Ajker Patrika

শঙ্কা নিয়েই হাওরে ধান কাটা চলছে 

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ৫৮
Thumbnail image

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী দু-এক দিনের মধ্যে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার উজানের ঢল নামবে। তাই প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে হাওরে দ্রুত ধান কাটার অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ফসলরক্ষা বাঁধগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধির আহ্বান করেছেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

প্রাকৃতিক বৈরিতা উপেক্ষা করে ধান কাটতে শুরু করেছেন হাওরের কৃষকেরা। হাওরপাড়ের জীবন-জীবিকার অন্যতম উৎস এই বোরো ধান। এই ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণিরা। যদিও হাওরে ধান কাটা এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি তারপরও প্রস্তুতির কমতি নেই কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে। কেউ ধান কাটতে শুরু করেছেন, কেউ ধান শুকাতে চাতাল প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে নিতে সারাক্ষণ মাঠেই পড়ে থাকছেন। এ অবস্থায় হাওরবাসী গেল ছয় মাসের কষ্টে ফলানো ফলন ঘরে তুলতে উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে। 

১ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে হাওরডুবির উপক্রম হয়েছিল। পরে নদীর পানি কমতে থাকায় কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। তবে আবারও বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার খবরে কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন হাওরপাড়ের মানুষ। 

গতকাল শুক্রবার রাতের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশের কতিপয় স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ধনু ও বাউলাই নেত্রকোনা জেলায় কতিপয় স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪-৭২ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় আকস্মিক বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। 

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরছার হাওরে ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষকেরাএদিকে গত ১৫ দিন ধরে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আরেক দফা ঢল এলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই দ্রুত হাওরের ধান কাটার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগ। যদিও হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ জমির ধান এখনো পাকেনি। ইতিমধ্যে ধান কাটার জন্য পাঁচ শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টর ও জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হয়েছে। 

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃষকেরা আধা পাকা ধান কাটছেন। দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে ভর্তুকি দিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টর, রিপার মেশিন দেওয়া হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। 

উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের কৃষক ছত্তার মিয়া বলেন, ‘ইউএনও অফিস কৃষি অফিস থাইকা কইতাছে, ১৭ তারিখের (১৭ এপ্রিল) মধ্যে ধান কাটবার লাগি। না হয় পানি আইব। তাই আমরা জমিতে ধান যেমনই আছে কাইটা নিতাছি।’ 

উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের কৃষকর আব্দুল মতিন বলেন, ‘শুনতাছি পানি বাইড়া বান্দ (বাঁধ) ফাটা লইছে। পানি ডুকত পারে। এই ভয়ে আমরা জমিত যাই আছে কাটা শুরু করছি।’ 

জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, এবার সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শুক্রবার পর্যন্ত হাওরে ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য হাওরের পাঁচ শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন ও জেলার বাইরে থেকে ২০ হাজার শ্রমিক আনা হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া পরিস্থিতি যেহেতু ভালো, সেহেতু আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে এবং নিজেদের মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন এনেছি। কৃষকদের মধ্যে দেওয়া হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ধান কাটাও চলছে।’ তিনি বলেন, আর কয়টা দিন সময় পেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা হবে না। এ সময় তিনি আবহাওয়া পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে কৃষকদের ৮০ শতাংশ পাকা ধান দ্রুত কাটার আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত