Ajker Patrika

২০ বছর বেতন পাননি, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বজনেরা

কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ১৮
২০ বছর বেতন পাননি, ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে স্বজনেরা

ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে এক শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন স্বজনেরা! এ সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক গিয়ে উত্তেজিত জনতার সামনে আগামী তিন দিনের মধ্যে গৃহীত ওই ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরে স্বজনেরা লাশ নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে দাফনের ব্যবস্থা করেন। 

আজ সোমবার এ ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামে। টাকার শোকে গত ৩০ জানুয়ারি ওই শিক্ষিকা তাঁর বাবার বাড়িতে স্ট্রোক করেন বলে দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোররাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মৃত ওই শিক্ষিকার নাম রোকেয়া খাতুন। তিনি উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। ২০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেও বেতন পাননি তিনি। বরং বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে দফায় দফায় টাকা নিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছেন, রোকেয়া খাতুন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভূতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গাড়াবেড় গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত পাঠদান করিয়েছেন তিনি। কিন্তু বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় ঘুষ নিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু।

বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। পরে ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের অক্টোবরের ২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার পর ৬ নভেম্বর বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন রোকেয়া খাতুন। এর পর থেকে অদ্যাবধি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকে নিয়মিত পাঠদান করাতেন তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, ঘুষের সেই টাকা ফেরতের দাবিতে আজ সকালে মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান নেন ওই শিক্ষিকার স্বজনেরা। চার লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করলে মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তাঁরা। টাকার শোকে গত ৩০ জানুয়ারি ওই শিক্ষিকা গাড়াবেড়ের বাবার বাড়িতে স্ট্রোক করেন। পরে আজ ভোররাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। 

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল করিম বলেন, ‘আমি নিজেও বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হিসেবে ঢুকেছিলাম। তখন বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয় প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। এরপর আমি সেখান থেকে সরে আসলেও আমার স্ত্রী থেকে যায়। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে পরে দফায় দফায় চার লাখ টাকার মতো নেয় তারা। কিন্তু বেতন করে দেয়নি।’

আব্দুল করিম বলেন, ‘সর্বশেষ বেতন করে দেওয়ার কথা বলে ২০২২ সালে দুই লাখ টাকা চায়। সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে দেড় লাখ টাকায় মীমাংসা হয়। পরে আমি দেড় লাখ টাকা দিয়ে সভাপতি বাবলু চেয়ারম্যানের পায়ে পড়ি, স্ত্রীর বেতন করে দেওয়ার জন্য। সেই টাকাও বিফলে যায়। সব মিলিয়ে আমার কাছ থেকে সাত-আট লাখ টাকার মতো  নিয়েছে তারা। টাকার শোকে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারাই গেল। আমি ওই টাকা ফেরত চাই। সাথে এই দীর্ঘদিন যে পরিশ্রম করেছে তার ক্ষতিপূরণ চাই।’

রোকেয়ার বড় ভাই খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনের বেতন করে দেওয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ও সভাপতি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু পর্যায়ক্রমে সাত থেকে আট লাখ টাকা নিয়েছে, কিন্তু বেতন করে দেয় নাই। টাকার শোকে আমার বোন স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।’ 

রোকেয়ার ভাগনে হাশেম আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপিওভুক্তির আবেদনের কথা বলে খরচ বাবদ আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নেয় বিদ্যালয়টির করণিক লোকমান হোসেন। এর বাইরেও সম্মানীর টাকা চান লোকমান হোসেন।’ 

করণিক লোকমান হোসেন টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওই টাকা নিয়ে হেড স্যারকে দিয়েছি। হেড স্যারের বাইরে তো আর আমি কিছু করতে পারব না।’

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলামও টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর ওঠাই। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় টাকাও নিয়েছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা রোকেয়ার চার লাখ টাকা ফেরত দেব।’ 

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলুও ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বেতন করে দেওয়ার কথা বলে আমরা যে টাকা নিয়েছি তার চার লাখ টাকা রোকেয়ার স্বজনদের কাছে ফেরত দেব। ইউএনও স্যার এসে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’ 

শিক্ষিকার মরদেহ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন স্বজনেরাএ বিষয়ে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষিকার লাশ নিয়ে বিদ্যালয়ে অবস্থানের খবরে ঘটনাস্থলে যাই। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলি। তাঁরাও টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘মৃত ওই শিক্ষিকার নিয়োগের কোনো কাগজপত্রই দেখাতে পারেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে কাগজপত্র দেখে আমরা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব। তারাই যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর গোলাপী বেগম (৩৫) নামের তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে মির্জাপুর থানা-সংলগ্ন বারোখালী খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গোলাপী বেগম মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার রোডের বিশু মিয়ার মেয়ে ও পোষ্টকামুরী দক্ষিণ পাড়ার আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন দিন আগে গোলাপী বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন থানার পাশে খালে ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিআই তার দিয়ে পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাপী বেগম তিন দিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পরনের কাপর দেখে তাঁর লাশ স্বামী কাদের মিয়া শনাক্ত করেছেন। এটি একটি হত্যা। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৫
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী মাছ ধরার সরঞ্জাম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জেলেরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, জলাভূমির দেশীয় মাছ ও জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর চায়না দুয়ারি জালের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। দেশীয় মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং জেলে সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা রক্ষায় এই জালসহ সব ক্ষতিকর মাছ ধরার বিদেশি সরঞ্জাম দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ এবং মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৮৫ অনুযায়ী চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ। তবু কিছু বাণিজ্যিক মৎস্যজীবী এই জাল ব্যবহার করে নদী, খালবিলের দেশীয় মাছ ধ্বংস করছেন এবং ঐতিহ্যবাহী জেলে সম্প্রদায়কে জীবিকার সংকটে ফেলছেন। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, এই জালের কারণে শুধু মাছ নয়, জলজ বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য প্রাণী; যেমন ব্যাঙ, কচ্ছপ, পাখি ও জলজ উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়েছে। রাসায়নিক ও কীটনাশকের অতি ব্যবহার এবং চায়না দুয়ারি জালের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে জলজ পরিবেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেলেরা বলেন, চায়না দুয়ারি বা কারেন্ট জাল বন্ধ না করলে দেশীয় মাছ এবং জলজ প্রাণবৈচিত্র্য পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন গোকুল মথুরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গ্রিন কোয়ালিশনের রাজশাহীর আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকী, বারসিকের রাজশাহী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামান কাদেরী, আদিবাসী যুব পরিষদের রাজশাহী জেলার সভাপতি উপেন রবিদাস, সমাজকর্মী সম্রাট রায়হান, আতিকুর রহমান আতিক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আমির হামজা। ছবি: সংগৃহীত
আমির হামজা। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় আসরের নামাজ শেষে একটি মসজিদে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। তখন রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় স্থানীয় বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বরিয়া জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

শাজাহান আলী হান্নান বটতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। এ ছাড়া বরিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতিও তিনি।

৩ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৪টা। ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা বক্তব্য দিচ্ছেলেন। হঠাৎ শাজাহান আলী হান্নান দাঁড়িয়ে আমির হামজাকে কিছু বলার অনুমতি চান। এ সময় হান্নানকে বলতে শোনা যায়, ‘হুজুর ধর্মীয় আলোচনা যত পারেন করেন, কিন্তু রাজনৈতিক কোনো আলোচনা করবেন না।’

এরপর মসজিদে থাকা মুসল্লিরা উত্তেজিত হন। তাঁরা হান্নানের দিকে তেড়ে যান এবং ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বাইরে বের করে দেন। এ সময় কয়েকজনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বরিয়া জামে মসজিদের সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মসজিদ কমিটির সভাপতি। মুফতি আমির হামজা মসজিদে আসবেন, সেটাও আমাকে কেউ জানায়নি। আসরের নামাজ শেষে আমির হামজা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। সভাপতি হিসেবে আমি শুধু রাজনৈতিক আলোচনা বাদ দিয়ে ইসলামিক আলোচনা করতে বলেছিলাম। এতেই মসজিদের ভেতরে থাকা লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমাকে ধাক্কা দেন।’

শাজাহান আলী হান্নান বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ছাড়া মসজিদের ভেতর যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই অপরিচিত। জামায়াতে ইসলামীর লোকজন। যদিও এই ঘটনার পর আমির হামজা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি আমি জেলা বিএনপির সদস্যসচিবকে জানিয়েছি।’

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘হান্নান ভাই নিজেই ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ প্রতিহিংসামূলক। আর মসজিদে হবে ইসলামিক আলোচনা। সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে না।’

মুফতি আমির হামজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গণসংযোগে ছিলাম। ওই মসজিদে নামাজ পড়ার পর ইমাম সাহেব সালাম দিতে বললেন। এক থেকে দেড় মিনিটের মাথায় উনি (শাজাহান আলী হান্নান) সামনের থেকে উঠে বললেন রাজনৈতিক কোনো কথা বইলেন না।’

আমির হামজা আরও বলেন, ‘আমি তো শুরুই করিনি। তারপর সাত-আটজন তাঁকে নিষেধ করতে গেলে হট্টগোল বেধে যায়। পরে বিষয়টি আমি ঠিক করে দিয়ে চলে আসছি।’

কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ারদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি জেনেছি। মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা নিষেধ করতে বলা দোষের কিছু নয়। দু-একটা মসজিদের ঘটনা নিয়ে এখনই দল থেকে কোনো বিবৃতি নিয়ে ভাবছি না। তবে অবজারভেশন করছি।’

প্রসঙ্গত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজাকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদভর্তি একটি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডগ স্কোয়াডসহ বিশেষ অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। এই ঘটনায় রেলওয়ে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একটি দল আজ বনলতা এক্সপ্রেসে অভিযান চালায়। তবে ট্রেনটি থেকে কয়টি অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানানো হয়নি। তথ্য পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানানো হবে।’

রেলওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ট্রলি ব্যাগে ৮টি পিস্তল, ১৪টি ম্যাগাজিন ও ২৬টি গুলি ছিল।

বিমাননবন্দর রেলস্টেশনে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। ছবি: সেনাবাহিনী
বিমাননবন্দর রেলস্টেশনে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। ছবি: সেনাবাহিনী

সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গোয়েন্দা সংস্থা ও রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি তল্লাশি করে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন, ২৬ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২ দশমিক ৩৯ কেজি গান পাউডার এবং ২ দশমিক ২৩ কেজি প্লাস্টিক বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজন ব্যক্তিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বনলতা এক্সপ্রেস আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি বিরতিহীন ট্রেন, যা শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত