Ajker Patrika

চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ, (মৌলভীবাজার) 
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৫, ২৩: ৫৯
চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে চা বিক্রি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বাগানমালিকদের। দেশে ১৬৮টি চা-বাগানের মধ্যে বেশির ভাগের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। বাগানমালিকেরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে চা নিলামে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চা শিল্প একসময় বন্ধ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি চা-বাগান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ফুলতলা চা-বাগান মালিকপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও পরিচালনার খরচ বহন করতে না পেরে বাগানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া সিলেটের কালাগুল, ছড়াগাঙ্গ ও বরজান চা-বাগান সাময়িক বন্ধ রয়েছে। চা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাংকঋণের জন্য আবেদন করেও তা পাচ্ছেন না এসব বাগানমালিক।

মালিকেরা জানান, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে লেগে গেছে। চা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশির ভাগ বাগান ভর্তুকি দিয়ে পরিচালনা করতে হচ্ছে। অনেক বাগান বন্ধ হয়ে যাবে। চা শিল্প রক্ষার জন্য সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। আমরা ব্যাংকে ঋণ না পেলে কীভাবে বাগান চালাব। চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।’

চা বোর্ড সূত্র জানায়, দেশে ১৬৮টি চা-বাগানে ২০২৩ সালে ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। আর ২০২৪ সালে হয় ৯৩ মিলিয়ন কেজি; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। চলতি বছরে দেশের সব চা-বাগান নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজি।

মৌলভীবাজারের চা-শ্রমিকেরা বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি বাগানে আমাদের মজুরি বকেয়া রয়েছে। বাগানের যে অবস্থা, সবাই বলছে বন্ধ করে দেবে। আমরা আমাদের বকেয়া মজুরি চাই, একই সঙ্গে বাগানমালিকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার দাবি জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, ‘নতুন বছরে কয়েকটি বাগানে চা উৎপাদন শুরু হলেও বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে; যা নিয়ে কেউ কথা বলছে না।

বেশির ভাগ বাগানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। চা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বাগানমালিকেরা সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেক দেশে চা উৎপাদন আমাদের চেয়ে কম, তবু তারা কম দামে চা পাচ্ছে। আর আমরা কম দামে বিক্রি করে বেশি দামে কিনে খাচ্ছি।’

চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘চা শিল্প আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মালিকপক্ষ আমাদের সঙ্গে চা উৎপাদন খরচ ও বিক্রি নিয়ে মৌখিক আলোচনা করলেও কাগজেকলমে কোনো কিছু বলছে না। চা উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, আর নিলামে বিক্রি হয় কম। ন্যূনতম প্রতি কেজি ৩০০ টাকা বিক্রি করা হলে চা শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে চা নিলামে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’

শমশেরনগর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হুসেন বলেন, ‘চায়ের উৎপাদন বেড়েছে, তবে চায়ের কোয়ালিটি আগের মতোই। এ জন্য চা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।’

সরকারি মালিকানাধীন এনটিসি চা-বাগানের ধলাই ভ্যালির ডিজিএম শফিকুর রহমান মুন্না বলেন, ‘শুনেছি, কয়েকটি চা-বাগান বন্ধ রয়েছে। মজুরি দিতে পারছেন না বাগানমালিকেরা। আমাদের ও শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি রয়েছে।’

চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চায়ের নিলামে সিন্ডিকেট, লোকসানে বাগানমালিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শ্রীগোবিন্দপুর চা-বাগানের মালিক ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মো. মহসীন মিয়া মধু বলেন, ‘চা শিল্প এখন আগের মতো নেই। এই শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সরকারি সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন। আমরা ভালো চা তৈরি করছি, তবে দাম পাচ্ছি না। বড় একটা সিন্ডিকেট চায়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। চা কম দামে বিক্রি হলেও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

বাংলাদেশ চা বোর্ডের সচিব মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আজও সভা হয়েছে। কিছু বাগানমালিক কৃষি ব্যাংক থেকে লোন চেয়েছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব।’

মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি কারণে চা শিল্পের মালিকদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। এগুলোর মধ্যে চা শিল্পে যখন শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে, তখন থেকে বেশ কিছু বাগান এই মজুরি দিতে সক্ষম ছিল না। এ ছাড়া উৎপাদন মূল্যের চেয়ে নিলামে বিক্রি মূল কম হওয়া, বাগানমালিকদের সুবিধার জন্য ইতিমধ্যে কিছু বিষয় বাতিল করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত