Ajker Patrika

পর্যটকের চাপে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

পর্যটকের চাপে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকের চাপে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে গেল কয়েক দিনে প্রায় সাত হাজার পর্যটক উদ্যানটিতে ভ্রমণ করেছেন। ফলে বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের কথা বলার শব্দে, আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে বন্য প্রাণী লোকালয় থেকে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গেল তিন দিনে প্রায় সাত হাজার পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করেছেন। অনেক পর্যটক হোটেল-মোটেল না পেয়ে ভোর থেকেই মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সরকারের রাজস্ব আয় হলেও বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অতীতের তুলনায় এ বছর অধিক পর্যটক এসেছেন যা বন্য প্রাণীর জন্য হুমকি। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবার ও বন্ধু নিয়ে সারা দেশ থেকে পর্যটকেরা এসেছেন। উদ্যানের ভেতর ও বাইরে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন অনেকেই। যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল, চিপস, বিস্কুট, চকলেটর খালি প্যাকেট ফেলছেন কেউ কেউ। বনের ভেতরে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বিভিন্ন প্রাণীদের ইশারা করছেন। ধারণক্ষমতার বাইরে পর্যটক প্রবেশ করায় বাজারের মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বনের ভেতরে রেললাইনের মধ্যে বসে অনেকে গান গাইছেন। অতিরিক্ত মানুষের ভয়ে উল্লুক এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছোটাছুটি করছে। এছাড়াও ঘন ঘন ট্রেনের আশা যাওয়া, গাড়ির হর্নের শব্দে দিশেহারা বন্য প্রাণী। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক সালেহ সোহেল বলেন, বনের জীববৈচিত্র্যকে কঠিন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে পর্যটক। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। যে পর্যটক বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করে সেই পর্যটকের পক্ষে আমরা নেই। পরিবেশের ক্ষতি না করে পর্যটকদের প্রবেশ করাতে হবে নয়তো একদিন এই উদ্যান থেকে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। 

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সঙ্গে এত পর্যটক লাউয়াছড়ায় কখনো দেখিনি। পর্যটকেরা বন বিভাগের দিকনির্দেশনা কিছুই মানছেন না। অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে বনের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সব সময় পর্যটকের ওপর নজর রাখছি যাতে বনের ক্ষতি না হয়। 
 
অতিরিক্ত পর্যটক আসার বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পর্যটকদের আগমন বেশি হওয়ার কারণে বনের ওপর প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত পর্যটক প্রবেশের কারণে বন্যপ্রাণী লোকালয় থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে অনেক দিন মানুষ বাইরে যেতে পারেনি এ জন্য মানবিক কারণে তাদের উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করাতে হচ্ছে। আশা করছি এক দুদিনের মধ্যে পর্যটক কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণ ক্ষমতা বাইরে চলে আসছে পর্যটক, এ নিয়ে অনেক বিপদে পড়ে গেলাম। 

জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় এ উদ্যানটি ১২৫০ হেক্টর আয়তনের। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা। এছাড়াও বনের মধ্যে সারাক্ষণই সাইরেনের মতো ঝিঁঝি পোকার শব্দ হতে থাকে।   

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত