Ajker Patrika

‘ঘরে এখনো রান্না ওয় না’

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১০: ৪৪
‘ঘরে এখনো রান্না ওয় না’

‘আমার মতো ফকিন্নি-ছকিন্নিরে কেউ দাম দেয় না ভাই। আমার ঘরে এখনো কোনো রান্না ওয় না। ঘরসহ সবতা বন্যায় লইয়া গেছেগা। আমরার এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান যারাই আছে এক টেখার মূল্যায়ন দেয় না ভাই আমরারে। আমরা এলাকাত এখন পর্যন্ত যা ত্রাণ আইছে এলাকার মেম্বার তার আত্মীয়স্বজনের দিয়া দেয়। আমরার মতো গরিবের মূল্যায়ন নাই হেরার কাছে।’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সাক্তারপাড় পশ্চিমপাড়ার রিকশাচালক জাহের মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন কথাগুলো।

সাক্তারপাড় গ্রামের ছফিয়া বেগম। এবারের বন্যায় একটিমাত্র ঘর হারিয়ে নিঃস্বপ্রায়। ৭২ বছরের ছফিয়া বেগম স্বামীকে নিয়ে থাকেন ঘরে। তিনি বলেন, ‘বন্যায় আমার পরনের কাপড় ছাড়া আর কিচ্ছু রাইখা গেছে না। এখন কোনোরকম খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইতাছি।’

ছফিয়া বেগমের বসতভিটায় গিয়ে দেখা গেল, সেটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। খাবার নিয়ে কথা হয় ছফিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক ওক্ত খাইলে আরেক ওক্ত উফাস থাকি। কেউ কিচ্ছু দিয়া গেলে বুড়া-বুড়ি মিল্লা খাই। নাইলে উফাস ওই থাকন লাগে।’

শুধু জাহের মিয়া কিংবা ছফিয়া বেগমই নন, তাঁর মতো জেলার হাজারো পরিবার বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। প্রথম পর্যায়ে বসতঘর হারানোদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বসতঘর হারানোদের ঘর মেরামতের জন্য অনুদান প্রদান শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে। প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জ পৌরশহরের সুলতানপুর আবাসিক এলাকা গত দেড় মাস ধরে পানিতে নিমজ্জিত। এই এলাকার প্রায় দেড় শ পরিবার এখনো সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এদের একজন মইনুল ইসলাম। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম দফা বন্যায় তাঁর ঘর বিধ্বস্ত হয়।

মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পয়লা বন্যায় যে ক্ষতি করছিল তা মেরামত কইরা কোনোরকম বউ-বাচ্চা নিয়া ঘরো ডুকছিলাম। এখনের বন্যায় যেভাবে ক্ষতি হইছে আর মেরামত করার মতো সাধ্য আমার নাই।’

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৫ হাজার ২৮৮ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমরা ৫ কোটি টাকা পেয়েছি। সেই ৫ কোটি টাকা গতকাল সোমবার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত