Ajker Patrika

আইনশৃঙ্খলা সভায় ডিসির সামনে ‘মব’ সৃষ্টির হুমকি বৈষম্যবিরোধী নেতার

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ২১: ০৭
ইমরান আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সামনে সিভিল সার্জনকে ‘মব’ সৃষ্টির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে। আজ রোববার বেলা ১১টায় রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ ঘটনা ঘটে।

সভায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের (এসপি) বক্তব্যের আগে বৈষম্যবিরোধী নেতা ইমরান আহমেদ বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী দুই নেতার বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক অন্তঃসত্ত্বা চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে সিভিল সার্জনকে চাপ দেন এবং মব সৃষ্টির হুমকি দেন।

বিষয়টি স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা আজকের পত্রিকাকে জানান, সভায় সবার সামনে বৈষম্যবিরোধী নেতা ইমরান বলেন, ‘তারাগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক ভুয়া মামলা করেছে। এতে বৈষম্যবিরোধীদের মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য মীমাংসা হওয়া উচিত, মামলা তুলে নেওয়া উচিত। তা না হলে আমাদের মব করতে হবে।

ডিসিও বলে, এসপিও বলে, আমি সমাধান করলে সমাধান হবে। কিন্তু আমি ওই চিকিৎসককে (ভুক্তভোগী) বুঝিয়েছি। সে মামলা তুলতে রাজি না। এতে আমার কী করার আছে। সে তো ব্যক্তিগতভাবে মামলা করেছে।’

আক্ষেপ করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ডিসি ছিলেন, এসপির প্রতিনিধি ছিলেন, সব বিভাগের প্রধানেরা ছিলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সবাই ছিলেন। কিন্তু কেউ তো একটা কথাও বললেন না। বাবা, মব কেন করবা? এত বড় কথা কেন বলতেছ। মব কি বাংলাদেশ সরকার জায়েজ করে দিছে যে মব করবা। কেউ কিছুই বললেন না তো। কী অপরাধ করেছি আমি, যে ও (ইমরান) মব করবে আমার বিরুদ্ধে।’

শাহীন সুলতানা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমিসহ আমার যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটনা, সেই চিকিৎসকেরাও শঙ্কিত। সত্যি সত্যি যদি মব করে ফেলে। ডিসি, এসপি, ইউএনওদের তো গার্ড থাকে। আমাদের তো একটাও নাই। হাসপাতালগুলো খুবই অরক্ষিত। সিকিউরিটি নাই, তারা ফোন করেছিল, তারাও ভয়ের মধ্যে আছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী নেতা ইমরান আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রামগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা করছে। তাদের নামে মামলাও নাই, গ্রেপ্তারও নাই। সরকারি অফিসগুলোতে সেবা নিতে গেলে আমরা দাস, কর্মকর্তারা প্রভু।

এ রকম সব বিষয় তুলে ধরে বলেছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে যদি বিচারহীনতায় এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে, তাহলে তো মবই ভালো ছিল। এই সঙ্গে আরও একটি কথা বলেছি—আমাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দুজন ছাত্রের নামে অন্যায়ভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। এটা সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ওভারল সব ব্যাপারগুলো নিয়ে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জনকে পার্সনালি বলা হয়নি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ রবিউল ফয়সালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত অন্তঃসত্ত্বা চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তূর্যসহ আরও চার-পাঁচজন ওই চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করেন। এরপর সেখানে ঘটনার মীমাংসা করতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ।

কিন্তু ভুক্তভোগী চিকিৎসক তূর্য, তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে ওই দিন রাতে তারাগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দেন। পরে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে টানা চার দিন কর্মবিরতি পালন করেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন, প্রস্তাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত