ বুলিয়ে যায় বৃষ্টি।

দেখতে দেখতে আজকের পত্রিকা এক বছরে অনেকটা পরিণত হয়েছে। পেরিয়েছে চড়াই-উতরাই। এই এক বছরের টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতিকথা আছে। অনেক জমানো গল্প আছে। সব এক মলাটে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। সুখ ও প্রাপ্তির গল্প ছাড়াও আছে কিছু অপ্রাপ্তির গল্প। সেই অপ্রাপ্তিগুলো প্রাপ্তিতে পরিণত হোক। সতত শুভকামনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত